পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / entertainment

Satyajit Ray Birth Anniversary: 'মানিক রাজা তোমারে সেলাম', জন্মদিনে ফিরে দেখা সত্যজিতের সফরনামা - জন্মদিনে ফিরে দেখা সত্যজিতের সফরনামা

আজ কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন । আসুন আজ দেখে নেওয়া যাক ক্ষণজন্মা ঈর্ষনীয় কাজের কিছু ঝলক ।

HBD Satyajit Ray
সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে দেখে নেওয়া যাক তাঁর জগতের কিছু ঝলক

By

Published : May 2, 2023, 12:34 PM IST

কলকাতা, 2 মে: বাংলা ছায়াছবির আকাশে তিনি সেই নক্ষত্র যিনি মৃত্য়ুর এতগুলো বছর পরেও সমান উজ্জ্বল। বিপুল প্রতিভার অধিকারী এই ক্ষণজন্মা মানুষটি সত্য়ি অর্থেই 'সত্য়জিৎ' ৷ আর তাঁর কাজের হাত ধরেই তিনি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর 'রায়'। বাংলার সাহিত্য় তথা সংস্কৃতির ইতিহাসে যে দু'টি পরিবারের নাম অবিস্মরণীয় তার একটি যদি ঠাকুর পরিবার হয় তবে অন্যটি অবশ্য়ই রায় পরিবার । উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় এবং সত্য়জিৎকে মিলিয়ে এই পরিবার সত্য়িই প্রতিভার খনি। সত্য়জিৎ রায়ও বাবার মতোই পেয়েছিলেন লেখা ও আঁকার নেশা । তাঁর কর্মজীবনের শুরুর দিকে বহু প্রচ্ছদ করেছেন তিনি, এঁকেছেন বিজ্ঞাপনের ছবিও ।

লেখালেখির জগতেও তাঁর অসাধারণ দক্ষতা। যে সত্য়জিৎ বাংলা সিনেমাকে উপহার দিয়েছেন 'পথের পাঁচালী', সেই তিনিই আবার বাঙালিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন প্রিয় ফেলুদা-তোপসেদের সঙ্গে। আবার কল্পনা আর বিজ্ঞানকে এক করে দিয়ে বাঙালিকে দিয়েছেন প্রফেসর শঙ্কুর মতো ক্ষুরধার এক বিজ্ঞানী । তাঁর বিচরণ ক্ষেত্রে তিনি অবশ্য পরিচিত 'মানিকদা' হিসাবেই । সত্য়জিৎ তাঁর ছবির যাত্রা শুরু করেছিলেন 1955 সালে । আর্থিক অনটন সে সময় যথেষ্ট। ছবি তবু তিনি বানাবেনই কারণ আরেক কিংবদন্তি ঋত্বিক ঘটককে যেমন উদ্বুদ্ধ করেছিল দে সিকার 'বাইসাইকেল থিফ' তেমনই এই নব্য ইতালিয় বাস্তবাবাদী ছবি 'লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে'('বাইসাইকেল থিফ') উদ্বুদ্ধ করেছিল মানিককেও । ছবি দেখে হল থেকে বেরিয়েই তিনি নাকি ঠিক করে নিয়েছিলেন তিনি পরিচালকই হতে চান ।

এর আগেই শান্তিনিকেতনের সূত্র ধরে তাঁর গ্রাম্য জীবনের সঙ্গে বেশ কিছুটা পরিচয় ঘটেছে । নন্দলাল, বিনোদবিহারীদের হাত ধরে তিনি ছবির জগতের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছেন । তাই তাঁর ছবির কাহিনিতেও উঠে এল গ্রাম । 'পথের পাঁচালী' ছবিতে বাঙালিকে তিনি তুলে নিয়ে গিয়ে ফেললেন অপু দুর্গার নিশ্চিন্দিপুরে। শহর থেকে দূরে এই গ্রাম্য জীবনের সঙ্গে পরিচয় করাতে গিয়ে কী কম সমস্য়ায় পড়তে হয়েছে তাঁকে । টাকার অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে শ্য়ুটিং। অমিত কুমার একাধিক ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন, কিশোর কুমারও এই ছবির জন্য় সত্য়জিৎকে অর্থ সাহায্য করেছিলেন ৷

অবশেষে 1955 সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের এই স্বপ্নের প্রজেক্ট 'পথের পাঁচালি'। দেশ-বিদেশজুড়ে খ্য়াতি আর সম্মানে ভরল তাঁর বাসভবন । প্রথম ছবির জন্য় কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকেও পেলেন পুরস্কার । অন্য় কেউ হলে হয়তো এখানেই থেমে যেতেন বলতেন, 'বেশ লড়াই তো জিতেই গেলাম ।' কিন্তু সত্য়জিতের পরিচালক আত্মা সহজে তৃপ্ত হবার ছিল না। আর অতৃপ্ত বলেই বারবার তিনি নিজেকে ভেঙেছেন নতুন কিছু গড়ার লক্ষ্যে । তাঁর পরের ছবি 'অপরাজিত' ফের সমালোচকদের মন কাড়ল । ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনরা এই ছবিকে তাঁর প্রথম ছবির চেয়েও উপরে স্থান দিলেন । ভেনিস থেকে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার এল ভবানীপুরের বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে।

বিশপ লেফ্রয় রোডে সত্যজিত রায়ের বাসভবন

কিন্তু মানিক তো থামতে জানেন না, কোনও স্তুতিই তাঁকে বিন্দুমাত্র আলস্যের ফাঁদে ফেলতে পারে না । তাই এরপর 'অপুর সংসার', 'দেবী', 'কাঞ্চনজঙ্ঘা'-র মতো একের পর এক ছবি তৈরি করলেন । আবার অন্যদিকে মনোযোগ করেন 'সন্দেশ' সম্পাদনাতেও । শুরু করেন লেখালেখিও । হয়তো সেই সূত্র ধরেই ছবিতেও ছোটদের জগৎ নিয়ে চিন্তা ভাবনার সূত্রপাত। সেই ভাবনার সূত্রপাতেই বাঙালি পেল 'গুপি গাইন বাঘা বাইন', 'হীরক রাজার দেশে', 'জয় বাবা ফেলুনাথ', 'সোনার কেল্লা'-র মতো ছবিও । অনুরাগীরা আজও অবাক হয়ে যান তাঁর প্রতিভার এই দিকটি দেখে। যিনি একদিকে বানান 'আগন্তুক', 'অরণ্যের দিনরাত্রি', 'জলসাঘর', 'চারুলতা'-র মতো ছবি তাঁর কলমই আবার জন্ম দেয় 'দার্জিলিং জমজমাট', 'গোরস্থানে সাবধান', 'শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ' কিংবা 'করভাস'-এর মতো গল্প । আর তাই এসব দেখে বলতেই হয় 'মানিক রাজা তোমারে সেলাম' ।

আরও পড়ুন:ঠিক যেন শ্বেতপরী, মেট গালার লাল গালিচায় আত্মপ্রকাশে মুগ্ধ করলেন আলিয়া!

ABOUT THE AUTHOR

...view details