মালদা, 6 জুন : জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে দৌড়োচ্ছে পুষ্পা । পিছনে তাড়া করছে পুলিশ । পুষ্পা কিছুতেই ঝুঁকবে না । ক’দিন আগেই এই দৃশ্যে মজেছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী । সাত থেকে সত্তরের মুখে মুখে ঘুরছিল এই ছবির ডায়লগ । বক্স অফিসে সাড়া ফেলে দিয়েছিল দক্ষিণ ভারতীয় লেখক সুকুমারের পরিচালনায় নির্মিত এই ছবি । কিন্তু যদি বলা হয়, এই ছবির বেশ কিছুটা অংশ তৈরি হয়েছিল হায়দরাবাদ থেকে হাজারো মাইল দূরে এই মালদা শহরে ? 10 ফুট বাই সাত ফুটের ছোট্ট একটা ঘরে ! হয়তো কেউ তা বিশ্বাস করতে পারবেন না । কিন্তু আদপে সেটাই ঘটেছে । পুষ্পা ছবির স্পেশাল ভিডিয়ো এফেক্টের একটি অংশ এই ঘরেই তৈরি হয়েছে । তৈরি করেছেন 23 বছরের যুবক সাগর পাসোয়ান । শুধু পুষ্পাই নয়, ভাঙ্গাররাজু, ঘানির মতো দক্ষিণ ভারতীয় ছবির সঙ্গে শর্মাজি নামকিন-সহ আরও কিছু বলিউডের ছবিতেও তিনি স্পেশাল এফেক্টের কাজ করেছেন । এবার দেশ ছেড়ে বিদেশের পথে তিনি । ইতিমধ্যে হলিউডের বিখ্যাত এক কোম্পানির সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়েছেন (Sagar Paswan from Malda working in Hollywood projects) ।
মালদা শহরের সানিপার্কের বাসিন্দা সাগর । বাবা রামকুমার পাসোয়ান পুরাতন মালদার নারায়ণপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন । মা রীনা পাসোয়ান ঘরের কাজকর্ম সামলান । সাগরের একটি ভাইও রয়েছে । নিম্নবিত্ত পরিবার । পূর্বপুরুষের তৈরি বাড়িটিতে সংস্কারের অভাব স্পষ্ট । সেই বাড়িতেই একটি ছোট্ট ঘরে, মশার রাজত্বের মধ্যে নিজের কাজ করে যান সাগর । তিনি কিন্তু শুধুই একজন ভিডিয়ো এডিটর নন । তিনি একজন সাংবাদিকতার স্নাতকও বটে । পুরাতন মালদার গৌড় কলেজ থেকে তিনি মাস কমিউনিকেশনে স্নাতক উত্তীর্ণ ৷
সাগর জানালেন, “যখন মালদা জেলা স্কুলে ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ি, তখন সবেমাত্র অ্যানিমেটেড মুভি বাজারে এসেছে । আমার মনে তখনই প্রশ্ন জাগে, এসব মুভি কীভাবে তৈরি হয় ? এমন মুভি আমি কীভাবে তৈরি করব ? এখান থেকেই মনের মধ্যে বসে যায়, আমি সিনেমায় কাজ করব । এরই মধ্যে বাহুবলী ছবি রিলিজ হয় । ওই ছবি দেখে আমার সিনেমা তৈরির ইচ্ছেটা আরও বেড়ে যায় । পরিবারের আর্থিক সমস্যার জন্য ক্লাস নাইন থেকে আমি বিয়েবাড়ির ছবি তুলতাম । বাবাইদা নামে একজনের কাছে আমি এডিটিংয়ের কাজ শিখে আমি সেই কাজ শুরু করি । ইউটিউবেও কাজ শিখতাম । কারণ, সেই সময় মালদায় কোনও অ্যানিমেশন স্টুডিয়ো ছিল না । আর বাইরে গিয়ে কাজ শেখার মতো আর্থিক সঙ্গতি আমার পরিবারেরও ছিল না । তবে বাবাইদার জন্যই আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। এরই মধ্যে জানতে পারি, মালদায় এরিনা অ্যানিমেশন ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । আমি সেখানে ভর্তি হয়ে যাই ।”