পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Jul 4, 2022, 2:11 PM IST

ETV Bharat / entertainment

Tarun Majumdar: বাংলা সেলুলয়েডের 'অমল দত্ত' তরুণ মজুমদার

91 বছর বয়সে চলে গেলেন বাংলা সেলুলয়েডের সেরা গল্পকারদের অন্যতম পরিচালক তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar Passes Away)। সিনেমার 'অমল দত্ত' ছিলেন তরুণ মজুমদার ৷

Tarun Majumdar
বাংলা সেলুলয়েডের “অমল দত্ত” তরুণ মজুমদার

কলকাতা, 4 এপ্রিল:বাংলা সেলুলয়েডের সেরা গল্পকারদের অন্যতম পরিচালক তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar Passes Away)। 91 বছরে তাঁর প্রয়াণ শুধু বাংলা ছবিকে নিঃস্ব করে দিল তা নয়, নতুন প্রতিভা তুলে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকেও ধাক্কা দিয়ে গেল । রবীন্দ্র সঙ্গীতকে বাংলা ছবিতে কতভাবে ব্যবহার করা যায় তারও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখিয়েছিলেন তিনি ।

কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা তাঁর, বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার । ফলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং ভালোবাসার গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ছবিতে । কানন দেবী নিজের প্রোডাকশন হাউস 'শ্রীমতী পিকচার্স' গড়েন 1948 সালে । এই প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল 'অনির্বাণ', 'অনন্যা', 'মেজদিদি'র মত সাহিত্যনির্ভর সিনেমা । সেই সময় যেক'জন তরুণ চিত্রগ্রাহক এবং পরিচালক যোগ দিয়েছিলেন তাXদের মধ্যে অজয় কর এবং তরুণ মজুমদার ছিলেন অন্যতম ।

'শ্রীমতী পিকচার্স'-এর পর 'যাত্রিক' গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিংবদন্তি পরিচালক । সেখানে তাঁর সহযোগী হিসেবে পেয়েছিলেন শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকদের । ফলস্বরূপ 'যাত্রিক' গোষ্ঠীর ব‍্যানারেও বেশ কিছু দারুণ ছবি তৈরি হয়েছিল । তার মধ্যে অন্যতম 'কাঁচের স্বর্গ', 'ছিন্নপত্র', 'নগর দর্পণে', 'এখানে পিঞ্জর' । শেষ দুটো ছবিতে মহানায়ক উত্তম কুমারকে নিয়েই কাজ করেছিলেন তিনি । এখানেই শেষ নয়, উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত আরও দু'টি ছবিও রয়েছে তালিকায় । তার প্রথমটি হল 'স্মৃতিটুকু থাক' আর দ্বিতীয়টি 'চাওয়া পাওয়া' ।

'পলাতক' ছবিতে নায়ক হিসেবে ছিলেন অনুপ কুমার । 'আঙটি চাটুজ্জের ভাই' হিসেবে বাউন্ডুলে ছেলের চরিত্রে অনুপ কুমার এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান আজও মুখে মুখে ফেরে । এরপর স্বাধীনভাবে একাই পরিচালনা শুরু করেন তরুণ মজুমদার । এই প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও রয়েছে । 'অভিমন্যু' ছদ্মনামে 'কুহেলি' ছবিটির নির্মাতা তরুণ মজুমদার । যেখানে হরর সাসপেন্স বা হরর রোম্যান্টিক ছবি দেখতে পাওয়া যায় । স্বাধীন পরিচালক হিসেবে বহু হিট ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি ।

'বালিকা বধূ', 'শ্রীমান পৃথ্বীরাজ', 'আলোর পিপাসা', 'দাদার কীর্তি', 'ফুলেশ্বরী', 'গণদেবতা', 'ভালবাসা ভালবাসা', 'শহর থেকে দূরে', 'পথভোলা', 'পথ ও প্রাসাদ', 'পরশমণি', 'যদি জানতেম', 'ভালোবাসার অনেক নাম', 'সজনী গো সজনী', 'সংসার সীমান্তে', 'একটুকু বাসা', 'আপন আমার আপন', 'কথা ছিল', 'মেঘমুক্তি', 'আলো', 'নিমন্ত্রণ', 'আগমন', 'অমর গীতি', 'অরণ্য আমার', 'চাঁদের বাড়ি', 'খেলার পুতুল', 'ঠগিনী', 'ভালোবাসার বাড়ি' ইত্যাদি জনপ্রিয় বাংলা ছবি তাঁর দক্ষ পরিচালনায় দর্শককে মুগ্ধ করেছে ।

