মালদা, 11 অক্টোবর : তাল কাটল প্রথম সভাতেই ৷ হাজার কর্মীর সামনে গোষ্ঠীকোন্দলের প্রকাশ ঘটল শাসকদলের ৷ সবার সামনেই নাম না করে দুই গোষ্ঠী একে অন্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য ও পালটা মন্তব্য করে ৷ যা দেখে মঞ্চে উপস্থিত দলের জেলা সভানেত্রী, চেয়ারম্যান সহ অনেকেই অস্বস্তিতে পড়ে যান ৷ গতকাল ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের জহুরাতলা এলাকায় তৃণমূলের সাংগঠনিক সভায় এমনই দেখা গেল ৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে মালদা জেলায় তৃণমূলের প্রথম বিধানসভা কেন্দ্রের বুথভিত্তিক সম্মেলন শাসকদলের পক্ষে খুব ভালো বার্তা দিল না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ সেকথা মনে করছে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরাও ৷
একুশের ভোটের আগে রাজ্যে গেরুয়া শিবির যে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তা বিলক্ষণ বুঝেছে ঘাসফুল শিবির ৷ দু’দিন আগে BJP-র নবান্ন অভিযানে সরকার ও পুলিশের ভূমিকা সেই বিষয়টিকে আরও উসকে দিয়েছে ৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে BJP যে বড় কাঁটা, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি শাসকদলের ভোট পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের ৷ তিনি আরও বুঝেছেন, এই পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও সমস্যায় ফেলতে চলেছে শাসকদলকে ৷ তাই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে পুজোর আগেই রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় দলের সাংগঠনিক বৈঠক শেষ করার পরামর্শ দেন তিনি ৷ তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী নির্দেশ আসে এই জেলাতেও ৷ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব 10 থেকে 18 অক্টোবরের মধ্যে মালদার 12 টি বিধানসভা কেন্দ্রে এই কর্মসূচি শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ গতকাল প্রথম বৈঠক ছিল ইংরেজবাজারে ৷ বৈঠকের মূল আয়োজক ছিলেন নীহাররঞ্জন ঘোষ ও নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ৷ সভায় দলীয় কর্মীদের উপস্থিতি ছিল বেশ ভালোই ৷
মালদায় তৃণমূলের সাংগঠনিক সভা আরও পড়ুন : ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল
বৈঠকের শুরুতেই জেলা তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র সুমালা আগরওয়ালা বলেন, “এখানে বেশ কিছু নেতা কাজের থেকে নিজেকে তুলে ধরতেই বেশি পছন্দ করেন ৷ এসব মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেন না ৷ আবার এমন অনেকে আছেন, যাঁরা ভাবছেন, টিকিট পেলে দল করবেন, না পেলে বসে থাকবেন ৷ এসব নেতার জন্য ভোটে দলকে ভুগতে হবে ৷ তাই এই নেতাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে ৷” সভায় দেখা যায়নি জেলার বিতর্কিত তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরিকে ৷ তবে ছিলেন তাঁর স্নেহধন্য, জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস ৷ বক্তব্যে বোমা ফাটান তিনিও ৷ বলেন, “এই কেন্দ্রে মোট 266টি বুথ রয়েছে ৷ তার মধ্যে 150 টি বুথ মালদা শহরের, বাকি 116 টি গ্রামীণ এলাকার ৷ মালদা শহর ইতিমধ্যেই আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ৷ শহরে কোনও কাজ করতে ব্যর্থ পৌর কর্তৃপক্ষ ৷ এতে আমাদের মতো কো-অর্ডিনেটরদের উপর চাপ বাড়ছে ৷ মানুষের জন্য কাজ না করলে আমরা এই কেন্দ্রে ভালো ফল করতে পারব না ৷”
প্রসেনজিৎবাবুর মন্তব্য যে নীহারবাবুকে উদ্দেশ্য করে, তা বুঝতে কারও অসুবিধে হয়নি । পালটা নাম না করে কৃষ্ণেন্দুবাবুকেও একহাত নেন দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অম্লান ভাদুড়ি ৷ বলেন, “অনেক নেতা দলে থেকে দলের সমালোচনা করেন ৷ যেখানে সেখানে দলবিরোধী কথা বলেন ৷ তাঁদের বলতে চাই, কাজ না করলে ঘরে শুয়ে থাকুন ৷ আমাদের কাজ করতে দিন ৷"
সব দেখেশুনে প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে যান জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর, চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন-সহ আরও অনেকে ৷ মৌসম বলেন, “সব ভুলে ভোটের আগে সবাইকে একজোট হতে হবে ৷ জেলার 12টি আসনই আমাদের জিততে হবে ৷ তার জন্য সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে ৷” অন্যদিকে মোয়াজ্জেম সাহেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এই জেলাকে প্রচুর উপহার দিয়েছেন ৷ কিন্তু আমরা এখনও তাঁকে কোনও উপহার দিতে পারিনি ৷ এবার আমরা আরও বেশি শক্তিশালী ৷ তাই এবার আমরা নেত্রীকে আট থেকে দশজন বিধায়ক উপহার দেব ৷”