কলকাতা, 2 মে: বাংলা ছায়াছবির আকাশে তিনি সেই নক্ষত্র যিনি মৃত্য়ুর এতগুলো বছর পরেও সমান উজ্জ্বল। বিপুল প্রতিভার অধিকারী এই ক্ষণজন্মা মানুষটি সত্য়ি অর্থেই 'সত্য়জিৎ' ৷ আর তাঁর কাজের হাত ধরেই তিনি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর 'রায়'। বাংলার সাহিত্য় তথা সংস্কৃতির ইতিহাসে যে দু'টি পরিবারের নাম অবিস্মরণীয় তার একটি যদি ঠাকুর পরিবার হয় তবে অন্যটি অবশ্য়ই রায় পরিবার । উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় এবং সত্য়জিৎকে মিলিয়ে এই পরিবার সত্য়িই প্রতিভার খনি। সত্য়জিৎ রায়ও বাবার মতোই পেয়েছিলেন লেখা ও আঁকার নেশা । তাঁর কর্মজীবনের শুরুর দিকে বহু প্রচ্ছদ করেছেন তিনি, এঁকেছেন বিজ্ঞাপনের ছবিও ।
লেখালেখির জগতেও তাঁর অসাধারণ দক্ষতা। যে সত্য়জিৎ বাংলা সিনেমাকে উপহার দিয়েছেন 'পথের পাঁচালী', সেই তিনিই আবার বাঙালিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন প্রিয় ফেলুদা-তোপসেদের সঙ্গে। আবার কল্পনা আর বিজ্ঞানকে এক করে দিয়ে বাঙালিকে দিয়েছেন প্রফেসর শঙ্কুর মতো ক্ষুরধার এক বিজ্ঞানী । তাঁর বিচরণ ক্ষেত্রে তিনি অবশ্য পরিচিত 'মানিকদা' হিসাবেই । সত্য়জিৎ তাঁর ছবির যাত্রা শুরু করেছিলেন 1955 সালে । আর্থিক অনটন সে সময় যথেষ্ট। ছবি তবু তিনি বানাবেনই কারণ আরেক কিংবদন্তি ঋত্বিক ঘটককে যেমন উদ্বুদ্ধ করেছিল দে সিকার 'বাইসাইকেল থিফ' তেমনই এই নব্য ইতালিয় বাস্তবাবাদী ছবি 'লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে'('বাইসাইকেল থিফ') উদ্বুদ্ধ করেছিল মানিককেও । ছবি দেখে হল থেকে বেরিয়েই তিনি নাকি ঠিক করে নিয়েছিলেন তিনি পরিচালকই হতে চান ।
এর আগেই শান্তিনিকেতনের সূত্র ধরে তাঁর গ্রাম্য জীবনের সঙ্গে বেশ কিছুটা পরিচয় ঘটেছে । নন্দলাল, বিনোদবিহারীদের হাত ধরে তিনি ছবির জগতের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছেন । তাই তাঁর ছবির কাহিনিতেও উঠে এল গ্রাম । 'পথের পাঁচালী' ছবিতে বাঙালিকে তিনি তুলে নিয়ে গিয়ে ফেললেন অপু দুর্গার নিশ্চিন্দিপুরে। শহর থেকে দূরে এই গ্রাম্য জীবনের সঙ্গে পরিচয় করাতে গিয়ে কী কম সমস্য়ায় পড়তে হয়েছে তাঁকে । টাকার অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে শ্য়ুটিং। অমিত কুমার একাধিক ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন, কিশোর কুমারও এই ছবির জন্য় সত্য়জিৎকে অর্থ সাহায্য করেছিলেন ৷