মালদা, 27 নভেম্বর : মাখনা । নামটির সঙ্গে হয়তো অনেকেই পরিচিত নয় । তবে দেশের মানুষ ধীরে ধীরে নামটির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে । অনেক আগেই বস্তুটির সঙ্গে পরিচিত জাপান ও রাশিয়া । আমাদের এখানে যা মাখনা ওই দুই দেশে তা "ফক্স নাট" নামে পরিচিত । একাধিক গুণে ভরপুর মাখনার খ্যাতি এখন বাড়ছে অনেক দেশেই । ওজন কমাতে কিংবা বয়স ধরে রাখতে মাখনার জুড়ি মেলা ভার । রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এর কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে । জ়িরো কোলেস্টরেল ও ফ্যাট, ক্যালসিয়ামে ভরপুর মাখনা গর্ভবতীদের নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । একসময় শুধুমাত্র বিহারের এর চাষ হত । এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরেও । এখানে প্রতিবছর 100 কোটি টাকার বেশি মাখনার ব্যবসা হয় । এই চাষকে কেন্দ্র করে এখানে আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোরও উন্নতি হয়েছে । প্রতিবছর বিহার থেকে 10 থেকে 12 হাজার মানুষ হরিশ্চন্দ্রপুরে এসে নিজেদের রুজি রুটির ব্যবস্থা করে । লাভ বেশি থাকায় প্রতি বছর বাড়ছে মাখনা চাষের এলাকা । বাড়ছে চাষির সংখ্যাও । তবে অভিযোগ, রাজ্য সরকার এই চাষে কোনও সহায়তা করছে না । এমনকী সরকারিভাবে মাখনার প্রচারও করা হচ্ছে না । সরকার এদিকে নজর দিলে মাখনার জন্য সারা দেশ, এমনকী বিদেশেও পরিচিতি পাবে এই জেলা । কারণ মাখনার পেটেন্ট রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরেরই ।
মাখনা পদ্মগোত্রীয় একধরনের জলজ উদ্ভিদ । পদ্মের মতোই দেখতে এর পাতা । পাতায় অসংখ্য কাঁটা থাকে । পাতার নীচে গুচ্ছাকারে ফল জন্মায় । সেই ফলের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি হয় খই । সেটাই মানুষ স্ন্যাক্স হিসেবে ব্যবহার করে থাকে । পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাখনা গ্লুটেন ও কোলেস্টেরল ফ্রি । এতে খুব অল্প মাত্রায় সোডিয়াম ও ফ্যাট রয়েছে । রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, অ্যান্টি এজিং এনজ়াইম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট । আর তাই এর ব্যাপক চাহিদা দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতের মতো রাজ্যগুলিতে । ধীরে ধীরে এর উপকারিতা বুঝতে পারছেন অন্য রাজ্যের বাসিন্দারাও । সেই কারণে আগে শুধু বাংলা লাগোয়া বিহারে চাষ হলেও এখন হরিশ্চন্দ্রপুরে ব্যাপক আকারে মাখনার চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে । হরিশচন্দ্রপুরে এই চাষ প্রথম শুরু করেছিলেন পুরুষোত্তম ভগত ।
বর্তমানে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় বেশ কিছু মাখনা খই প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়ে উঠেছে । প্রায় দশটি পাইকারি গদিও তৈরি হয়েছে । কোনও যন্ত্র নয়, পুরো প্রক্রিয়াটিই হয় হাতে । মাখনার চাষ করেন স্থানীয় চাষিরা । জমিতে মোটামুটি 12 ইঞ্চি জল থাকলেই এর চাষ হয় । মার্চ-এপ্রিল মাসে মাখনার বীজ ফেলা হয় । অগাস্ট থেকে বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু হয় । খই প্রক্রিয়ার কাজ চলে জানুয়ারি পর্যন্ত । তবে প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে স্থানীয় শ্রমিকরা যুক্ত নয় । বিহারের দ্বারভাঙা জেলার শ্রমিকরাই এই কাজ করে থাকে । প্রতি বছর 10-12 হাজার মানুষ বিহার থেকে কয়েকমাসের জন্য এই জেলা আসে ।
হরিশ্চন্দ্রপুরের তালশুরের মাখনাচাষি রামহরি মহালদার বলেন, এক বিঘা জমিতে এক থেকে সোওয়া কুইন্টাল মাখনার বীজ উৎপাদিত হয় । অন্য বছর দাম বেশি থাকলেও এবার প্রতি কুইন্টালের দাম 10 থেকে 11 হাজার টাকা । কোরোনার জন্য এবার দাম কিছুটা কম । বলেন, "জলা থেকে বীজ সংগ্রহ করে ধুয়ে, সাফ করে বিহারের শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করি । তারাই বীজ থেকে খই বের করে ।"