মালদা, 24 এপ্রিল : কিছুদিন আগেও লকডাউন শব্দটা অনেকের কাছেই অজানা ছিল ৷ কিন্তু এখন এর অর্থ বোধহয় প্রত্যেকেই বুঝেছেন ৷ কেউ ঘরে বসে, কেউ বা জীবিকার সঙ্গে সংগ্রাম করে ৷ বিশেষত যারা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ, তাদের লকডাউনের মানে নতুন করে আর বোঝাতে হবে না ৷ তাদের কেউ চুল কাটেন, আবার কেউ বা জুতো সেলাই করে সংসার চালান ৷ লকডাউনের বাজারে একমাসের বেশি সময় ধরে রোজগার বন্ধ ৷ বেঁচে থাকার রসদ জোগাচ্ছে সরকার কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি ৷ কিন্তু, সেই ত্রাণে আর ক’দিন চলে ৷ অভাবের সংসারে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুর-1 ব্লকের কনুয়া হাইস্কুলের ছাত্র সঞ্জয় রবিদাসেরও ৷ মেধাবী ছাত্র ৷ স্কুলে বরাবর প্রথম হয় ৷ এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ৷ লকডাউনের জন্য পরীক্ষাও হয়নি ৷ বাবার অবর্তমানে দুই ভাই জুতো সেলাই করে সংসার চালাত ৷ দাদা সেই কাজ ছেড়ে এখন ভিনরাজ্যের শ্রমিক ৷ কিন্তু লকডাউনে প্রায় বন্ধ সঞ্জয়ের জুতো সেলাইয়ের কাজ ৷ প্রতিদিন বাড়ির সামনে যন্ত্রপাতির বাক্স নিয়ে বসে, বেলা গড়ালে ফের বাক্স নিয়ে ঘরে ফিরে যায় ৷ বিষয়টি সামনে আসতেই পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ৷ পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে শাসকদলও ৷ প্রাক্তন মন্ত্রী, জেলার তৃণমূল নেত্রী সাবিত্রী মিত্রও তার পড়াশোনার সমস্ত খরচ নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন ৷
লকডাউনে দেশ এখন চরম আর্থিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন রিকশাওয়ালা, ক্ষৌরকার, চর্মকাররা ৷ প্রতিদিন রোজগার না করলে সংসার চলবে না ৷ কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতি তাদের সবাইকে জীবিকা সংগ্রামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর-1 ব্লকের কনুয়া গ্রামের সঞ্জয় রবিদাস ৷ স্থানীয় হাইস্কুলের মেধাবী ছাত্র ৷ এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে ৷ 16 বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন ৷ তিনি চর্মকার ছিলেন ৷ বাবার মৃত্যুর পর মা দিনমজুরি করে ছেলেদের বড় করেছেন ৷ সঞ্জয়রা দুই ভাই ৷ দাদা প্রথমদিকে জুতো সেলাই করতেন ৷ এখন ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন ৷ লকডাউনে তিনি ভিনরাজ্যেই আটকে রয়েছেন ৷ সঞ্জয় জানায়, “ক্লাস সেভেন থেকেই জুতো সেলাই করি ৷ দাদা ভিনরাজ্যের শ্রমিক ৷ তার যা উপার্জন হয়, তাতে তার নিজেরই কোনওরকমে চলে ৷ এখানে মূলত আমার উপার্জনেই সংসার চলে ৷ এই কাজ করেই মাধ্যমিকে 465 পেয়েছিলাম ৷ আমি স্কুলে বরাবর প্রথম হয়ে আসছি ৷ উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষাতেও প্রথম হয়েছিলাম ৷ স্কুল থেকে একটা স্কলারশিপ পাই ৷ একটি প্রকাশনী সংস্থার পক্ষ থেকে এককালীন 10 হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল ৷’’ সঞ্জয়ের পরিবার রেশন পায় ৷ কিন্তু চাল আর আটায় তো পেট ভরানো যায় না? তাই বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয় তাকে ৷ এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও সহায়তা পায়নি সে ৷ সঞ্জয়ের মায়ের বিধবা ভাতাও চালু হয়নি ৷ তার অভিযোগ, বারবার পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যকে বলা হয়েছে ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷ তাই সরকারের কাছে তার আবেদন, ‘‘আমার পরিবারের অন্ন সংস্থান ও নিজের উচ্চশিক্ষার জন্য যেন কোনও ব্যবস্থা করা হয় ৷ কারণ, লকডাউনে এখন আয় প্রায় শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে ৷”