শিলিগুড়ি, 7 সেপ্টেম্বর : সালমা আর জ্যোতি৷ দুটো আলো ঝলমলে নাম! দু'জনেই ভারতের জাতীয় খো খো দলের খেলোয়াড়৷ শিলিগুড়ির একই কলোনি এলাকায় বাড়ি৷ দুই মেয়ের ঘর ভরতি সোনার মেডেল, অসংখ্য প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার এত সার্টিফিকেট, যে গরিবের ঘুপচি ঘরে ধরে না! ওঁদের মধ্যে আরও এক নির্মম মিল- দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও দু'জনকেই ঘাস কেটে-পাথর টেনে মজদুরি করে জীবন চালাতে হচ্ছে!
শিলিগুড়ির তরিবাড়ির কলোনি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে এক কামরার ঘরে থাকেন সালমা মাঝি । 2016 সালে যে ভারতীয় দলটি সাফ গেমসে সোনা জেতে, সেই দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ছোটোবেলাতেই খোখোয় হাতেখড়ি। 2014 সালে সাব জুনিয়র জাতীয় দলে খেলার পর ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে৷ 2015 সালে জুনিয়র দলে সুযোগ৷ এরপর 2016 সালে গর্বের সিনিয়র জাতীয় খো খো দলের সদস্য হওয়া। সেই দলই সাফ গেমসে জেতে সোনা৷ গরিব ঘরের সোনার মেয়ের মুখে তাৎক্ষণিক আলো পড়লেও ব্যক্তি জীবনে অন্ধকারই থেকে গেছে স্থায়ী হয়ে৷ এরই মধ্যে কেটে গেছে চার-চারটে বছর৷
পরিবারে চার সদস্য। বাবা দুমরা মাঝি শ্রমিক। বাবার রোজগারে সংসার চলে না। জাতীয় দলের খোখো খোলোয়াড় তাই এখন একশো দিনের কাজের শ্রমিক! এলাকায় জঙ্গল সাফাইয়ে ঘাস কাটার কাজ, রাস্তার পাথর সরানোর কাজে পেট চালাতে হয়৷ যদিও এইসঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন হার না মানা সালমা। স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। তবু, সব কাজের পর আদিবাসী পরিবারের মেয়েটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘুপচি ঘর থেকে ঝলমল মেডেল, সার্টিফিকেট বের করে রোদে দেন। ঝেড়েমুছে সাজিয়ে রাখেন স্বপ্ন!
সালমা মাঝি বলেন, "দেশের সোনাজয়ী খো খো দলের সদস্য আমি। সাফ গেমসে দল সোনা পেয়েছিল। আমিও সোনার পদক পেয়েছি। খেলা চালাতে চাই। কিন্তু পেরে উঠছি না। কাজ নেই, অর্থ নেই। বাবার একার রোজগারে সংসার চলে না। তাই ঘাস কাটার কাজ নিয়েছি৷ সামান্য মজুরি মেলে।"
ক্ষোভ উগরে দেন ভারতের খো খো দলের খেলোয়াড়, "সরকারের কাছে বারবার আবেদন করেছি একটা চাকরির জন্য। অস্থায়ী হলেও চলবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই পাই না।"