পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

Jute Cultivation : পাটের দাম পাচ্ছেন না চাষিরা, সরকারি নিস্পৃহতায় পকেট ভরছে ফড়েদের - Jute Cultivation in Malda

চাষের খরচই উঠছে না মালদা পাটচাষিদের ৷ ফড়েদের কাছ থেকে যা দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে বিক্রি করতে গেলে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ৷ এই অবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ চাইছেন কৃষকরা ৷

মালদায় সমস্যায় পাটচাষিরা
ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না ৷ তাই সরকারি হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন মালদার পাটচাষিরা ৷

By

Published : Sep 4, 2021, 6:43 AM IST

মালদা, 2 সেপ্টেম্বর : করোনার ধাক্কায় টলমলে দেশের অর্থনীতি । অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে উদ্ধার করতে পারে একমাত্র কৃষিই । বাংলায় এখন পাটের মরসুম । অনুকূল আবহাওয়ায় পাটের উৎপাদনও বেশ ভাল । গত মরসুমে পাটের ভাল দাম থাকায় মালদার চাষিরা এবার ব্যাপক হারে সোনালি তন্তুর চাষ করেছেন । কিন্তু উৎপাদিত পাট বিক্রি করতেই মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে তাঁদের । এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত মূল্যে সরকারিভাবে পাট কেনা শুরু হয়নি । কবে তা শুরু হবে, জানে না কেউ । এই পরিস্থিতিতে পোয়া বারো ফড়েদের । গরিব চাষিদের কাছ থেকে নামমাত্র দামে পাট কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা । অভাবের তাড়নায় তাঁদের কাছে পাট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা । জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, পাটচাষিদের এই সমস্যা কয়েক দশকের । বিষয়টি দফতরের তরফে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে ।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদা জেলার 15টি ব্লকেই কমবেশি পাট চাষ করা হয় । তার মধ্যে উত্তর মালদার ব্লকগুলিতে পাটের চাষ সর্বাধিক । এবার জেলায় 32 হাজার 100 হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে । গতবারের তুলনায় প্রায় আট হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে । অনুকূল আবহাওয়া থাকলে সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে 2.5 মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয় । কিন্তু এবার পাট চাষের জন্য খুব ভাল আবহাওয়া ছিল । সময়মতো ভাল বৃষ্টিও হয়েছে । তাই এবার হেক্টর প্রতি তিন কুইন্টাল পাট উৎপাদন হওয়ার আশা করা হচ্ছে । বর্তমানে পাট পচানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে । বেশিরভাগ জমির পাটই ঘরে তুলে ফেলেছেন চাষিরা ।

শেষ পর্যায়ে চাষিরা দ্বিবিধ সমস্যায় পড়েছেন । প্রথমত, মরসুমের একেবারে শেষে পাট পচানোর উপযুক্ত জলাশয় পাচ্ছেন না তাঁরা । ফলে জমি থেকে পাট অনেক দূরে নিয়ে যেতে হচ্ছে । এতে তাঁদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে । পাট পচানো কিংবা পাট গাছ থেকে তন্তু বের করার শ্রমিকেরও অভাব দেখা দিয়েছে । সবচেয়ে বড় সমস্যা, উৎপাদিত পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তাঁরা । করোনার ধাক্কায় বেশিরভাগ চাষির আর্থিক অবস্থা বেহাল । ব্যাঙ্ক অথবা মহাজনি ঋণ নিয়ে পাট চাষ করেছিলেন । প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষের খরচ 12 থেকে 15 হাজার টাকা । ভাল ফলন হলেও বিঘা প্রতি তিন কুইন্টালের বেশি উৎপাদন হয় না । এই অবস্থায় প্রতি কুইন্টাল পাট সাত থেকে আট হাজারে বিক্রি করতে না পারলে তাঁরা চরম সমস্যায় পড়বেন ।

মহম্মদ রিয়াজুল হক বলেন, "এবার পাটের ফলন খুব ভাল । করোনার জন্য আমার পাট চাষ করতে কোনও অসুবিধে হয়নি । কিন্তু এখন পাট পচানোর জায়গা আর প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না । শ্রমিকের মজুরি অনেক বেড়ে গিয়েছে । এদিকে পাটের দাম পাওয়া যাচ্ছে না । আমাদের শৈলপুরে পাট পচানোর জলাশয় নেই । মহানন্দায় পাট পচাতে গেলে স্রোতে ভেসে যাচ্ছে । তাই পাঁচ কিলোমিটার দূরে সাতঘরিয়া গ্রামে এনে পাট পচাতে হয়েছে । এতে খরচটাও বেড়ে গিয়েছে । এদিকে এখন পাটের দাম যাচ্ছে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা কুইন্টাল । এই দামে পাট বিক্রি করতে গেলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে । এক বিঘা পাট চাষ করতে সব মিলিয়ে 15-16 হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় । খুব ভাল ফলন হলেও বিঘা প্রতি তিন কুইন্টাল উৎপাদন হয় । ফলে এই দামে পাট বিক্রি করলে খরচই উঠবে না । সরকার এখনও পাট কেনা শুরু করেনি । ফড়েরাই পাট কিনছে । আমরা চাইছি, সরকার আমাদের কাছ থেকে পাট কিনুক । ফসলের সঠিক দাম না পেলে চাষিরা মরে যাবে । আত্মহত্যা করবে ।"

ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, তাই সরকারি হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন মালদার পাটচাষিরা

এনামুল হক বলেন, "এবার আমাদের এলাকায় পাটের ফলন খুব ভাল হয়নি । আড়াই কুইন্টালের বেশি ফলন হয়নি । এদিকে পাটের দামই পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকাররা পাট কিনতে চাইছে না । কারণ তাঁরাও পাট বিক্রি করতে পারছেন না । তবু আমরা তাঁদের কাছে পাট বিক্রি করতে চাইলে তাঁরা প্রতি কুইন্টালে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার বেশি দাম দিতে চাইছে না । আমরা পাট নিয়ে কোথায় যাব, তাও বুঝতে পারছি না । পাটের আঁশ ছাড়ানোর শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না । পাট ছাড়ানোর জন্য সরকারি কোনও ব্যবস্থা নেই । আমি তিন বিঘা পাট চাষ করেছি । পাট জমি থেকে উঠে গিয়েছে । বিক্রি করতে পারিনি । কী করব জানি না । সরকার পাট কিনছে না । ফড়ে ছাড়া আমাদের পাট বিক্রির জায়গা নেই । এদিকে চাষের খরচ অত্যাধিক বেড়ে গিয়েছে । আমরা চাইছি, সরকার পাটের সঠিক দাম নির্ধারণ করুক । এভাবে পাট চাষই করা যাবে না ।"

আরও পড়ুন : টানা বৃষ্টিতে বীরভূমে ক্ষতিগ্রস্ত বাদাম চাষ, মাথায় হাত চাষিদের

পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত পাটচাষি মহম্মদ সহিদুর রহমান । তিনি বলেন, "এবার অনেক চাষি পাট চাষ করেছে । কিন্তু পাটের দাম নেই । সরকার পাট কিনছে না । পাটের নায্যমূল্যও নির্ধারণ করা হয়নি । ফড়েরাই পাটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে । তারা আমাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে মজুতদারদের কাছে বিক্রি করছে । দু'মাস আগে শুনেছিলাম, পাটের দাম কুইন্টাল প্রতি আট হাজার টাকা । এখন সেই পাট বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কুইন্টাল তিন থেকে চার হাজার টাকা দরে । এই জেলায় প্রথম তিন গ্রেডের পাট উৎপাদন হয় না । চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের পাট উৎপাদিত হয় । এই সমস্যা মেটাতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে । প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্যাম্প করে চাষিদের কাছ থেকে নির্ধারিত সহায়ক মূল্যে পাট কিনতে হবে । নইলে চাষিদের লাভ হবে না । আমাদের এখান থেকে মালদা শহরের আমবাজারে সরকারি ক্যাম্পে বিক্রির জন্য পাট নিয়ে যেতে হয় । তাতে প্রতি কুইন্টালে দেড় থেকে দু'শো টাকা খরচ পড়ে । সেই হ্যাপা থেকে বাঁচতে চাষিরা কম দামে ফড়েদের কাছে পাট বিক্রি করতে বাধ্য হন । এতে লাভের গুড় ফড়েরাই খেয়ে যায় । চাষির অবস্থার বদল হয় না । চাষের খরচ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে । পাটের দাম আর বাড়েনি ।"

আরও পড়ুন : Dragon Fruit Cultivation : অচেনা ড্রাগন চাষে লাভ কই, সরকারি সাহায্য চান চাষিরা

জেলা কৃষি দফতরের সহকারি ডিরেক্টর স্নেহাশিস কুইলা বলেন, "গতবার পাটের দাম ভাল থাকায় এবার জেলায় পাটের চাষ অনেক বেশি হয়েছে । গতবার জেলায় 24 হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল । এবার প্রায় 32 হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে । এবার প্রাক বর্ষার বৃষ্টি খুব ভাল হয়েছিল, যা পাটচাষে খুব উপকারী । আশা করছি, এবার পাটের উৎপাদন খুব ভাল হবে । এখানে চতুর্থ ও পঞ্চম গ্রেডের পাট বেশি উৎপাদিত হয় । শেষ মরশুমে পাট পচাতে চাষিদের একটু সমস্যা হচ্ছে । নদীগুলিতে জলস্ফীতি হওয়ায় সেখানে পাট পচানো যাচ্ছে না । কিছুদিন আগে অনেক জায়গায় জলের সমস্যাও দেখা গিয়েছিল । সাধারণত কেন্দ্রীয় সংস্থা, জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া সরকারিভাবে চাষিদের কাছ থেকে পাট কেনে । স্থানীয়স্তরেও পাটের কেনাবেচা হয় । এবার সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা শুরু হয়নি বলে জেনেছি । এটা আসলে কয়েক দশকের সমস্যা । চাষিদের দাবির বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব ।"

আরও পড়ুন : Human Puppet Dance : করোনায় টলমল মানব পুতুল নাচ, মৃত্যুপথে মালদার লোকশিল্প

ABOUT THE AUTHOR

...view details