পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

মুখ্যমন্ত্রীর বিরাগভজন হয়ে কি পদত্যাগ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের?

গতকাল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন নিজের পদত্যাগপত্র উচ্চশিক্ষা দপ্তরে পাঠিয়ে দেন ৷ আজ তিনি বলেন, পারিবারিক কারণেই তিনি উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন ৷

VC
VC

By

Published : Nov 29, 2019, 12:00 AM IST

মালদা, 28 নভেম্বর : শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন ৷ অবশ্য 10 দিন আগেই তার আভাস পাওয়া গেছিল ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকর্মীদের লাগাতার কর্মবিরতি চলাকালীন তাঁর পদত্যাগ চাপে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৷ আজ সন্ধেয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অভিযোগ করেন, তাঁকেও পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষাকর্মীরা ৷ যদিও রেজিস্ট্রারের এই অভিযোগ মানতে নারাজ আন্দোলনকারীরা ৷ তাঁরা জানিয়েছেন, এই ইশুতে তাঁরা কেউ রেজিস্ট্রারকে পদত্যাগ করার চাপ দেননি ৷ নিজেদের দাবিতে তাঁরা এই লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন ৷ তবে আজ রেজিস্ট্রারের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারীরা ৷

অচলাবস্থার মধ্যেই গতকাল কলকাতায় উচ্চশিক্ষা দপ্তরে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন ৷ মেয়াদ শেষ হওয়ার দু’বছরের মধ্যেই তাঁর ইস্তফা জেলার শিক্ষামহলে প্রশ্ন তুললেও রাজনৈতিক মহল বলছে, এটাই ভবিতব্য ছিল ৷ শাসকদলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি ঠিক হয়ে গেছিল 19 নভেম্বর ৷ সেদিনই জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ প্রশাসনিক সভার আগে তিনি কিছুক্ষণের জন্য জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন ৷ তাঁর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভরতি নিয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় ৷ সব শুনে সেখান থেকেই শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ স্বাগতবাবুকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি ৷ প্রশাসনিক সভা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী ফোন করে উপাচার্যকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দেন ৷ কিন্তু উপাচার্য পার্থবাবুকে বলেন, এই মুহূর্তে তিনি কী ভাবে পদত্যাগ করবেন বুঝতে পারছেন না ৷ সূত্রটি জানাচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যকে এর জন্য সময় নিতে বলেন ৷ এরই প্রভাব পড়ে প্রশাসনিক সভায় ৷ ছাত্র ভরতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলতেই নিজের সাফাইয়ে বক্তব্য পেশ করেন উপাচার্য ৷

