হায়দরাবাদ, 3 সেপ্টেম্বর: 'শোনো তুমি আমাকে বলো উত্তম কুমার', 'বসন্ত বিলাপ' ছবিতে বান্ধবীর কাছে উত্তম কুমার হতে চেয়েছিলেন চিন্ময় রায় ৷ তবে সেটা ছিল ছবির চিত্রনাট্য ৷ ছবির বাইরে আদতে প্রত্যেক মেয়েই যেন মনে মনে প্রেমিক চান উত্তম কুমারের মতোই ৷ তাই তো মহানায়ক আজও রোম্যান্টিসিজমের সেরা উদাহরণ ৷ হালকা কপালে ভাঁজ ফেলে ওই যে নায়িকার দিকে অপলক তাকানো, ঠোঁটে অমলিন হাসি, আজও বুক উথাল-পাথাল করে দেয় ৷ 3 সেপ্টেম্বর,মহানায়কের 97তম জন্মদিনে ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তীর সঙ্গে ৷ উত্তম কুমারের সঙ্গে ফেলে আসা সেই স্মৃতির কিছুটা ভাগ করে নিলেন আমাদের সঙ্গে ৷
ফুলের মতোই মিষ্টি অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী ৷ 'বিপাশা' ছবিতে সুচিত্রা সেনের বান্ধবীর চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে ৷ ছবিতে মিসেস সেনের বিপরীতে ছিলেন উত্তম কুমার ৷ প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করেন 'দেয়া নেয়া' ছবিতে ৷ তারপর 'দুই পুরুষ', 'ভোলা ময়রা' ছবিতে দেখা গিয়েছে উত্তম কুমার ও লিলি চক্রবর্তীকে ৷ রোমান্টিক অভিনেতার পাশাপাশি কমেডিয়ান উত্তম কুমার কেমন ছিলেন স্মৃতি রোমন্থনে জানান অভিনেত্রী ৷
তিনি বলেন, "কিছু কিছু ছবিতে উনি বেশ ভালো কমেডিয়ানের অভিনয় করেছেন ৷ দেয়া নেয়া-য় সিরিয়াস চরিত্র ছিল কিন্তু উনি মাঝে মধ্যে কমেডি করেছেন ৷ ওনার কমেডি সেন্স ভীষণ ভালো ছিল ৷ সেটে উনি খুব বেশি মজা করতেন না ৷ আমি তখন নতুন ৷ তাই আমার সঙ্গে ওত মজা উনি করেননি ৷ তবে মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করতেন ৷ ভোলা ময়রা ছবিতে আমি ওনার স্ত্রী-র চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম ৷ সেখানে একটা দৃশ্য আছে, তিনি আমার জন্য একটা হার এনেছেন ৷ সেটা গান গাইতে গাইতে পরিয়ে দেবেন ৷ আমি তো তখন নতুন ৷ ওনাকে দাদা বলেই সম্মান করতাম ৷ কিন্তু ফ্লোরের বাকি সদস্যদের সঙ্গে ওনার পূর্ব পরিচয় ছিল ৷"
অভিনেত্রী বলেন, "হঠাৎ করে উনি শুটিং ফ্লোরে শুট করার সময় আমাকে একেবারে জাপটে ধরেছিলেন ৷ আমি বলতে থাকলাম, কী করছেন আপনি কী করছেন ৷ তখন উনি বলছেন, কি করছি মানে কি? তুমি তো আমার বউ ৷ আমি যা খুশি করতে পারি ৷ সেই সময় বেণুদি ছিল অর্থাৎ সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন সামনে ৷ আমি বললাম, ও বেণুদি, দেখোনা কী করছে ৷ তখন উত্তমবাবু বলেন, বেণু কী করবে, তুমি তো আমার বউ ৷ আমি যা খুশি করতে পারি ৷ উনি সেটে ঠিক এই রকম মজা করতেন ৷"
তিনি আরও বলেন, "ওনার অভিনয় অসাধারণ ৷ আমি খুব ফলো করতাম ৷ আর একটা বিষয় বলব, উত্তমা প্রচণ্ড সকলের খেয়াল রাখত ৷ সেটে সকলের খাওয়া-দাওযার দিকে নজর দেওয়া থেকে টেকনিশিয়ান ভাইদের দিকে উনি ভীষণ খেয়াল রাখতেন ৷ এমনও হতো, পুরনো টেকশিয়ান স্টুডিয়োর গেটের কাছে নেমে যেতেনে ৷ তারপর সেখানকার টেকনিশিয়ান ভাইদের কাঁধে হাত দিয়ে কথা বলতে শুরু করে দিতেন ৷ ওদের কাছ থেকে বিড়ি নিয়ে খেতে খেতে তাঁদের সংসারের হাল সম্পর্কে খোঁজখবর নিতেন ৷ যাঁর যা সমস্যা হতো, তাঁদের সাহায্য করতেন ৷ কেউ জানতেও পারত না ৷"