পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

গৌড়ের 'ইতিহাস' সংগ্রহ করছেন চা-কোল্ড ড্রিঙ্কস বিক্রেতা - গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

ইতিহাসপ্রসিদ্ধ গৌড়ের একটি সৌধের সামনে তাঁর ছোটোখাট দোকান৷ বৈদ্যনাথবাবু বলেন, "এতদিন ধরে খুঁজে খুঁজে প্রাচীনকালের অনেক জিনিসই পেয়েছি৷ একসময় এই ঘরটা সেই সব প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনে প্রায় ভরতি হয়ে গিয়েছিল ৷ কয়েক বছর আগে জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় দোকান সিল করে 10 পেটি জিনিস নিয়ে চলে যান ৷ কিন্তু তাতে আমার ইতিহাস খোঁজা বন্ধ হয়ে যায়নি ৷ ফের আমি গৌড়ের কোনা কোনা খুঁজে 7-8 পেটি প্রাচীন জিনিস সংগ্রহ করেছি ৷ এখানে কোনও পুকুর খোঁড়া হলে কিংবা জমি চাষ করার সময় এখনও প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শনের দেখা মেলে ৷ বৃষ্টি হলে প্রাচীনকালের তৈরি মৃৎপাত্র থেকে কাদা ধুয়ে নেমে যায় ৷ আমার চোখে পড়লে সেসব জিনিস নিয়ে আসি ৷ এভাবেই আমি সব সংগ্রহ করেছি ৷"

গৌড়

By

Published : Sep 12, 2019, 10:38 PM IST

মালদা, ১১ সেপ্টেম্বর : মালদার গৌড়ের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ মণ্ডল । পেশায় তিনি দোকানদার ৷ প্রত্নতত্ত্ব জিনিস সংগ্রহ করাই তাঁর নেশা ৷ প্রায় 19 বছর ধরে জেলার প্রাচীন ইতিহাসের খোঁজে ঘুরে বেড়ান ঐতিহাসিক গৌড়ের আনাচেকানাচে৷ এতদিন ধরে সেই কাজ করতে করতে নিজের দোকানটাকে একটি আস্ত সংগ্রহশালায় পরিণত করে ফেলেছেন তিনি । বহুদিনের ইচ্ছে যে তাঁর এই সংগ্রহ দিয়ে তৈরি করা হোক একটি সংগ্রহশালা ৷ তার জন্য তিনি জেলা প্রশাসন সহ নবান্নতে চিঠি দিয়েছেন ৷ যোগাযোগ করেছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও ৷ তবে আক্ষেপ, কোথাও থেকে তিনি কোনও উদ্যোগ দেখতে পাননি ৷ তাই তাঁর বদ্ধ দোকানঘরেই আটকে রয়েছে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ৷

ইতিহাসপ্রসিদ্ধ গৌড়ের একটি সৌধের সামনে তাঁর ছোটোখাট দোকান৷ বৈদ্যনাথবাবু বলেন, "এতদিন ধরে খুঁজে খুঁজে প্রাচীনকালের অনেক জিনিসই পেয়েছি৷ একসময় এই ঘরটা সেই সব প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনে প্রায় ভরতি হয়ে গিয়েছিল ৷ কয়েক বছর আগে জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় দোকান সিল করে 10 পেটি জিনিস নিয়ে চলে যান ৷ কিন্তু তাতে আমার ইতিহাস খোঁজা বন্ধ হয়ে যায়নি ৷ ফের আমি গৌড়ের কোনা কোনা খুঁজে 7-8 পেটি প্রাচীন জিনিস সংগ্রহ করেছি ৷ এখানে কোনও পুকুর খোঁড়া হলে কিংবা জমি চাষ করার সময় এখনও প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শনের দেখা মেলে ৷ বৃষ্টি হলে প্রাচীনকালের তৈরি মৃৎপাত্র থেকে কাদা ধুয়ে নেমে যায় ৷ আমার চোখে পড়লে সেসব জিনিস নিয়ে আসি ৷ তবে শুধু মাটির জিনিসই নয়, তার সঙ্গে পাথর, লোহা, এমনকি প্রাচীনকালের তামার মুদ্রাও আমি এভাবে সংগ্রহ করেছি ৷ গৌড়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা আসে ৷ তারা ইতিহাসকে খুঁজতে, দেখতে, বুঝতেই এখানে আসে ৷ তাই আমি চাই, আমার সংগ্রহ করা জিনিস দিয়ে গৌড়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক৷ তবে আমার ইচ্ছে থাকলেও আদপে কী হবে, তা আমি বলতে পারব না ৷ আমার ইচ্ছের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসন, এমনকী নবান্নতেও চিঠি দিয়েছি ৷ কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি৷ উত্তর না পেয়ে আমি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করি ৷

নিজের সংগ্রহের কাহিনি বলতে বলতে তিনি দুঃখ করে এও বলেন যে, "আমার এক সময়ে মনে হয়েছিল, এখানে পড়ে থেকে এসব জিনিস নষ্ট হয়ে যেতে পারে ৷ তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেসব দিয়ে দিলে ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার কাজে সুবিধে হবে ৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আমার আবেদনে সেভাবে এখনও সাড়া দেয়নি ৷ তবে এসব জিনিস মহদিপুরে রাখা হলে কেউ তা দেখতে যাবে না ৷ তাই আমার ইচ্ছে, হয় গৌড় কিংবা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শনগুলি রাখা হোক ৷"

বিষয়টি জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যকে জানানো হলে তিনি বলেন, "এমন কোনও চিঠি আমি পাইনি ৷ ETV ভারতের মাধ্যমেই বিষয়টি সম্বন্ধে প্রথম জানলাম ৷ জেলা প্রশাসন অবশ্যই ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করবে ৷ আইন অনুযায়ী ঐতিহাসিক সামগ্রী কোনও ব্যক্তি নিজের কাছে রাখতে পারেন না ৷ তবে আশাজনক যে এক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই সেসব জিনিস প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে চাইছেন ৷ এটা সত্যিই তাঁর ভালো উদ্যোগ ৷ গৌড়ের কাছাকাছি কোনও জায়গায় আমরা নিশ্চয়ই একটি প্রদর্শশালা নির্মাণের চেষ্টা করতে পারি ৷ ওই ব্যক্তির কাছে আমার আবেদন, তিনি যেন তাঁর সংগ্রহ প্রশাসনের হাতে তুলে দেন ৷ আমরা সেসব প্রদর্শনশালায় রাখার অবশ্যই চেষ্টা করব ৷ তিনি আরও একবার আমাদের চিঠি পাঠাতে পারলে ভালো হয় ৷"

দেখুন ভিডিয়োয়

অন্যদিকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন বলেন, "বিষয়টি আমি আজই প্রথম শুনলাম ৷ গৌড় ইতিহাসপ্রসিদ্ধ স্থান ৷ গোটা দেশ, এমন কী পৃথিবী জুড়ে এর খ্যাতি রয়েছে৷ আমাদের নিজস্ব একটি মিউজ়িয়াম রয়েছে ৷ সেখানে আমরা অনেক পুরোনো জিনিস সংগ্রহ করেছি ৷ সেখানে যদি ওই ব্যক্তি নিজের সংগ্রহ করা জিনিস রাখতে চান, সেই প্রস্তাব আমাদের কাছে আসলে আমরা নিশ্চয়ই তা খতিয়ে দেখব ৷ আমাদের কোনও অসুবিধে হবে না ৷ তবে বিষয়টি নিয়ে নিয়মমাফিক এগোতে হবে ৷ প্রশাসন সহায়তা করলে, আমাদের জায়গা দিলে আমরাও গৌড়ে একটি প্রদর্শনশালা তৈরি করতে পারি ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details