কলকাতা, 3 ডিসেম্বর: কথায় আছে সঙ্গীতের অপর নাম সাধনা ৷ আর ধ্রুপদী সংগীত যে কতোটা কঠিন সাধনার ফসল তা না বললেও চলে ৷ তবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে থেকে আসতে আসতে উধাও হয়ে যাচ্ছে সেই সাধনার নেশা । তাদের মূল আকর্ষণ কম সময়ের গানের দিকে । কিন্তু কেন সামনে আসছে এই ছবি? তবে কি বাংলার সংস্কৃতিকে ক্রমেই ঢেকে দিচ্ছে পশ্চিমী সংস্কৃতি? এই নিয়েই মুখ খুললেন প্রথিতযশা সংগীত শিল্পীরা (Musicians Share Their Thoughts on Classic Music)৷
এই বিষয়ে বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গান জিনিসটা বর্তমানে সকলের কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে(Subhamita Banerjee on Classical Music) । চাইলেই যে কেউ রেকর্ড করে ফেলতে পারছে, মান বিচার হচ্ছে না । যে একটু ভাল গান করতে পারে সেই গেয়ে ফেলছে। কিন্তু এটার জন্য যে একটা প্রথাগত শিক্ষা দরকার, সাধনা দরকার সেটা কেউ বুঝছে না । হয়তো সেই ইচ্ছা কিছুদিন পরেই কেটে যাচ্ছে । ফলে, আর একজন রশিদ খান, আর একটা কৌশিকী চক্রবর্তী তৈরি হচ্ছে না । শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিং এমনকি আমিও রিয়েলিটি শো থেকেই উঠে এসেছি । শিক্ষা নিয়ে উঠে এসেছি। এখন রিয়েলিটি শো শুধুমাত্র শো হয়েই গিয়েছে, প্রতিযোগিতা আর নেই । আমি খুবই হতাশ ।"
নিজে একটি রিয়েলিটি শোয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও একই মত পোষণ করেছেন জয় সরকারও (Joy Sarkar on Classical Music) । তবে শুধু গান নয় সিনেমাতেও এর প্রভাব পড়ছে । তাঁর কথায়,"আমার মনে হয় মানুষের ধৈর্য্য কমে গেছে । বসে একটা গোটা সিনেমা দেখার ধৈর্য্য মানুষের নেই । বাড়িতে কেউ ওয়েব সিরিজ দেখলে একটা এপিসোড পুরোটা একবারে দেখেন না । একটু পজ করে কাজে ডুবে যায় পরের দিন হয়তো আবার দেখে । একটা ভালো জিনিস শিখতে গেলে বা দেখতে গেলে যে ধরনের সংকল্প দরকার সেটা হারিয়ে যাচ্ছে । মানুষ প্রচণ্ড দৌড়চ্ছে । গান বাজনার ক্ষেত্রে নতুন একটা জিনিস চালু হয়েছে আমি নিজেও কাজ করেছি সেটা হল 1 মিনিটের গান । ক্লাসিকাল মিউজিক শুনতে গেলে সে মানসিক স্থিতি দরকার সেটার অভাব ঘটছে । সবথেকে বড় কথা বর্তমান জেনারেশন খুব ভালো গান করছে । কিন্তু মেলে ধরার মত মঞ্চ নেই ।"
পণ্ডিত তন্ময় বোসের কথায়, "ধ্রুপদী সংগীত করতে হলে তার চিন্তা অনেক বেশি । মনকে শান্ত রাখতে হয় । ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় । পারিবারিক সাপোর্ট দরকার হয় । বর্তমান যুগের যুব সমাজের একটা চিন্তা রোজগার। ক্লাসিকাল ঘরানার গানের একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে সমাজে। সব সময় রোজগার করার চিন্তা থাকলে চলবে না। ফলে সব সময় বাচ্চাদের দোষ দেওয়ায় যায় না । এটা নিয়ে এগোনোর জন্য যে মনের জোর দরকার সেটা অনেকে পান না । তাই হয়তো একটু কম পড়ে যাচ্ছে ।"