ভাঙড়া (পুরুলিয়া), 18 মার্চ : ক্য়ালেন্ডারের তারিখ মাঝ-মার্চ পার ৷ দক্ষিণবঙ্গে ক্রমশ বাড়ছে সুয্যিমামার আঁচ ৷ পুড়ছে পুরুলিয়ার রুখা মাটি ৷ শুখা মরশুমে বাড়ছে জলকষ্ট ৷ সদরের লোকেরা তবু দিনে একবার করে হলেও টাইম কলের জল ঘরে পাচ্ছে ৷ বাকিদের অবস্থা আরও শোচনীয় ৷ কংসাবতীতে এখন ক্ষীণ ধারা ৷ ভাঁড়ার কমছে পুকুর, জলাশয়ের ৷ তবুও রোজের কাজ সারতে এগুলোই ভরসা পুরুলিয়াবাসীর ৷ আর পানীয় জল পেতে কখনও দাঁড়াতে হচ্ছে টিউবওয়েলের লম্বা লাইনে, আবার কখনও মাইলের পর মাইল উজিয়ে মিলছে মাত্র দুই জ্য়ারিকেন জল ৷
পুরুলিয়ার মানুষের এই বেহাল দশা অজানা নয় দেশের প্রশাসনিক প্রধানেরও ৷ বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার ভাঙড়ায় নির্বাচনী জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ ভাষণের শুরুতেই জেলার মানুষের জলকষ্টের কথা তুলে ধরেন তিনি ৷ জলযন্ত্রণার সঙ্গে জুড়ে দেন রামায়ণের মিথ !
পুরুলিয়ার আনাচ-কানাচে কান পাতলে শোনা যায় এক কাহিনি ৷ সেই কাহিনি রাম-সীতার ৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, 14 বছরের বনবাস হওয়ার পর পঞ্চাবটী যাওয়ার পথে পুরুলিয়াতেও এসেছিলেন রাম-সীতা ৷ একটানা পথ হেঁটে অযোধ্যার সাম্রাজ্ঞী তখন ক্লান্ত, পিপাসার্ত ৷ স্ত্রীর কষ্ট বুঝেই তা নিবারণে তৎপর হন শ্রীরাম ৷ পাহাড়ি মাটিতে তির ছুড়ে বের করে আনেন মিষ্টি জলের ধারা ৷ তাতেই তেষ্টা মেটান সীতা ৷
এদিন সভামঞ্চে রামায়ণের এই প্রসঙ্গই টেনে আনেন নরেন্দ্র মোদি ৷ তবে মহাকাব্যের পাঠ দেওয়া তাঁর লক্ষ্য ছিল না মোটেই ৷ বরং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, রাজনীতির মঞ্চে জলকষ্ট ও তাকে ঘিরে মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্য়াকে সহজ ভাষায় আমজনতার কাছে পৌঁছে দেওয়া ৷ মোদির যুক্তি ছিল সহজ ৷ তাঁর বক্তব্য, ভৌম জলের ভাণ্ডার কতটা পরিপুষ্ট হলে স্রেফ তির মেরেই তাকে মাটির উপরে তুলে আনা যায় ৷ অথচ সেই পুরুলিয়াতেই এখন জলকষ্ট প্রায় সারা বছরের সঙ্গী ৷ মোদির অভিযোগ, পূর্বতন বামফ্রন্ট এবং বর্তমান তৃণমূল সরকারই এর জন্য দায়ী ৷ তারা চাইলে অনায়াসে ভৌম জলের ভাণ্ডার ব্য়বহার করে জেলার মানুষের দুর্দশা দূর করতে পারত ৷ কিন্তু তা করা হয়নি ৷
পুরুলিয়া স্থানীয় তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, মোদির যুক্তিতে জোর আছে যথেষ্ট ৷ কেন ? এর উত্তর লুকিয়ে আছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের নামকরণেই ৷ যে নামকরণের কথা এদিন মোদির ভাষণেও উঠে এসেছে ৷ উঠে এসেছে সীতাকুণ্ডের কথা ৷ সীতাকুণ্ড হল সেই জায়গা, যেখানে রামচন্দ্র তির ছুড়ে ভৌম জলের স্রোত মাটির উপর তুলে এনেছিলেন বলে কথিত আছে ৷