মালদা, 22 অক্টোবর : NRC আতঙ্কেই না কি মৃত্যু হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিকের ৷ দাবি স্থানীয়দের ৷ পুরাতন মালদা পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের খইহাট্টা এলাকার কর্মকার পাড়া এলাকার ঘটনা ৷
সত্য কুণ্ডু (59) ৷ পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট ৷ পুরাতন মালদা পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের খইহাট্টা এলাকার কর্মকার পাড়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন ৷ 20 বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছিলেন ৷ পরে বিভিন্ন উপায়ে ভোটার ও আধার কার্ড বানিয়ে নেন ৷ এদেশের নাগরিক হিসেবে একাধিকবার ভোটও দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু সম্প্রতি NRC ইশুতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ৷ স্থানীয়দের দাবি, সেই আতঙ্কেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর ৷
20 তারিখ রাতে তাঁকে শোওয়ার ঘরে পড়ে থাকতে দেখেন প্রতিবেশীরা ৷ দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ কিন্তু এদেশে কোনও ওয়ারিশ না থাকায় তাঁর মৃতদেহও কাউকে দেওয়া হয়নি ৷ গতকাল থেকে তিনদিনের জন্য সত্যবাবুর ঠিকানা মালদা মেডিকেলের মর্গে ৷
স্থানীয় বাসিন্দা ও সত্যবাবুর বন্ধু প্রদ্যোৎ কুণ্ডু বলেন, "20-22 বছর ধরে দেখছি ৷ খুব ভালো মানুষ ছিলেন ৷ এক জায়গায় থাকতাম ৷ NRC রব শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন ৷ মাঝেমধ্যেই আমাকে বলতেন, এখানেও NRC চালু হলে তিনি কিছু করতে পারবেন না ৷ এখানে তাঁর কেউ নেই ৷ আমি তাঁকে এলাকার কাউন্সিলরের কাছে যেতে বলি ৷ কিন্তু NRC চিন্তা থেকে তিনি বেরোতে পারেননি ৷ 15-20 দিন আগে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ আমরা তাঁকে মৌলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই ৷ সেখানে তাঁর চিকিