কলকাতা, 9 মে: সোমবারই বাংলায় 'দ্য কেরালা স্টোরি' ব্যান করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আইনি নোটিশ পাঠালেন 'কাশ্মীর ফাইলস'-র প্রযোজক অভিষেক আগরওয়াল, পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী এবং অভিনেত্রী পল্লবী জোশি। প্রসঙ্গত, সোমবার 'দ্য কেরালা স্টোরি' নিয়ে বলতে গিয়ে 'কাশ্মীর ফাইলস' নিয়েও সাংবাদিক সম্মেলনে মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি দাবি করেছিলেন, 'কাশ্মীর ফাইলস'-এর মাধ্যমে সমাজের একটা অংশকে অপমানিত করার চেষ্টা হয়েছে। একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ ছিল, এর পিছনে বিজেপির ফান্ড রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, 'কাশ্মীর ফাইলস' আসলে একটা প্রোপাগান্ডা ছবি।
তাঁর এই মন্তব্যের পরেই মঙ্গলবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, 'কাশ্মীর ফাইলস'-এর প্রযোজক, পরিচালক এবং অভিনেত্রী । মূলত এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে এদিন আইনি চিঠি দেওয়া হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। চিঠিতে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। অথবা তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি যে বক্তব্য পেশ করেছেন তাতে সত্যতা রয়েছে।
'কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে আইনি চিঠি বিবেক অগ্নিহোত্রীর উল্লেখ্য, এদিন একটি সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার মুখোমুখি হয়ে কাশ্মীর ফাইলসের প্রযোজক অভিষেক আগরওয়াল বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে আমরা চুপ ছিলাম। বহু ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা, সাংবাদিক ও রাজনীতিকরা বলে দিচ্ছিলেন, কাশ্মীর ফাইলস একটি প্রোপাগান্ডা। এখন আমাদের মনে হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ। যারা কাশ্মীর ফাইলসকে প্রোপাগান্ডা বলেছেন, হয় তারা প্রমাণ করুন ছবির কোনও সংলাপ, কোনও দৃশ্য, কোনও ফ্রেম মিথ্যা। তা না হলে কাশ্মীর ফাইলসের প্রযোজকদের তরফ থেকে বিবেক অগ্নিহোত্রী, অভিষেক আগরওয়াল এবং পল্লবী জোশি মিলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কালকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাশ্মীর ফাইলস এবং আমার পরবর্তী সিনেমা যেটা বাংলার জেনসাইটের উপর তৈরি করা হচ্ছে তার উপর মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। বলেছেন এটি প্রোপাগান্ডা। উনি বলেছেন আমাকে কাশ্মীর ফাইলস এবং আগামী সিনেমা বানানোর জন্য বিজেপি স্পন্সর করে এবং ফান্ড দেয়। এটা একটা অবমাননাকর বক্তব্য বলে আমি মনে করি। এই বক্তব্যের কোনও ভিত্তি নেই।"
'কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে আইনি চিঠি বিবেক অগ্নিহোত্রীর আরও পড়ুন: বাংলায় ব্যানের একদিন পরেই যোগী রাজ্যে কর মুক্ত 'দ্য কেরালা স্টোরি'
বিশিষ্ট পরিচালক তথা প্রযোজক বিবেক অগ্নিহোত্রীর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের বক্তব্য ভোটব্যাংক বাড়ানোর জন্য বলেছেন। সেই কারণেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মঙ্গলবারই তাঁকে আইনি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, " উনি যে বক্তব্য রেখেছেন তার ভিত্তি কি সেটা প্রকাশ করুন অথবা এটাকে আমরা অবমাননাকর বিষয় হিসাবে ট্রিট করব।" তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, তাঁর জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করেছে ৷ একইভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এমন অভিযোগ করেছে কিন্তু আমরা বিষয়টিকে হালকা ভাবে নিয়েছি। তবে এবার মনে হয়, এই ধরণের মন্তব্যের মাধ্যমে একজন প্রযোজক ও শিল্পীর সত্তাকে আঘাত করা হয়েছে। তাই এর প্রতিবাদ করা হয়েছে।
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই আইনি চিঠি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, "রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই এই সিনেমাগুলো তৈরি হচ্ছে। বিজেপিই পিছনে থেকে এগুলি তৈরি করাচ্ছে। সেখানে ভারতের বহুত্ববাদের বিরুদ্ধে গিয়ে বিশেষ ধর্মকে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে আমরা দেখেছি। যাঁরা এই সিনেমাটা তৈরি করেছেন তাঁরা কোর্টে গিয়ে বললেন এটা ফিকশন। বাইরে বলছেন এটা ট্রুথ এটা ফ্যাক্ট।"
পাশাপাশি বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "ধর্মের ভিত্তিতেই এই বাংলা ভাগ হয়েছিল। তখন কিছু মানুষ আওয়াজ তুলেছিলেন 'কান মে বিড়ি, মুমে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান'। এরপরও যারা এই তত্ত্বে সমর্থন না করে এই দেশে থেকে গিয়েছিলেন তারা ভারতীয় মুসলমান। আমরা তাদের বিরোধিতা করছি না। ভুলে গেলে চলবে না আমাদের এখানে এখনও এই তথ্যকে সমর্থন করে এমন টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের মানসিকতার লোকেরা আছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত সমস্ত সম্প্রদায়ের কথা ভাবা। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অভিভাবক ৷ তিনি যদি বিভাজনের পথ প্রশস্ত করে দেন। তিনি যদি হিন্দু মুসলমানের স্বার্থ উপেক্ষা করে একটা ব্লক ভোটার তৈরি করতে চান তাহলে মনে রাখতে হবে অসংখ্য মুসলমান যারা পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন তাদের সঙ্গেও তিনি আইএসআইকে সম্পৃক্ত করে দিলেন। আর সেই জায়গা থেকে এই প্রতিবাদটা দরকার ছিল। আমাদের মনে হয়, এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।"