কলকাতা, 30 মে:নাম হলে বদনামও হবে-এই সত্য অনস্বীকার্য । তবে, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন পরিচালক অনীক দত্ত । সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালী' বানানোর সফরকে মূলধন করে 'অপরাজিত' বানিয়েছেন এই পরিচালক । আপাতত বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে এই ছবি । ব্যবসা বাণিজ্যের হার প্রতিদিন বাড়ছে । তবে একই সঙ্গে একের পর এক বিতর্কের মুখেও পড়ছেন অনীক ।
শুরুতেই একদা রাজ্যের মুখমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের চরিত্র নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি । এরপর সত্যজিৎ রায়ের মেন্টর তথা কমার্শিয়াল আর্টের জনক অন্নদা মুন্সীর চরিত্র ভুলভাবে পরিবেশনের জন্যও ওই ব্যক্তির পরিবারের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় এই পরিচালককে । আর এবার প্রশ্ন তুললেন খোদ 'পথের পাঁচালী'র দুর্গা অর্থাৎ উমা দেবী (Controversy Over The Selection Process of Durga)। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান, "মানিকদা আর আশিস বর্মণ আমার বাড়িতে এসেছিলেন, বাবাকে অনুরোধ করতে আমাকে দুর্গার অভিনয় করতে দেওয়ার জন্য । তখন বিজয়া রায় (সত্যজিতের স্ত্রী) আসেননি । আমার নির্বাচনের অনেক পরে আমি মানিকদার বাড়ি গিয়েছিলাম । তখনই প্রথম দেখা বিজয়া রায়ের সঙ্গে । দুর্গার ভূমিকায় আমাকে নির্বাচনের সঙ্গে উনি কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন না । আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, 13 বছর বয়স । ভুল তথ্য দেখানো কোনওভাবে গ্রহণযোগ্য নয় ।"
আর এবার অনীক দত্তর বহুল প্রশংসিত ছবি 'অপরাজিত' দেখে ফেসবুক পোস্টে প্রতিবাদ জানালেন অভিনেত্রী উমা দাশগুপ্তর মেয়ে শ্রীময়ী সেন রাম । মা এবং মেয়ের অভিযোগ কেবল ‘অপরাজিত’ ছবির মূলত একটি দৃশ্যকে কেন্দ্র করেই । দুর্গার চরিত্রে উমাকে কীভাবে বেছে নেওয়া হয়, সেটি নিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন অনীক দত্ত এটুকুই দাবি তাঁদের ।
শ্রীময়ী সেন রাম তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে লেখেন, "আজ দেখলাম ‘অপরাজিত'। অরিজিনাল 'পথের পাঁচালী' বানানোর নানা গল্পের স্মৃতিতে আমার মন ভেসে গেল 'অপরাজিত' দেখে । মহাকাব্যিক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য কিংবদন্তি পরিচালকের সংগ্রামকে চিত্রিত করার জন্য পরিচালক যে প্রচেষ্টা করেছেন আমি তার প্রশংসা করি । পরিচালকের সঙ্গে জিতু কামালের সাদৃশ্য লক্ষণীয় । আমি একটি জিনিস উল্লেখ করতে চাই, আমার মা (উমা দাশগুপ্ত) স্কুল থিয়েটারে নিয়মিত অভিনয় করতেন । তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন এবং দুর্গা চরিত্রের জন্য উপযুক্ত কাউকে খুঁজে বের করার জন্য পরিচালক তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন । পরিচালকের নির্দেশে পারিবারিক বাসভবনে আমার দাদু এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয় । তিনি করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় (সর্বজয়া) এবং আমার মায়ের মধ্যে অসাধারণ মিল খুঁজে পান । আমার দাদু খুব কঠোর এবং রক্ষণশীল ব্যক্তি ছিলেন এবং তাঁর মেয়েকে সিনেমায় অভিনয় করতে অনায়াসে রাজি ছিলেন না । তখনকার দিনে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা এবং তাও একটি কিশোরী মেয়ে, যে তখন স্কুলে পড়ত, বেশিরভাগ বাঙালি পরিবারে 'সম্মানজনক' বলে বিবেচিত হত না । অনেক বোঝানোর পর রাজি হলেন তিনি । আমার দাদু মায়ের সিনেমার জন্য এক টাকাও নেননি আর্থিক সংকট সত্ত্বেও ।"
আরও পড়ুন: আবেগে-প্রচারে-অভিনবত্বে দেশে-বিদেশে বাংলা ছবির বেলাশুরু !
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও দু-এক লাইন লেখেন। মোদ্দা কথা, 'পথের পাঁচালী'তে উমা দাশগুপ্তর নির্বাচন যেভাবে হয় 'অপরাজিত'-তে তা ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি বলেই দাবি তাঁর । উল্লেখ্য, 'অপরাজিত'তে 'পথের পাঁচালী' নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি মানুষের নামের বদল ঘটিয়েছেন অনীক দত্ত । দুর্গা চরিত্রের নাম রেখেছেন উমা । কাকতালীয়ভাবে 'পথের পাঁচালী'তে দুর্গা চরিত্রে অভিনয় করেন উমা দাশগুপ্ত । আর 'অপরাজিত'তে দুর্গা চরিত্রের নাম বদলে রাখা হয় উমা ।