মালদা, 11 ডিসেম্বর : স্বামী মারা গিয়েছেন প্রায় 18 বছর আগে ৷ ঘরে কোনও ছেলে নেই ৷ এদিকে দুটি মেয়ে ৷ তারা বড় হয়েছে ৷ অনেক চেষ্টা করে বছর চারেক আগে কোনও আয়োজন ছাড়া বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন মা ৷ ততদিনে ছোটো মেয়ের বিয়ের বয়সও প্রায় হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু এক মেয়ের বিয়ে দিতেই ঘরে যা কিছু ছিল, সব চলে গিয়েছে ৷ কীভাবে ছোটো মেয়ের বিয়ে হবে? কপাল জোড়ে তার পাত্রও জুটে গিয়েছিল ৷ পাত্র বিয়েতে কোনও পণ নেবে না বলেও জানিয়ে দেয় ৷ কিন্তু বিয়ের খরচ জোগাড় হবে কীভাবে? ভেবেই পাচ্ছিলেন না রচনা মণ্ডল ৷ তবে কি টাকার অভাবে রিঙ্কির বিয়ে হবে না ! এই পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়ান গ্রামেরই 7-8 জন যুবক ৷ তাঁরা প্রত্যেকেই মুসলমান ৷ তাঁদেরই চেষ্টায় গতকাল গভীর রাতে বিয়ে হয়েছে রিঙ্কির ৷ আজ সন্ধেয় স্বামীর ঘরে যাবেন তিনি ৷
কালিয়াচকের চরি অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দৌলতটোলা গ্রাম ৷ এই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন বিশ্বনাথ মণ্ডল ৷ প্রায় 18 বছর আগে মারা যান তিনি ৷ দুই মেয়েকে নিয়ে চরম সমস্যায় পড়ে যান রচনাদেবী ৷ কৃষি শ্রমিকের কাজ করে মেয়েদের বড় করে তোলেন তিনি ৷ কিন্তু মেয়েদের বিয়ে ! সেটা কল্পনাতেও আসেনি তাঁর ৷ তবে বড় মেয়ের বিয়ের সময় পড়শিরা কিছু সাহায্য করেছিল ৷ তা দিয়ে কোনওরকমে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছিলেন ৷ কিন্তু তিনি তো মা ৷ তাঁরও তো ইচ্ছে হয়, একটু আয়োজন করে মেয়ের বিয়ে দেবেন ৷ তাই ছোটো মেয়ে রিঙ্কির পাত্র পেয়েই তিনি যোগাযোগ করেন গ্রামের আবদুল্লা, আলমগীর, ইলিয়াস, হাবিবদের সঙ্গে ৷ রিঙ্কির বিয়ের জন্য তাদের সাহায্য চান ৷ এগিয়ে আসে ওই যুবকরাও ৷ নিজেরা অর্থ সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা সংগ্রহ করা হয় ৷ উঠেও যায় বেশ কিছু টাকা ৷ তা দিয়েই গতকাল রাতে পূর্ণ আয়োজনে বিয়ে হয়েছে রিঙ্কির ৷ রাত জেগে বিয়ের সব ব্যবস্থা করেছেন আবদুল্লারা ৷ ছাদনাতলা সাজানো থেকে শুরু করে অতিথিদের আপ্যায়ন, খামতি ছিল না কোনও কিছুতেই ৷ রাতের স্তব্ধতা ভেঙে দিয়েছিল বিয়ের বাজনা ৷