মালদা, ৪ জুলাই : জলের তোড়ে ভেঙে গেল নদীবাঁধের বেশ কিছু অংশ ৷ ভাঙা বাঁধের অংশ দিয়ে হু হু করে গ্রামে নদীর জলঢুকতে শুরু করেছে ৷ জলের তলায় চলে যাচ্ছে ধান-ভুট্টার জমি ৷ এই পরিস্থিতিতে নাজেহাল গ্রামবাসী ৷ খবর পেয়ে গতকাল সন্ধে নাগাদ ভাঙা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন ব্লক ইঞ্জিনিয়ার ৷ কিন্তু এই অবস্থায় বাঁধ মেরামতি করা যাবে কি না তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবরকম চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন BDO ৷ ঘটনাটি গাজোলের সালাইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের মহাদেবপুর গ্রামের ৷
গাজোল ব্লক জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ৷ মহানন্দা ও টাঙন এই ব্লকের প্রধান দুই নদী ৷ সবচেয়ে বেশি আমন ধানের চাষ হয় এখানেই ৷ ইতিমধ্যে আমনের মরশুম শুরু হয়ে গেছে ৷ মাঠে রয়েছে পাট ও ভুট্টা ৷ এই অবস্থায় গত পরশু রাতে মহাদেবপুর গ্রামে টাঙনের বাঁধের প্রায় 30 ফুট অংশ জলের তোড়ে উড়ে যায় ৷ নদীর জল হু হু করে ঢুকতে শুরু করে মহাদেবপুরসহ জামডাঙা, শান্তিনগর, সূর্যনগর, পোলাডাঙা, কৃষ্ণনগর, গারাধুল প্রভৃতি গ্রামে ৷ একের পর এক চাষের জমি চলে যাচ্ছে জলের নিচে ৷ ফসল বাঁচাতে নিজেদের উদ্যোগে ভাঙা বাঁধের অংশে কিছু বালির বস্তা ফেলতে শুরু করেছিল গ্রামবাসীরা ৷ কিন্তু, এই মুহূর্তে টাঙনের জলস্তর অনেকটাই বেশি থাকায় সেই চেষ্টা সফল হয়নি ৷
গাজোল ব্লকসহ কৃষি অধিকর্তা বিক্রান্ত সাহা বলেন, “অতিবৃষ্টির জন্য উত্তরবঙ্গের সমস্ত নদীর জলস্তরই দ্রুত গতিতে বাড়ছে ৷ মালদা জেলার নদীগুলির জলস্তরও বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে৷ গত তিনদিনে টাঙনের জলস্তর বেড়েছে দুই মিটার৷ বেশ কিছু এলাকায় নদীবাঁধের ক্ষতি হয়েছে ৷ মহাদেবপুর এলাকায় বাঁধের কিছুটা অংশ জলের তোড়ে ভেঙে গেছে৷ তাতে চাষের বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে মহাদেবপুর, ইমামনগর, মহিশাল, পোলাডাঙা সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ৷ পরিস্থিতি নিয়ে BDO-র সঙ্গে কথা বলেছি ৷ আজ আমি ওই বাঁধ পরিদর্শনে যাচ্ছি ৷” BDO উষ্ণতা মোক্তান বলেন, “পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে ৷ গতকাল ওই বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করেছেন ইঞ্জিনিয়ার৷ আজই তাঁর রিপোর্ট দেওয়ার কথা৷ রিপোর্ট পাওয়ার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷”
এদিকে গ্রামের বাসিন্দা সুদেব মাহাত বলেন, “ যেভাবে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে টাঙনের জল ঢুকছে, তাতে অল্প সময়ের মধ্যেই বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৷ এখন মাঠে পাট ও ভুট্টা রয়েছে ৷ অনেকে আমন ধানের চারা রোয়ার কাজ শেষ করেছিল ৷ অনেক জমিতে সেই কাজ চলছে ৷ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চাষের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ৷ এমনিতেই এবার কোরোনার জন্য গ্রামের মানুষের হাতে টাকা-পয়সা কিছু নেই ৷ ফসল চাষ করে সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল ৷ এই অবস্থায় বন্যা দেখা দিলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে ৷ প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, গরিব মানুষকে বাঁচাতে দ্রুত বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করা হোক৷”
একই বক্তব্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে গাজোলের বিধায়ক দীপালি বিশ্বাসেরও ৷ তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন ৷