কলকাতা, 4 অগস্ট: আর কটা দিন বাদেই বাঙালির 'দুগ্গো পুজো' ৷ রথে টান পড়েছে মানেই পুজোর ঢাকেও কাঠি পড়েছে ৷ খুঁটি পুজোর পাট মিটেছে সেই কবেই ৷ অনেক জায়গায় মন্ডপ তৈরির কাজও এগিয়েছে অনেকটা ৷ কিন্তু একজন মানুষকে যদি বাঙালির দুর্গা পুজোর সমার্থক হিসেবে ধরা হয় তাহলে বলাই বাহুল্য তিনি হবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র ৷ মহালয়ার দিনে দেবীপক্ষের সূচনায় তাঁর কণ্ঠেই ঘুম ভাঙে বাংলার গ্রাম শহরের ৷ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে ছাড়া বাঙালির মহালয়া অসম্পূর্ণ (Two legendary figure born on the same day) ৷
আজ সেই বিশেষ মানুষটির জন্মদিন ৷ আজকের দিনে 1905 সালে আহিরীটোলায় জন্ম বীরেনবাবুর ৷ বাবা ছিলেন পরাধীন ভারতের অন্যতম রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ৷ পেশায় আবার তিনি ভাষাতত্ত্ববিদ ৷ বীরেনবাবুর প্রথম সংস্কৃত শিক্ষা অবশ্য় ঠাকুরমা যোগমায়া দেবীর কাছে ৷ আট বছর বয়স ছোট্ট এই ছেলেটি শুরু করেন চণ্ডীপাঠ ৷ এরপর নানা কর্মকাণ্ড চলেছে ছোটবেলা থেকেই ৷ তবে তাঁর স্মৃতি শক্তি এবং কণ্ঠের তারিফ তিনি শুনতে পেতেন সেই সময় থেকেই ৷
যদিও কর্মজীবনের শুরুটা কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণের রেডিয়োতে হয়নি ৷ বরং রেলওয়ে সদর দফতরেই তাঁর কর্মজীবন শুরু 1928 সালে ৷ তবে রেডিয়োর প্রতি আকর্ষণ তাঁর শুরু থেকেই ছিল ৷ তাই বিকেলে ছুটির পর তাঁকে ঠিক পাওয়া যেত রেডিয়োর বন্ধুদের আড্ডায় ৷ রেডিয়োয় তাঁর কর্মজীবন শুরুর আগেই অবশ্য় পরশুরামের লেখা এবং বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র পরিচালিত নাটক ‘চিকিৎসা সংকট’ সম্প্রচার হয় রেডিয়োয় ৷ সেখান থেকেই ধীরে ধীরে পথ প্রশস্ত হল তাঁর জন্য় ৷ ব্যাস! সেই বছর এমনই এক অগস্টে রেডিয়ো পেল তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠকে ৷ আগে থেকেই ছিলেন বাণী কুমার ভট্টাচার্য, পঙ্কজ কুমার মল্লিকরা ৷ সঙ্গে যুক্ত হলেন আরেক রত্ন ৷ রেডিয়োতে যোগদানের পর দু'ঘণ্টার সঙ্গীত আলেখ্য়ের অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দ্দিনীতে যোগ দেন তিনি ৷
তবে তাঁর যে চণ্ডী পাঠে বাঙালি মাতোয়ারা তা অবশ্য় শুরু হয় আরও বেশ কিছুদিন পরে ৷ আগে নাকি সুরেলা কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের প্রচলন ছিল না ৷ একদিন হঠাৎই সুরেলা কণ্ঠে 'মহিষাসুরমর্দ্দিনী' কথ্য এবং চণ্ডীপাঠ করতে শুরু করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ৷ আসলে মজার ছলেই এমনটা করেছিলেন ৷ আর তাই মাঝপথে থেমেও যান তিনি ৷ কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে ৷ রেকর্ডিং রুম ছেড়ে ছুটে এসেছেন বাণীকুমার ৷ তিনিই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে বলেন, "আরে থামলে কেন! বেশ তো হচ্ছিল ৷ থামলে কেন?..." ব্যাস সেই ইতিহাস তৈরির শুরু ৷ আর ফিরে তাকাতে হয়নি দরাজ কণ্ঠের এই মানুষটিকে ৷ 1991 সালে বাংলা হারিয়েছে তার প্রিয় কন্ঠকে ৷ তারপর অনেক ঝড়ঝাপটা এসেছে ৷ গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল ৷ তবে বাঙালির কাছে রেডিয়ো মানেই হয়ে গিয়েছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ... আজ এই কিংবদন্তির 116তম জন্ম বার্ষিকী ৷