মালদা, 29 অগস্ট: গঙ্গার ভাঙনে বিপন্ন মানিকচক ব্লকের ভূতনি চর ৷ রবিবার গঙ্গার ভাঙনে নদীর মূল বাঁধের প্রায় আড়াইশো মিটার এলাকা তলিয়ে গিয়েছে ৷ ভূতনি চরকে বাঁচানোর শেষ রিং বাঁধের কাছে চলে এসেছে নদী ৷ কোনও কারণে সেই দুর্বল বাঁধ ভেঙে গেলে কয়েক লক্ষ মানুষ সংকটে পড়বেন (Erosion of Ganges affected life of people in Malda) ৷
আরও বড় বিষয়, এই রিং বাঁধ গঙ্গা আর কোশি নদীকে আলাদা করে রেখেছে ৷ বাঁধ ভাঙলে দুই গঙ্গার বিপুল জলরাশি আছড়ে পড়বে কোশিতে ৷ সেক্ষেত্রে ভূতনির সঙ্গে ভেসে যাবে রতুয়া -1 নম্বর ব্লকের একাধিক গ্রাম ৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রবিবার রাতে ভূতনি যান এলাকার বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র ৷ এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দোষারোপ করেছেন তিনি ৷
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রবিবার রাতে ভূতনি যান এলাকার বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল থেকেই ভূতনির কেশবপুর ও কালুটোনটোলায় গঙ্গার ভাঙন শুরু হয় ৷ প্রথমে অল্পবিস্তর ভাঙন হলেও সন্ধে গড়ানোর সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে ৷ রাতে তলিয়ে যায় নদীবাঁধের একটা বড় অংশ ৷ খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে চলে যান মানিকচকের জয়েন্ট বিডিও রমেশচন্দ্র মণ্ডল, ভূতনি থানার ওসি কুণালকান্তি দাস-সহ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা ৷ পরে চলে আসেন বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রও ৷
দু'দিন আগেই বিধ্বস্ত বাঁধ পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজ্যের সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ৷ তাঁকে সামনে পেয়ে ভাঙন রোধের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন চরের বাসিন্দারা ৷ গতকাল রাতেও তাঁদের গলায় সেই বিষয়টি উঠে এসেছে ৷ এক গ্রামবাসী স্বপন মণ্ডল বলেন, "বিকেল থেকেই যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে ভূতনিকে বাঁচানো সম্ভব হবে না ৷ ইতিমধ্যে গঙ্গার মূল বাঁধের অনেকটা অংশ ভেঙে গিয়েছে ৷ এরপর রিং বাঁধ রয়েছে ৷ সেই বাঁধের অবস্থাও ভালো নয় ৷ ওই বাঁধ ভাঙলে ভূতনি আর থাকবে না ৷ যেভাবে ভাঙন রোধের কাজ হচ্ছে, তাতে এলাকা রক্ষা করা যাবে না ৷ একমাত্র আরসিসি ঢালাই করেই ভূতনিকে বাঁচানো সম্ভব ৷"
ভূতনি চরের ভাঙন অব্যাহত, সংকটে কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন একই বক্তব্য আরেক চরবাসী তপন ঘোষের ৷ তিনি বলেন, "দু'দিন আগে মন্ত্রী এসেছিলেন ৷ তিনি দ্রুত ভাঙন রোধের কাজ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু এখনও কোনও কাজ হয়নি ৷ কাজ না হলে দু'দিনের মধ্যে ভূতনির অস্তিত্ব থাকবে না ৷ বস্তা দিয়ে কাজ করে কিছু হবে না ৷"
আরও পড়ুন:বাড়ি ও জমি তলিয়ে যাচ্ছে নদীতে, জলস্তর বৃদ্ধিতে রুদ্রমূর্তিতে গঙ্গা
বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, "গঙ্গা মূল বাঁধের প্রায় 500 মিটার অংশ ভেঙে গিয়েছে ৷ সৌভাগ্যের কথা, বাতাস না থাকায় রাতে নতুন করে ভাঙন হয়নি ৷ মানুষকে বাঁচাতে হবে ৷ কেন্দ্রীয় সরকার বিপর্যয় মোকাবিলায় একটা পয়সাও দেয় না ৷ রাজ্য সরকারকে না দিলেও তারা অন্তত মানুষকে বাঁচাতে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষকে টাকা দিক ৷ ওটা তো কেন্দ্রেরই সংস্থা ৷ পরিস্থিতি ভালো নয় ৷ গঙ্গার ভাঙন যে কোনও উপায়ে আটকাতে হবে ৷ কেন্দ্র বিভিন্ন দিকে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে ৷ কিন্তু এখানকার মানুষকে বাঁচাতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না ৷ মানুষকে বাঁচাতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হচ্ছে ৷"