মালদা, ১২ মার্চ : আসন্ন পৌরভোট রাজ্যজুড়েই লড়াই করতে চলেছে বাম ও কংগ্রেস ৷ মালদার দু'টি পৌরসভাও তার ব্যতিক্রম নয় ৷ বস্তুত, এই রাজ্যে এই জোট রাজনীতির আমদানি হয়েছিল এই জেলা থেকেই ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোট এই জেলায় তৃণমূলকে খাতা খুলতে দেয়নি ৷ লোকসভা ভোটেও সেই ছবির ব্যতিক্রম হয়নি৷ এবার আসছে পৌরভোট ৷ কিন্তু এই জেলায় সেই জোট প্রক্রিয়া চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে ৷ তা স্বীকার করছে দুই দলের নেতৃত্বই ৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায় ৷ এর আগে বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী হিসাবে ভোটে জেতার পর শাসকদলে নাম লিখিয়েছেন অনেকেই৷ তার মধ্যে রয়েছেন পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলর, বিধায়ক, এমনকী সাংসদ মৌসম নুরও ৷ অথচ মানুষ শাসকদল বিরোধী হিসাবেই তাঁদের ভোটে জিতিয়েছিলেন৷ এবারের পৌরভোটের পরেও কি সেই ছবি দেখা যাবে? নাকি এবার সেভাবেই প্রার্থী বাছাই করা হবে ? এই প্রশ্নে নিজেদের অসহায়তার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক অম্বর মিত্র ও জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি কালীসাধন রায় ৷ দু’জনেরই পরিষ্কার কথা, “এমন গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই৷”
পৌরভোট : মালদায় ধন্দে-ধোঁয়াশায় বাম-কংগ্রেস জোট
আসন্ন পৌর নির্বাচন ৷ তার আগে দলের প্রতীকে জেতা জনপ্রতিনিধিদের দলে ধরে রাখা যাবে কি না ধন্ধে জেলা বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷
CPI(M)-এর জেলা সম্পাদককে আসন্ন পৌরভোটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "আমরা এটাকে ঠিক জোট বলব না ৷ বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফা করে আমরা জেলার দুই পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই ৷ রাজ্যের বিভিন্ন পৌরসভাতেও এভাবেই বাম-কংগ্রেস লড়াই করবে ৷ মালদা জেলার দুই পৌরসভার ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের আসন বণ্টনের যে পুরানো রীতি রয়েছে, অর্থাৎ যেখানে যে জয়ী সেখানে তার অগ্রাধিকার, অথবা দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ৷ সেই নিয়ম আমরা মেনে চলি ৷ কংগ্রেসের নেতৃত্বও একই কথা বলেছেন বলে আমরা শুনেছি ৷ ফলে, ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পৌরসভায় বাম-কংগ্রেসের আসন বণ্টন নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না ৷ দু’-একটি আসন এদিক ওদিক হতে পারে ৷ আমরা ২০১৫ সালের নির্বাচনী ফলাফল দেখেই আসন বণ্টন করব ৷ এনিয়ে আলোচনা হবে ৷" অম্বরবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, এর আগে নিজেদের টিকিটে জয়ী বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ভোটে জেতার পর তৃণমূল কিংবা BJP-তে গিয়ে ভিড়েছেন ৷ পৌর নির্বাচনের টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রে কি তাঁরা এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন? উত্তরে তিনি বলেন, "এই গ্যারান্টি কেউই দিতে পারবে না ৷ কারণ এখন ব্যক্তিস্বার্থে দল পরিবর্তন হয় ৷ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দল বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভার টিকিট তাঁকে দেওয়া হল ৷ সবটাই এখন লেনদেনের পলিসি হয়ে যাচ্ছে ৷ ফলে কে দলে থাকবেন আর কে থাকবেন না, তা বামফ্রন্ট কিংবা কংগ্রেস, কেউই গ্যারান্টি দিতে পারবে না ৷ তবু আমরা মনে করি, আমরা যাঁরা ছোটো থেকে বাম দল করি, তাঁরা একটা নীতি ও আদর্শ মেনে চলি ৷ "
এদিকে জেলা কংগ্রেসের সহসভাপতি কালীসাধন রায়কে এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "প্রদেশ কংগ্রেসের নীতি, পৌর নির্বাচনে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট গড়তে হবে ৷ এই জেলায় সেই জোট গড়ার জন্য আমাদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে ৷ আমরা কোন কোন আসনে লড়তে চাই, কোন কোন আসনে লড়তে চাই না, তা বাম নেতৃত্বকে জানিয়েছি ৷ তাঁরাও আমাদের জানিয়েছেন, তাঁরা কোন কোন আসন আমাদের ছাড়তে পারবেন ৷ কিন্তু এর মধ্যে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে ৷ বামফ্রন্ট যে আসনগুলি আমাদের ছাড়তে চাইছে, সেগুলিতে আমরা লড়তে চাইছি না ৷ আবার আমরা যেসব আসনে লড়তে চাইছি, তার সবটা তারা ছাড়তে পারছে না ৷ তবে এনিয়ে আলোচনা চলছে ৷ দুই পক্ষই খানিকটা নমনীয় হয়েছে ৷ আশা করছি, সমস্যা মিটে যাবে ৷ তবে চূড়ান্ত এখনও কিছু হয়নি ৷ জোট প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে ৷ তবে শনি-রবিবারের মধ্যেই এনিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে বলে আশা করছি ৷" কালীসাধনবাবুও মেনে নেন, নিজেদের টিকিটে জেতা কাউন্সিলরদের দলে ধরে রাখতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা ৷ এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "এব্যাপারে কিছু বলা খুব মুশকিল ৷ সাধারণ কর্মীরা কিন্তু কেউ দলত্যাগ করেননি ৷ যাঁরা দলকে ব্যবহার করে খ্যাতি, প্রতিপত্তি, প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, তাঁরাই দলত্যাগ করেছেন ৷ আর লোভ দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে, পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করেও অনেককে দলত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৷ অনেকেই এসব উপেক্ষা করতে পারছেন না ৷ আসন্ন পৌরভোটে যাঁরা আমাদের টিকিটে নির্বাচিত হবেন, তাঁদের সবাইকে যে আমরা ধরে রাখতে পারব, তার গ্যারান্টি দেওয়ার দুঃসাহস আমার নেই ৷"