পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

নিজেদের উদ্যোগে গ্রামে কোয়ারান্টাইন সেন্টার খুললেন দুই যুবক - গ্রামে কোয়ারানটাইন সেন্টার খুললেন দুই যুবক

চাঁচল ২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কানাইপুর গ্রামে৷ এই এলাকা থেকে প্রচুর শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজ করতে যায়৷ কোরোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরে এসেছেন৷ সেই শ্রমিকদের জন্য ব্লক প্রশাসন স্থানীয় গোয়ালপাড়া হাইস্কুলে একটি কোয়ারানটাইন সেন্টার খুলেছে৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকায় একটি সেন্টার পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেছিলেন স্থানীয় দুই যুবক মহম্মদ আলি জিন্না ও আতাউর রহমান৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, প্রশাসন নিজের কাজ করুক, কিন্তু এলাকায় কোরোনা মোকাবিলায় তাঁদেরও এই ব্যবস্থা নিতে হবে৷প্রশাসনের সম্মতি নিয়ে স্থানীয় কানাইপুর জুনিয়র হাইস্কুলে খোলা হয় সেই সেন্টার৷ এরপরেই ভিনরাজ্য থেকে কেউ বাড়ি ফিরেছে শুনলেই গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় ছুটতে শুরু করেন মহম্মদ আলি ও আতাউর৷ এভাবেই তাঁরা সেন্টারে নিয়ে আসেন ১৭ জনকে৷

Quarantine Center
কোয়ারানটাইন সেন্টার

By

Published : Apr 7, 2020, 4:05 PM IST

মালদা, 7 এপ্রিল : প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে৷ ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা শ্রমিক কিংবা জ্বর ও সর্দি-কাশি উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ মানুষের জন্য এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে কোয়ারানটাইন সেন্টার৷ কিন্তু পরিস্থিতি ঘোরালো হলে এলাকায় একটি সেন্টার পর্যাপ্ত হবে না বলে মনে করেছিল গ্রামের দুই যুবক৷ নিজেদের উদ্যোগে চাঁদা তুলে তারা গ্রামে খুলে ফেলেছে আরও একটি কোয়ারান্টাইন সেন্টার৷ শুধু সেন্টার খোলা নয়, সেখানে এখন রাখা হয়েছে 17 জন শ্রমিককে ৷ তাঁদের সবাইকে খাওয়ানোর দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ওই দুই যুবক৷ তাঁদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছে স্থানীয় মানুষজন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তারাও৷

এই ঘটনা ঘটেছে চাঁচল 2 ব্লকের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কানাইপুর গ্রামে৷ এই এলাকা থেকে প্রচুর শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজ করতে যায়৷ কোরোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরে এসেছেন৷ সেই শ্রমিকদের জন্য ব্লক প্রশাসন স্থানীয় গোয়ালপাড়া হাইস্কুলে একটি কোয়ারান্টাইন সেন্টার খুলেছে৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকায় একটি সেন্টার পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেছিলেন স্থানীয় দুই যুবক মহম্মদ আলি জিন্না ও আতাউর রহমান৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, প্রশাসন নিজের কাজ করুক, কিন্তু এলাকায় কোরোনা মোকাবিলায় তাঁদেরও এই ব্যবস্থা নিতে হবে৷ যেমন ভাবা, তেমন কাজ৷ দু’জন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে৷ তাঁরা সবাইকে জানান, তাঁরাও নিজেদের উদ্যোগে এলাকায় একটি কোয়ারান্টাইন সেন্টার খুলতে চান৷ এগিয়ে আসে গ্রামবাসীরাও৷

প্রশাসনের সম্মতি নিয়ে স্থানীয় কানাইপুর জুনিয়র হাইস্কুলে খোলা হয় সেই সেন্টার৷ এরপরেই ভিনরাজ্য থেকে কেউ বাড়ি ফিরেছে শুনলেই গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় ছুটতে শুরু করেন মহম্মদ আলি ও আতাউর৷ এভাবেই তাঁরা সেন্টারে নিয়ে আসেন 17 জনকে৷ প্রত্যেককে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরেই সেন্টারে নিয়ে আনা হয়৷ কোয়ারান্টাইনে শ্রমিকদের জন্য তাঁরা খাবারেরও বন্দোবস্ত করেছেন৷ সকালে চা-বিস্কুট, প্রাতরাশে মুড়ি-ঘুঘনি, দুপুরে ভাতের সঙ্গে তরকারি, ডাল, ডিম বা মাংস, বিকেলে ফের টিফিন। রাতে হালকা খাবার৷ এই সেন্টারে থাকা লোকজনকে সপ্তাহে পাঁচদিন মাংস খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই দুই যুবক৷


মহম্মদ আলি জিন্না বলেন, “কোনও পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফিরে এলে তাকে 14 দিনের জন্য কোয়ারান্টাইন থাকতেই হবে৷ আমরা এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনও ছেলেখেলা করতে দেব না৷ এলাকার সম্পন্ন মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলেই গত এক সপ্তাহ ধরে এই সেন্টার চালাচ্ছি৷ আপাতত এখানে 17 জনকে রাখা হয়েছে৷ তাঁদের খাবারের জন্য প্রতিদিন তিন হাজার টাকা খরচ হচ্ছে৷ এই খরচ চালাতেই একটু সমস্যায় পড়েছি৷ এনিয়ে আমরা ব্লক প্রশাসনের কাছে আর্জিও জানিয়েছি৷”

অন্যদিকে আতাউর বলেন, “লকডাউনে আমরা সবাই এখন কর্মহীন৷ গ্রামের মানুষেরও কাজ নেই৷ তবুও তাঁরা এই সেন্টার চালাতে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন৷ এই সেন্টার চালানোর পাশাপাশি আমরা প্রতিদিন অন্তত 100টি দুঃস্থ পরিবারে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি৷ এই অবস্থায় প্রশাসন আমাদের একটি সাহায্য করলে ভালো হয়৷” এবিষয়ে চাঁচল 2-এর BDO অমিতকুমার সাউ বলেন, “কানাইপুর জুনিয়র হাইস্কুলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলা কোয়ারান্টাইন সেন্টারটির জন্য কিছু সরকারি সাহায্যের চেষ্টা করছি আমরা৷ তবে ওই সেন্টারে শ্রমিকদের বিশেষ যত্নে রাখা হয়েছে৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সেন্টারে সবাইকে রাখা হয়েছে৷ সেন্টার থেকে যাতে কেউ পালিয়ে না যেতে পারে, তার জন্য 24 ঘণ্টা পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এলাকাবাসীর স্বার্থে ওই দুই যুবক যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়৷”

ABOUT THE AUTHOR

...view details