সেই সভার পর সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের 21তম এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের সভায় যোগ দিতে কলকাতায় যান উপাচার্য ৷ বৈঠকের পর তিনি মালদা ফিরে আসেননি ৷ শেষ পর্যন্ত গতকাল তিনি নিজের পদত্যাগপত্র উচ্চশিক্ষা দপ্তরে পাঠিয়ে দেন ৷ আজ তিনি বলেন, পারিবারিক কারণেই তিনি উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন ৷ জানা যাচ্ছে, তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷ নতুন উপাচার্যের খোঁজও শুরু হয়ে গেছে ৷ যদিও আজ এনিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য ফোন করা হলেও ধরেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগপত্র জমার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষাকর্মীরা নিজেদের দাবি পূরণে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দ্বারস্থ হন ৷ আজই কলকাতা থেকে জেলায় ফিরেছেন রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরি ৷ ETV ভারতকে তিনি বলেন, “শিক্ষাকর্মীদের প্রথম দাবি ছিল, তাঁদের স্থায়ীকরণ করতে হবে ৷ EC-র নির্দেশ অনুযায়ী আমি 20 নভেম্বর 122 জন অস্থায়ী কর্মীর সমস্ত বিবরণ দিয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে ই-মেইল করি ৷ 25 নভেম্বর আমি উচ্চশিক্ষা দপ্তরে গিয়ে এই সংক্রান্ত নথি জমা দিয়েছি ৷ 23 নভেম্বর এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকেও বিষয়টি পেশ করা হয়েছে ৷ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আমাকে এবং উপাচার্যকে বলা হয়, এই সমস্যা সমাধানে আমরা যেন যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করি ৷ 25 নভেম্বর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সঙ্গে স্পেশাল সেক্রেটারির সঙ্গেও এনিয়ে আমার কথা হয়েছে ৷ তাঁরা আমাকে বিষয়টি মন্ত্রীকে জানানোর পরামর্শ দেন ৷ আমি শিক্ষামন্ত্রীকেও বিষয়টি জানাই ৷ শুধু প্রশাসনিকভাবেই নয়, এই সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিকভাবেও ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ কারণ, EC এই সমস্যা সমাধান করতে পারেনি ৷ ফলে রেজিস্ট্রার নিজে কিছুতেই শিক্ষাকর্মীদের সব দাবি পূরণ করতে পারবেন না ৷ আমার পক্ষে এই শিক্ষাকর্মীদের স্থায়ীকরণ করে দেওয়া সম্ভব নয় ৷ আন্দোলনকারীদের মূলত তিনটি দাবি রয়েছে ৷ তাঁরা বলছেন, হয় ওই তিনটি দাবি পূরণ করতে হবে, নইলে আমাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে ৷ বাকি দুটি দাবির মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের জন্য সাম্প্রতিক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা এবং স্থায়ী কর্মীদের পদোন্নতি চালু করা ৷ অবশ্য স্থায়ী কর্মীদের দাবি পূরণেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি ৷ কিন্তু প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করার ক্ষমতা আমার নেই ৷ একমাত্র উপাচার্য কিংবা EC-র নির্দেশ পেলেই আমার পক্ষে সেটা করা সম্ভব ৷ তবে আন্দোলনকারীরা এখনও আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোতে বাধা দেননি ৷ দেখা যাক, কী হয়৷ তবে আমি তাঁদের সঙ্গে উপাচার্যের কথা বলিয়ে দিয়েছি ৷ আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হোক ৷”

এদিকে আন্দোলনকারী তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন, সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতির গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সভাপতি শুভায়ু দাস বলেন, "নিজেদের দাবিতে গত 9 দিন ধরে আমাদের কর্মবিরতি চলছে ৷ এতদিনে আমরা রেজিস্ট্রারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পেয়েছি ৷ তাঁর কাছ থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি জানতে পেরেছি ৷ আমরা সরকারি কোনও সুযোগ সুবিধা পাই না ৷ আমাদের প্রতিটি দাবিই নায্য ৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছে ৷ যেমন আজ রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম, অস্থায়ী কর্মীদের নাকি কোনও সরকারি অর্ডারই নেই ৷ মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত শিক্ষাবন্ধুদের জন্য অনেক সরকারি সুযোগ সুবিধা চালু করেছেন ৷ কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তার এক অংশও পাই না ৷ আমরা শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতিই পাচ্ছি ৷ আজ উপাচার্য জানিয়েছেন, তিনি যেহেতু পদত্যাগ করেছেন, তাই এই বিষয়টি আর তাঁর হাতে নেই ৷ EC-র মাধ্যমে রেজ়ুলেশন করে এই সমস্যার সমাধান করবেন ৷ কিন্তু আমাদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর একটি EC বৈঠক হয়েছে৷ সেই বৈঠকে এই সমস্যার কেন সমাধান হল না, তা কেউ জানাতে পারছে না ৷ তবে এখনও দাবি পূরণ না হলেও আমরা রেজিস্ট্রারকে পদত্যাগ করার কথা বলছি না ৷ কিন্তু এই রেজিস্ট্রার বলছেন, আমরা নাকি অযোগ্য ৷ কিন্তু দীর্ঘ 10 বছর ধরে আমরা যে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছি, তার ব্যবস্থা তিনি করতে পারলেন না কেন? এই কি তাঁর যোগ্যতার পরিচয়? তিনি কি অযোগ্য নন?”

ABOUT THE AUTHOR

...view details