মালদা, 23 অগাস্ট : জেলায় কোরোনা সংক্রমণের সংখ্যা চার হাজার পেরিয়ে গেছে ৷ আনলক পর্বেও ভাইরাস মোকাবিলায় বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে রাজ্য সরকার ৷ এখনও রাজ্যের কোথাও সিনেমা হল, পার্ক, স্কুল, কলেজ, অডিটোরিয়াম খোলা হয়নি ৷ কোরোনার সংক্রমণে লাগাম টানতে রাজ্য সরকার শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখার দিকেই জোর দিচ্ছে ৷ বর্তমানে রাজ্যের কোথাও কোনও বড় অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হচ্ছে না ৷ কিন্তু আজ একেবারেই উলটো ছবি ধরা পড়েছে মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামে ৷ তৃণমূল যুবর সভা এবং দলবদল অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আজ যেন সেখানে হাট বসেছিল ৷ শাসকদলের যুব সংগঠনের এক হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৷ ছিলেন সংগঠনের মালদা জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস, এমনকী জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নূরও ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ৷
কোরোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের নির্দেশে মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামের দু'টি প্রেক্ষাগৃহই বন্ধ রাখা হয়েছে ৷ প্রেক্ষাগৃহ খোলা কিংবা বিশাল জমায়েত করে কোনও সভার বিষয়ে সরকার এখনও কোনও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেনি ৷ এই পরিস্থিতিতে BJP-র তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, শাসকদলের যুব সংগঠনকে অডিটোরিয়ামে রাজনৈতিক কর্মসূচি করার অনুমতি দেওয়া হল কীভাবে ? এনিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং কলেজের প্রশাসক, খোদ জেলাশাসকের দিকে আঙুল তুলছে অনেকেই ৷ কলেজের অধ্যক্ষ জানাচ্ছেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশেই তাঁরা অডিটোরিয়াম খুলতে বাধ্য হয়েছেন ৷
আরও পড়ুন :তৃণমূলের জমায়েতে স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার অভিযোগ
এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন জেলাশাসক ৷ তবে মালদা কলেজের একটি সূত্র বলছে, তৃণমূল যুবর অনুষ্ঠানের জন্য অডিটোরিয়াম খুলে দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন খোদ জেলাশাসক ৷ প্রশাসকের নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ ৷ তবে কি সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করেই প্রশাসন কোরোনা আবহেও তৃণমূল যুবকে এত বড় সভা করার অনুমতি দিল ? আজ এই প্রশ্নেই তোলপাড় জেলা ৷
প্রেক্ষাগৃহে গিজ গিজ করছে ভিড় আজ মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামের দুর্গাকিংকর সদনে তৃণমূল যুবর নতুন জেলা সভাপতির সঙ্গে সংগঠনের নেতা ও কর্মীদের সরাসরি যোগাযোগ এবং দলবদল কর্মসূচি পালিত হয় ৷ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শাসকদলের জেলা সভানেত্রী মৌসম নূরও ৷ 1050 আসন বিশিষ্ট দুর্গাকিংকর সদন ছিল পুরোপুরি ভরতি ৷ অনেককে বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে ৷ সদনের বাইরেও সংগঠনের কয়েক'শো সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ৷ স্বাভাবিকভাবেই উধাও হয়ে যায় কোরোনাবিধি ৷ এরই মধ্যে নিজেদের বক্তব্য রাখেন প্রসেনজিৎ ও মৌসম ৷ দু’জনেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় সংগঠনকে জোরদার করার আবেদন জানান ৷ তাঁদের গলায় উঠে আসে BJP-র প্রসঙ্গও ৷ তবে কংগ্রেস কিংবা বামফ্রন্টকে নিয়ে এদিন তাঁরা কোনও মন্তব্য করেননি ৷
আরও পড়ুন :মালদায় প্রশাসনিক উদ্যোগে রাখিবন্ধন উৎসব, মানা হল না সামাজিক দূরত্ব