এই ছবিগুলিতে একাধিক নতুন মুখের হাতেখড়ি । সে অর্থে অনেক অভিনেতা এবং অভিনেত্রীর 'আবিষ্কারক' বলা যায় তরুন মজুমদারকে । তাপস পাল, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না দাশ, মহুয়া রায়চৌধুরী, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখদের প্রথমবার হাজির করেছিলেন বড়পর্দায় । পরবর্তী সময়ে তাঁরাই তারকা হয়েছিলেন । এছাড়াও মৌসুমীর মেয়ে মেঘা মুখোপাধ্যায় এবং উত্তমকুমারের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর পরিচালিত ছবিতেই প্রথম দেখা যায় ।

বাংলায় 'বালিকা বধূ'- ছবিটি হিন্দিতেও করেন । তাতে নতুন মুখ শচীন এবং রজনী শর্মাকে মুখ‍্যচরিত্রে দেখা যায় । কালজয়ী গান বড়ে আচ্ছে লাগতে হ্যায় গেয়ে অভিষেকেই ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন অমিত কুমার। সেই ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন রাহুল দেববর্মন । একইভাবে 'পলাতক'-এর হিন্দি 'রাহগির' মুক্তি পায়, অনুপ কুমারের পরিবর্তে বিশ্বজিৎ ছিলেন নায়কের চরিত্রে । তাঁর বেশিরভাগ ছবির সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় । আগেই বলেছি দু'জনের যুগলবন্দিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সার্থক প্রয়োগ দেখা যায় । এমনকি পূজা পর্যায়ের গানকেও প্রেম পর্যায়ের গান হিসেবে ব্যবহার করেছিল এই জুটি ৷ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে অরুন্ধতী হোম চৌধুরী এবং শিবাজী চট্টোপাধ্যায়কে ব্যবহার করেছিলেন পরিচালক ।

আবার হিন্দি "বালিকাবধূ" এবং "আপন আমার আপন" ছবি দুটির সুরকার রূপে ছিলেন রাহুল দেব বর্মণ । এছাড়াও তার ছবিতে সুরকার ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী, শান্তনু বসু, মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ, রবীন চট্টোপাধ্যায়রা । পরিচালক ছাড়াও তিনি ছিলেন সংলাপ রচয়িতা এবং চিত্রনাট্যকার । বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখকদের কাহিনীর ভিত্তিতে তার অধিকাংশ ছবি । মনোজ বসু, বিমল কর, বিভূতিভূষণ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়,ছাড়াও সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, 'বনফুল' ছদ্মনামে ডাক্তার বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়,বীরেন দাস, মালবিকা মিত্র, প্রচেত গুপ্ত, প্রফুল্ল রায়ের সৃষ্টি তিনি ক্যামেরার চোখে চিত্রায়িত করেছেন ।

আবার প্রয়োজনে কিছু ছবিতে নিজেরই লেখা কাহিনি ব্যবহার করেছেন । কয়েকটি ছবির গীতিকার বা গীত রচয়িতাও সকলের প্রিয় তনুবাবু । 'ভালবাসা ভালবাসা', 'আপন আমার আপন', 'পথ ও প্রাসাদ', 'গণদেবতা', 'ঠগিনী', 'আগমন' আর 'পথভোলা', 'ভালোবাসা ভালোবাসা', 'কথা ছিলো', 'সজনী গো সজনী' ছবি তাঁর কাহিনীতে তৈরী হয়েছিল । 1967 সালে বিয়ে হয় বিশিষ্ট অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে । তাঁর পরিচালিত প্রায় কুড়িটি ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে । ।

আরও পড়ুন :সিনে দুনিয়ায় ফের নক্ষত্রপতন, প্রয়াত তরুণ মজুমদার

দু'জনকে বহুদিন পৃথকভাবে থাকছিলেন দেখা যায় ! সম্মান এবং পুরস্কারে ভূষিত তরুণ মজুমদার । যেমন তিনি বিএফজেএ পুরস্কার পেয়েছেন মোট সাতবার । তার মধ্যে 'পরশমণি' ছবির জন্য হন 'সেরা গীতিকার', আর 'বনপলাশীর পদাবলি' ছবিতে 'সেরা চিত্রনাট্যকার' । এছাড়াও তিনি মোট চারবার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার । সেরা ছবি বিভাগেও আরও চারবার পান 'ফিল্মফেয়ার'। এছাড়াও পেয়েছেন 'আনন্দলোক' আর 'কলাকার' সম্মান পুরস্কার, 1990 সালে তাঁকে 'পদ্মশ্রী' উপাধিতে ভূষিত করেন ভারত সরকার ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details