মালদা, 28 নভেম্বর : শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন ৷ অবশ্য 10 দিন আগেই তার আভাস পাওয়া গেছিল ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকর্মীদের লাগাতার কর্মবিরতি চলাকালীন তাঁর পদত্যাগ চাপে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৷ আজ সন্ধেয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অভিযোগ করেন, তাঁকেও পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষাকর্মীরা ৷ যদিও রেজিস্ট্রারের এই অভিযোগ মানতে নারাজ আন্দোলনকারীরা ৷ তাঁরা জানিয়েছেন, এই ইশুতে তাঁরা কেউ রেজিস্ট্রারকে পদত্যাগ করার চাপ দেননি ৷ নিজেদের দাবিতে তাঁরা এই লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন ৷ তবে আজ রেজিস্ট্রারের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারীরা ৷
অচলাবস্থার মধ্যেই গতকাল কলকাতায় উচ্চশিক্ষা দপ্তরে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন ৷ মেয়াদ শেষ হওয়ার দু’বছরের মধ্যেই তাঁর ইস্তফা জেলার শিক্ষামহলে প্রশ্ন তুললেও রাজনৈতিক মহল বলছে, এটাই ভবিতব্য ছিল ৷ শাসকদলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি ঠিক হয়ে গেছিল 19 নভেম্বর ৷ সেদিনই জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ প্রশাসনিক সভার আগে তিনি কিছুক্ষণের জন্য জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন ৷ তাঁর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভরতি নিয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় ৷ সব শুনে সেখান থেকেই শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ স্বাগতবাবুকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি ৷ প্রশাসনিক সভা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী ফোন করে উপাচার্যকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দেন ৷ কিন্তু উপাচার্য পার্থবাবুকে বলেন, এই মুহূর্তে তিনি কী ভাবে পদত্যাগ করবেন বুঝতে পারছেন না ৷ সূত্রটি জানাচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যকে এর জন্য সময় নিতে বলেন ৷ এরই প্রভাব পড়ে প্রশাসনিক সভায় ৷ ছাত্র ভরতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলতেই নিজের সাফাইয়ে বক্তব্য পেশ করেন উপাচার্য ৷
সেই সভার পর সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের 21তম এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের সভায় যোগ দিতে কলকাতায় যান উপাচার্য ৷ বৈঠকের পর তিনি মালদা ফিরে আসেননি ৷ শেষ পর্যন্ত গতকাল তিনি নিজের পদত্যাগপত্র উচ্চশিক্ষা দপ্তরে পাঠিয়ে দেন ৷ আজ তিনি বলেন, পারিবারিক কারণেই তিনি উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন ৷ জানা যাচ্ছে, তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷ নতুন উপাচার্যের খোঁজও শুরু হয়ে গেছে ৷ যদিও আজ এনিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য ফোন করা হলেও ধরেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷
এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগপত্র জমার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষাকর্মীরা নিজেদের দাবি পূরণে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দ্বারস্থ হন ৷ আজই কলকাতা থেকে জেলায় ফিরেছেন রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরি ৷ ETV ভারতকে তিনি বলেন, “শিক্ষাকর্মীদের প্রথম দাবি ছিল, তাঁদের স্থায়ীকরণ করতে হবে ৷ EC-র নির্দেশ অনুযায়ী আমি 20 নভেম্বর 122 জন অস্থায়ী কর্মীর সমস্ত বিবরণ দিয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে ই-মেইল করি ৷ 25 নভেম্বর আমি উচ্চশিক্ষা দপ্তরে গিয়ে এই সংক্রান্ত নথি জমা দিয়েছি ৷ 23 নভেম্বর এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকেও বিষয়টি পেশ করা হয়েছে ৷ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আমাকে এবং উপাচার্যকে বলা হয়, এই সমস্যা সমাধানে আমরা যেন যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করি ৷ 25 নভেম্বর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সঙ্গে স্পেশাল সেক্রেটারির সঙ্গেও এনিয়ে আমার কথা হয়েছে ৷ তাঁরা আমাকে বিষয়টি মন্ত্রীকে জানানোর পরামর্শ দেন ৷ আমি শিক্ষামন্ত্রীকেও বিষয়টি জানাই ৷ শুধু প্রশাসনিকভাবেই নয়, এই সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিকভাবেও ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ কারণ, EC এই সমস্যা সমাধান করতে পারেনি ৷ ফলে রেজিস্ট্রার নিজে কিছুতেই শিক্ষাকর্মীদের সব দাবি পূরণ করতে পারবেন না ৷ আমার পক্ষে এই শিক্ষাকর্মীদের স্থায়ীকরণ করে দেওয়া সম্ভব নয় ৷ আন্দোলনকারীদের মূলত তিনটি দাবি রয়েছে ৷ তাঁরা বলছেন, হয় ওই তিনটি দাবি পূরণ করতে হবে, নইলে আমাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে ৷ বাকি দুটি দাবির মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের জন্য সাম্প্রতিক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা এবং স্থায়ী কর্মীদের পদোন্নতি চালু করা ৷ অবশ্য স্থায়ী কর্মীদের দাবি পূরণেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি ৷ কিন্তু প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করার ক্ষমতা আমার নেই ৷ একমাত্র উপাচার্য কিংবা EC-র নির্দেশ পেলেই আমার পক্ষে সেটা করা সম্ভব ৷ তবে আন্দোলনকারীরা এখনও আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোতে বাধা দেননি ৷ দেখা যাক, কী হয়৷ তবে আমি তাঁদের সঙ্গে উপাচার্যের কথা বলিয়ে দিয়েছি ৷ আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হোক ৷”
এদিকে আন্দোলনকারী তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন, সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতির গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সভাপতি শুভায়ু দাস বলেন, "নিজেদের দাবিতে গত 9 দিন ধরে আমাদের কর্মবিরতি চলছে ৷ এতদিনে আমরা রেজিস্ট্রারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পেয়েছি ৷ তাঁর কাছ থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি জানতে পেরেছি ৷ আমরা সরকারি কোনও সুযোগ সুবিধা পাই না ৷ আমাদের প্রতিটি দাবিই নায্য ৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছে ৷ যেমন আজ রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম, অস্থায়ী কর্মীদের নাকি কোনও সরকারি অর্ডারই নেই ৷ মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত শিক্ষাবন্ধুদের জন্য অনেক সরকারি সুযোগ সুবিধা চালু করেছেন ৷ কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তার এক অংশও পাই না ৷ আমরা শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতিই পাচ্ছি ৷ আজ উপাচার্য জানিয়েছেন, তিনি যেহেতু পদত্যাগ করেছেন, তাই এই বিষয়টি আর তাঁর হাতে নেই ৷ EC-র মাধ্যমে রেজ়ুলেশন করে এই সমস্যার সমাধান করবেন ৷ কিন্তু আমাদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর একটি EC বৈঠক হয়েছে৷ সেই বৈঠকে এই সমস্যার কেন সমাধান হল না, তা কেউ জানাতে পারছে না ৷ তবে এখনও দাবি পূরণ না হলেও আমরা রেজিস্ট্রারকে পদত্যাগ করার কথা বলছি না ৷ কিন্তু এই রেজিস্ট্রার বলছেন, আমরা নাকি অযোগ্য ৷ কিন্তু দীর্ঘ 10 বছর ধরে আমরা যে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছি, তার ব্যবস্থা তিনি করতে পারলেন না কেন? এই কি তাঁর যোগ্যতার পরিচয়? তিনি কি অযোগ্য নন?”