দার্জিলিং, 14 অগস্ট : অস্তিত্বের সংকট নাকি তৃণমূলের চাপ । কী কারণে মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের (Bimal Gurung) সঙ্গে হাত মেলালেন পদত্যাগী মোর্চা নেতা বিনয় তামাং ? এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পাহাড়ের রাজনৈতিকমহলের মধ্যে । বিনয়ের সঙ্গে বিমলের বৈঠকের পর ইতিহাসে প্রথম "বিভীষণের সঙ্গে রাবণের মিল হয়েছে" বলে কটাক্ষ করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ।
2017 সালে পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের সশস্ত্র আন্দোলনের পর প্রায় তিন বছর গা ঢাকা দিয়েছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং, রোশন গিরি । সেই সময় পাহাড়ে মোর্চার রাশ চলে যায় বিনয় তামাং ও অনিত থাপার হাতে । রাজ্যের সঙ্গে হাত মেলানোয় গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (GTA) চেয়ারম্যান করা হয় বিনয় তামাংকে । এরপর বিধানসভা উপনির্বাচনে দার্জিলিং আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জিটিএ'র চেয়ারম্যান পদ থেকে বিনয় তামাং ইস্তফা দেন । জিটিএ চেয়ারম্যান করা হয় অনিত থাপাকে । কিন্তু সেই উপনির্বাচনে জিএনএলএফ ও বিজেপি জোট প্রার্থী নিরজ জিম্বার কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন বিনয় তামাং । আচমকা শেষ বিধানসভা নির্বাচনের আগে পাহাড়ে প্রত্যাবর্তন হয় বিমল গুরুংয়ের । সঙ্গে সঙ্গে এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করার পাশাপাশি পাহাড়ে বিজেপি বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন বিমল গুরুং । একই সঙ্গে অনিত থাপা ও বিনয় তামাংয়ের নেতৃত্বে মোর্চা-2-ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে । কিন্তু পাহাড়ের তিনটি আসনে একদিকে যেমন ধরাশায়ী হন বিমল গুরুং ।
অন্যদিকে, কালিম্পং আসনে জয়ী হয়ে কোনওমতে মুখ রক্ষা করেন বিনয় তামাংরা । কিন্তু তাতেও খুব একটা সুবিধা করতে না পারায় মোর্চা-2 থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বিনয় । দলীয় পতাকা ও প্রতীকও বিমল গুরুংকে ফেরত দেন বিনয় । এরপর পাতংবং গেস্ট হাউজে গোপন বৈঠক হয় বিমল ও বিনয়ের ৷ তবে বিমল শিবিরেই যোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন বিনয় তামাং । বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে এলেও বিনয় বা বিমল কেউই পাহাড়ে নিজেদের শক্তি ধরে রাখতে পারেননি । নির্বাচনে একের পর এক পরাজয় ও বিজেপির হাতে ক্ষমতার রাশ চলে যায় ৷ এখন পাহাড়ের রাশ ধরতে হলে দু'জনের এক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা । যদিও এবিষয়ে তেমন খোলসা করেননি বিমল বা বিনয় কেউই । তবে তাঁদের ওই বৈঠক নিয়ে দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নিরজ জিম্বা বলেন, "এই প্রথম ইতিহাসে বিভীষণের সঙ্গে রাবণের মিল হল । মিল হলেও কিছু যায় আসে না । পাহাড়বাসী দু'জনকেই প্রত্যাখান করেছে । এটা তাঁদের দু'জনের ষড়যন্ত্র ছিল । পাহাড়বাসীর জন্য নয়, নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করছেন বিনয় তামাং ও বিমল গুরুং ।"