শিলিগুড়ি ও কলকাতা, 14 জুলাই:পাহাড় সফরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের (Jagdeep Dhankhar) সঙ্গে আকস্মিক বৈঠক সেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও (Himanta Biswa Sarma) ! আর তাতেই ভ্রূ কোঁচকাতে শুরু করেছে সিপিএম-কংগ্রেস ৷ মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এই বৈঠককে 'সৌজন্য সাক্ষাৎ' (CM Governor Meeting) বলে দাবি করলেও মানতে নারাজ দুই বিরোধী শিবির ৷ এই ঘটনা সিপিএম-এর 'বিজেমূল তত্ত্ব'কেই আরও একবার প্রমাণ করল বলে মনে করছে তারা ৷
আর কিছু দিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন (Presidential Election 2022) ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পাহাড় সফরের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচারে আসেন এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu) ৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী যশবন্ত সিনহা (Yashwant Sinha) প্রাক্তন তৃণমূল নেতা হওয়া সত্ত্বেও স্বয়ং মমতাই সম্প্রতি বলেন, এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর পরিচয় আগে থেকে জানা থাকলে তাঁর দল দ্রৌপদীকেই সমর্থন করত ! এই প্রেক্ষাপটে যশবন্তের হার একপ্রকার নিশ্চিত বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷
আরও পড়ুন:CM on Bengal Division: 'উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গ সবই সমান', বাংলা-ভাগ প্রসঙ্গে সতর্কবার্তা মমতার
এমন একটি সময় দার্জিলিংয়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ এবং সেই বৈঠকে বিজেপি নেতা তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তের উপস্থিতি আদতে পূর্ব পরিকল্পিত বলেই দাবি করছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির ৷ ডেলোর বৈঠক নিয়ে আজও মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা শোনা যায় বাম, কংগ্রেসের মুখে ৷ দার্জিলিংয়ের রাজভবনের সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়েও কার্যত সেই সুরেই কথা বলছেন অশোক ভট্টাচার্য, মহম্মদ সেলিম থেকে শুরু করে অধীররঞ্জন চৌধুরীরা ৷
সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য মনে করেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ক্রমশ একটি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডায় পরিণত হচ্ছে ৷ পশ্চিমবঙ্গে এসে দ্রৌপদী মুর্মু কেন শুধুমাত্র বিজেপি-র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷ পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঠিক আগেই মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের বৈঠককেও ভালো চোখে দেখছেন না অশোক ৷ তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী নীতিহীন রাজনীতি করছেন ৷" আসলে নিজেদের (বিরোধী শিবিরের) প্রার্থী দাঁড় করানোর পরও মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় যেভাবে দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়েছেন, তা মানতে পারছে না বামেরা ৷ প্রসঙ্গত, যশবন্ত সিং শুধুমাত্র তৃণমূলের ঘোষিত প্রার্থী নন, তিনি সিপিএম-এরও প্রার্থী ৷
রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে সরব বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস ৷ সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দার্জিলিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপালের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, "বাইরে মুখ্যমন্ত্রী যাই বলুন না কেন, ডেলোর মতো আরও কোনও কেলো হল কিনা, তা দেখতে হবে ৷ সিরিয়াস কোনও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও তা হালকা করার জন্যই তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়) চা, বিস্কিট খাওয়ার কথা বলেছেন ৷ যেমন ডেলোয় সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে বৈঠক করার পরও বলেছিলেন ৷ আসলে ওঁরা রাজনৈতিক কথাবার্তাই বলেছেন ৷" একইসঙ্গে, এনআরসি, অসমের বন্যা পরিস্থিতি, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের উপর সরকারের অত্যাচার, মাদ্রাসা বন্ধ করা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ঠিক কী কী আলোচনা করেছেন, তা নিয়েও কৌতুহল প্রকাশ করেছেন সেলিম ৷
আরও পড়ুন:দার্জিলিংয়ের কফি হাউসে ফুরফুরে মেজাজে ধরা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য হল, "দিদি-মোদির মধ্যে যে গোপন বোঝাপড়া রয়েছে, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট ৷ তাঁরা দু'জনই কংগ্রেসমুক্ত দেশ গড়ার কথা বলেন ৷ ফলে, রাজ্যপালের উপস্থিতিতে হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চা-বৈঠক হবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷ 2024 সাল আসছে ৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে এনআরসি, সিএএ নিয়ে কীভাবে রণকৌশল স্থির করা হবে, মোদির দল কী বলবে, দিদির দল কী বলবে, সেসব নিয়ে আলোচনা দরকার ৷ বিজেপি-র বিরুদ্ধে বিরোধীরা যাতে একজোট হতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা কী ভূমিকা হবে, তা নিয়েও আলোচনা করতে হবে ৷"
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের বিরোধ সকলেরই জানা ৷ সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে এই দুই প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বের 'সৌজন্য সাক্ষাৎ' নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক মহলের নজর কেড়েছে ৷ জল্পনা বাড়িয়েছে হিমন্তের উপস্থিতিও ৷ আসন্ন নির্বাচনের মরশুমে বিরোধী কংগ্রেস ও বামেরা এই বৈঠককে হাতিয়ার করে প্রচারে নামে কিনা, এখন সেটাই দেখার ৷