পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

মালদায় লিচুর রেকর্ড ফলন, লকডাউনে ক্ষতির আশঙ্কা চাষিদের

লিচু পেকে গেলে 15 দিনের মধ্যে তা বাজারে বিক্রি করতে হয় ৷ লকডাউনে সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা ৷ পাশাপাশি বরাত না পেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা ৷

litchi farming in malda
মালদায় লিচু চাষ

By

Published : May 26, 2020, 2:44 PM IST

Updated : May 27, 2020, 7:15 PM IST

মালদা, 26 মে : আম চাষে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও লিচুর ফলন দেখে হাসি ফুটেছিল চাষিদের ৷ এবার এই জেলায় লিচুর রেকর্ড ফলন হয়েছে ৷ লিচু পাকার সময় এগিয়ে এসেছে ৷ কিন্তু এখনও ক্রেতা পাচ্ছেন না চাষিরা ৷ লকডাউনে বন্ধ রয়েছে বাজার ৷ গাছ থেকে লিচু নামিয়ে আনার পর বেশিদিন রাখা যায় না ৷ এই পরিস্থিতিতে চাষিরা লিচুর পরিচর্যা করা বন্ধ করে দিয়েছেন ৷ বিপুল ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা ৷ যদিও এখনই কাউকে হতাশ হতে বারণ করছে জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর ৷

মালদা জেলা মূলত আমচাষের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও এখানকার লিচু রাজ্যের ও দেশের অন্যত্র রপ্তানি করা হয় ৷ মালদার লিচুর গুণমান যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে ৷ গোটা জেলায় প্রায় 1500 হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়ে থাকে ৷ এই চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে হাজার পাঁচেক পরিবার ৷ মালদা জেলার মধ্যে কালিয়াচকের তিনটি ব্লকেই সবচেয়ে বেশি লিচু উৎপাদিত হয় ৷ জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর জানাচ্ছে, এই জেলায় দুই প্রজাতির লিচুর উৎপাদন হয় ৷ গুটি ও বোম্বাই ৷ গুটি লিচু দ্রুত পেকে যায় ৷ জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে এই লিচু বাজারে চলে আসে ৷ জামাইষষ্ঠীতে গুটি লিচুর বড় বাজার রয়েছে ৷ এর লিচুর কয়েকদিন পরেই বাজারে আসে বোম্বাই লিচু ৷ এই লিচুর স্বাদ বেশি ভালো ৷ সাইজেও বড় ৷ বীজ খুব ছোট ৷ বোম্বাই লিচু রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও ভিনরাজ্যে পাঠানো হয় ৷

লিচু চাষে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা, এই ফল খুব বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না ৷ গাছ থেকে পাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিচু বাজারজাত করতে হয় ৷ নাহলে লিচু শুকিয়ে যায়৷ ফলে রং ধরার পর গাছ থেকে লিচু পেড়ে বাজারজাত করার ক্ষেত্রে 15 দিনও সময় পাওয়া যায় না ৷ এই সময়ের মধ্যেই বাগান খালি করে ফেলতে হবে ৷ তাই ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা ক্রেতার সঙ্গে চুক্তি করে রাখেন ৷ কিন্তু এবার একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গেও ভিনজেলা কিংবা রাজ্যের ফল বিক্রেতাদের তেমন কোনও চুক্তি হয়নি ৷ এতেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীদের কপালে ৷ কালিয়াচকের চাঁদপুর গ্রামের লিচুচাষি মহম্মদ সামিউল শেখ বলেন, “কালিয়াচকের তিনটি ব্লকেই সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয়ে থাকে ৷ এবার আম প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে লিচুর ফলন বেশ ভালো ৷ কিন্তু লকডাউনের জন্য লিচু বিক্রি হবে কিনা, তা নিয়ে খুব চিন্তায় রয়েছি ৷ এখনও পর্যন্ত জেলার ব্যবসায়ীরা আগ্রহ না দেখানোয় চাষিরা লিচুর পরিচর্যাও ঠিকমতো করছে না ৷ লকডাউন যদি না ওঠে, এখানকার লিচু যদি বাইরের রাজ্যে যেতে না পারে, তাহলে লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীরা পথে বসবে৷’’