কিন্তু কোরোনা আবহে কীভাবে অডিটোরিয়ামে সভা করার অনুমতি পেলেন ? এই প্রশ্নে জেলা তৃণমূল যুবর সভাপতি বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় প্রেক্ষাগৃহ এবং অডিটোরিয়াম খুলে গেছে ৷ এই সদন স্যানিটাইজ় করে, প্রত্যেকে সামাজিক দূরত্ববিধিকে মান্যতা দিয়ে, মুখে মাস্ক পরে এই সভা করা হচ্ছে ৷ সদনে উপস্থিত সবাই চেয়ারেই বসে রয়েছেন ৷ এনিয়ে কোনও সমস্যা নেই ৷ কোরোনা মোকাবিলায় লকডাউন যখন চালু ছিল, তখন এই অডিটোরিয়াম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ এখন আর সেই নিষেধাজ্ঞা নেই ৷”
সামাজিক দূরত্ব বিধি উপেক্ষা করেই মালদায় সভা তৃণমূল যুবর এদিকে মৌসম বলেন, “এখানে সভার সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে ৷ আমরা নিজেরাও ভাবতে পারিনি, এই সময় সভা ঘিরে যুবক-যুবতিদের এত উৎসাহ থাকবে ৷ এখানে এদিন অন্য দল থেকে আমাদের যুব সংগঠনে অনেকে যোগদান করেছেন ৷ আমরা আশা করছি, সবাইকে নিয়ে আমরা আগামীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত আরও শক্তিশালী করতে পারব ৷ এখন যেভাবে দল চলছে, দলকে গোছানোর জন্য যে ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেভাবে নতুন মুখকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তার খুব প্রয়োজন ছিল ৷ আমাদের নেত্রী দলটাকে সাজানোর চেষ্টা করছেন ৷ আমার বিশ্বাস, আগামী দিনে এই জেলার প্রতিটি আসনেই আমরা খুব ভালো ফল করব ৷ এই জেলায় প্রতিটি ব্লকে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ৷ আজকের সভায় আমরা প্রত্যেককে মাস্ক পরে আসতে বলেছিলাম ৷ কিন্তু এখানে যে এত ভিড় হবে, তা আমরা বুঝতে পারিনি ৷ সভাস্থান ভালো করে স্যানিটাইজ় করা হয়েছে ৷ কোরোনা বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে আমরা আরও চেষ্টা করব ৷ তৃণমূল যুবর পক্ষ থেকে অডিটোরিয়াম বুক করা হয়েছিল ৷ আমাদের কাছে খবর, এখন সমস্ত অডিটোরিয়ামই খুলে গেছে ৷ কলেজ কর্তৃপক্ষই আমাদের এখানে সভা করার অনুমতি দিয়েছে ৷”
আরও পড়ুন :লকডাউন শেষে শিকেয় সামাজিক দূরত্ব, থিকথিকে ভিড় বারাসতে
এবিষয়ে মালদা কলেজের অধ্যক্ষ মানসকুমার বৈদ্য বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী এখনও কলেজ অডিটোরিয়াম বন্ধ রয়েছে ৷ তবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে আমরা এদিনের জন্য দুর্গাকিংকর সদন ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছি ৷ ”
এদিকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন মালদা কলেজের প্রশাসক তথা জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র ৷ তিনি বলেন, “সেখানে কত জমায়েত হয়েছে তা জানা নেই ৷ কীভাবে সেখানে সভা করার অনুমতি দেওয়া হল তা খবর নিয়ে দেখছি ?" যদিও মালদা কলেজ এবং খোদ শাসকদলেরই সূত্র জানাচ্ছে, জেলাশাসকের নির্দেশেই আজ শাসকদলের যুব সংগঠনকে অডিটোরিয়াম ব্যবহারের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে মালদা কলেজ কর্তৃপক্ষ ৷
আরও পড়ুন :সামাজিক দূরত্ব শিকেয় তুলে বাগবাজারে ভারতমাতার পুজো
গোটা ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে BJP শিবির থেকে ৷ দলের জেলা সম্পাদক শিবশংকর পোদ্দার বলেন, “কোরোনা আবহে এখনও রাজ্য সরকার কোনও সিনেমা হল কিংবা অডিটোরিয়াম খোলার নির্দেশ দেয়নি ৷ এখনও 25-50 জনের বেশি জমায়েত করার সরকারি অনুমতি নেই ৷ কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে শাসকদলকে সুবিধা করে দিতে জেলা প্রশাসন সরকারি নির্দেশ অমান্য করে অডিটোরিয়াম ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ৷ এভাবেই প্রশাসন এখন শাসকদলের হয়ে কাজ করছে ৷ অথচ আমাদের কোথাও কোনও সভা করতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এভাবেই দলের স্বার্থে প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন৷ আসলে BJP-র নাম শুনলেই এখন ভয় পাচ্ছে তৃণমূল ৷ তবে এভাবে আমাদের আটকানো যাবে না ৷ আজ মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামে যে ভিড় হয়েছিল, সেখান থেকে যদি কোরোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, তবে তার দায় কে নেবে ? কারণ, সেখানে অনেকের মুখে মাস্ক পর্যন্ত ছিল না ৷”