মালদা, ২৯ নভেম্বর : শিক্ষাকর্মীদের লাগাতার কর্মবিরতির জেরে নমনীয় হতে বাধ্য হল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৷ আন্দোলনকারীদের মূল তিনটি দাবির মধ্যে গতরাতে মেনে নেওয়া হয়েছে একটি দাবি ৷ বাকি দুটি দাবি নিয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কথা বলতে আজ দুপুরে কলকাতা রওনা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ৷ তবে এই আন্দোলনে প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে ৷ তেমনটাই মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীদের একাংশ ৷
গত ১০ দিন ধরে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীরা ৷ স্থায়ীকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার এবং স্থায়ী শিক্ষাকর্মীদের পদোন্নতি মূলত এই তিনটি দাবি নিয়ে তাঁদের এই কর্মবিরতি ৷ এই অন্দোলন শুরু হওয়ার পরেই কলকাতা চলে যান উপাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ৷ গত ২৩ নভেম্বর তাঁরা দুজনেই কলকাতায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে অংশ নেন ৷ তারপরে ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ পত্র জমা দেন উপাচার্য ৷
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় কাজে যোগ দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরি ৷ তাঁকে পেয়ে আন্দোলনের সুর বাড়ান আন্দোলনকারীরা ৷ রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলেন ৷ রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরি জানান, আন্দোলনকারীরা তাঁকে সব দাবি পূরণ করার চাপ দিচ্ছেন ৷ দাবি পূরণ না করতে পারলে তাঁকে পদত্যাগ করার চাপও দেওয়া হচ্ছে ৷ উপাচার্যের নির্দেশ পেয়ে তিনি অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেন ৷ তিনি আজ সকালে যোগাযোগ করেন উচ্চশিক্ষা দপ্তরে ৷ শিক্ষাকর্মীদের এই কর্মবিরতি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করছে তা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান ৷ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি সংশ্লিষ্ট নথিপত্র নিয়ে আজ দুপুরেই কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন ৷
শিক্ষাকর্মীদের এই আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে তৃণমূল প্রভাবিত সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতির গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের পরিচালনায় ৷ সংগঠনের পক্ষে সৌমেন্দু রায় আজ বলেন, “আমরা তিনটি দাবি নিয়ে ১০ দিন ধরে কর্মবিরতি করছি ৷ একটি দাবি পূরণ হয়েছে ৷ আমাদের পদোন্নতির বিষয় নিয়ে গতকাল চিঠিচাপাটি হয়েছে ৷ কিন্তু আমাদের মূল দাবি স্থায়ীকরণ ৷ সেই দাবি যতক্ষণ না পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের কর্মবিরতি চলবে ৷ আর কর্তৃপক্ষ যদি ভেবে থাকে, তাঁরা নিজেদের নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছে তবে তারা ভুল ভাবছেন ৷ কোনও ভাঁওতাবাজি কিংবা কাটমানির ভয়ে আমরা চুপ থাকব না ৷ যদি রেজিস্ট্রার আজ কলকাতা গিয়ে থাকেন, তবে তিনি আমাদের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছেন ৷ আজ সকালে তিনি আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন ৷ আমরা যতদূর জানি, তিনি আরেকটি ইসি’র বৈঠক ডাকার জন্য উচ্চশিক্ষা দপ্তরে আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ সেই বৈঠকে আমাদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল ৷ আমাদের আশঙ্কা রয়েছে, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও যেমন ফাইল লোপাটের ঘটনা ঘটেছে, এবারও তেমন ঘটনা ঘটতে পারে৷ তাই আমরা সবাই সতর্ক রয়েছি ৷”
কি বলছেন আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা ? দেখুন সেই ভিডিয়ো
ETV ভারতকে ফোনে রেজিস্ট্রার জানান, তিনি অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীদের দাবিগুলি নিয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরে আলোচনার জন্য যাচ্ছেন৷ কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে ৷ দপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁকে যে নির্দেশ দেওয়া হবে, তিনি সেভাবেই চলবেন ৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ার পদটি ফাঁকা রয়েছে৷ পূর্বতন ইঞ্জিনিয়ার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার পর তাঁর জায়গায় নতুন কোনও নিয়োগ হয়নি ৷ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল, তার মধ্যে এই পদটিও ছিল ৷ কারণ, দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি ৬ কোটি টাকার ফান্ড পেয়েছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ৷ সেই টাকায় নির্মীয়মান বয়েজ ও গার্লস হস্টেলের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে ৷ কিন্তু উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ার না থাকলে সেই কাজ করা যাবে না ৷ শিক্ষাকর্মীদের এহেন আন্দোলনে হস্টেলের কাজ ফের বিশ বাঁও জলে চলে গেল বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীদেরই একাংশ৷ যদিও এনিয়ে এখনই কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে রাজি হয়নি ৷