অন্যদিকে লিচু পাকার সময় হয়ে এসেছে ৷ লিচু পেকে গেলে বেশিদিন রাখা যাবে না ৷ চাষিদের চিন্তা, লিচু যদি বিক্রি না হয়, তবে চাষের খরচ ব্যর্থ ৷ তাই অনেকে লিচুর পরিচর্যা করাও ছেড়ে দিয়েছেন ৷ মহম্মদ সামিউল শেখ বলেন, ‘‘এবার যা ফলন হয়েছে, তাতে এক বিঘার বাগান থেকে 50-60 হাজার লিচু উৎপাদন হবে ৷ এক হাজার লিচুর দাম আমরা 800 থেকে 900 টাকা পাই ৷ এখানকার লিচু মুম্বই পর্যন্ত যায় ৷ তাই আমাদের মতো লিচুচাষিদের জন্য সরকার যাতে কিছু ব্যবস্থা করে , তার আর্জি জানাচ্ছি ৷” জেলার লিচু জেলা ও ভিনরাজ্যে পাঠানোর কাজ করে মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ৷ সংগঠনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা এই প্রসঙ্গে বলেন, “এবার জেলার প্রায় 1500 হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে৷ প্রায় 15 হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৷ রাজ্য এবং ভিনরাজ্যে এই জেলার লিচুর সুনাম রয়েছে ৷ কিন্তু এবছর লকডাউনের জন্য চাষিরা সেভাবে লিচুর পরিচর্যা করতে পারেননি ৷’’

জামাইষষ্ঠীর সময় বাজারে গুটি লিচু চলে আসে ৷ তার অনেক আগেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও ভিনরাজ্য থেকে লিচুর বরাত দেওয়া হয় ৷ কিন্তু এবার সেই বরাত এখনও পাওয়া যায়নি ৷ এই নিয়ে চাষি থেকে ব্যবসায়ী, প্রত্যেকেই খুব চিন্তিত ৷ এই সময় লিচুতে অনুখাদ্য ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করা প্রয়োজন ৷ কিন্তু এবার ব্যবসার তেমন কোনও ভবিষ্যৎ না দেখে চাষিরা পরিচর্যা করা ছেড়ে দিয়েছে ৷ বরাত না পেলে এবছর ব্যবসা নিশ্চিতভাবে মার খাবে বলে মত উজ্জ্বলবাবুর ৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘জেলার লিচু বাজারজাত করতে ইতিমধ্যে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি ৷ যাতে এই পরিস্থিতিতে মালদা ও মুর্শিদাবাদের লিচুচাষিদের জন্য আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করা হয় ৷ কারণ, লিচু একদমই সংরক্ষণ করা যায় না ৷ এখনও পর্যন্ত সেই প্রযুক্তি আসেনি ৷’’ গাছ থেকে লিচু পাড়ার পর সেদিনই ফল বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ লিচু পাকতে শুরু করার পর দু’সপ্তাহের মধ্যে বাগান খালি করতে হয় ৷ এর মধ্যে ফল বাজারজাত না করতে পারলে গাছের লিচু গাছেই থেকে যায় ৷ কিন্তু এবার সেটা করা যাবে না বলে মোটামুটি নিশ্চিত মালদার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা ৷”

লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীদের সংকট নিয়ে জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষ্ণেন্দু নন্দন বলেন, “এবার জেলায় লিচুর খুব ভালো উৎপাদন হবে বলে আমাদের ধারণা ৷ মালদার লিচু ভিনরাজ্যে খুব বেশি যায় না ৷ জেলা ও রাজ্যের বাজারেই বেশিরভাগ বিক্রি হয় ৷ মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার লিচু যখন পাকে, তখন দক্ষিণবঙ্গের লিচু শেষ হয়ে যায় ৷ কারণ, লিচু সংরক্ষণ করা যায় না ৷ তাই এই নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই ৷ লিচুর বাজার মাত্র 10 থেকে 12 দিনের ৷ এবার লকডাউন থাকলেও ফল বাজারজাত করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই ৷’’ লকডাউন এখন অনেকটা শিথিল করা হয়েছে ৷ পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে কোনও বাধা নেই ৷ কিন্তু কোরোনার ভয়ে মানুষ খুব একটা বাইরে বের হচ্ছে না ৷ সেক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন কৃষ্ণেন্দুবাবু ৷ বৃষ্টি হলে লিচুর স্বাদ ভালো হয় ৷ আবার বেশি বৃষ্টি হলে বোম্বাই লিচুর ক্ষেত্রে রোগ পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে ৷ এবার তেমন কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি ৷ তাই চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করছেন তিনি ৷

লকডাউনে ক্ষতির আশঙ্কা মালদার লিচুচাষিদের
Last Updated : May 27, 2020, 7:15 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details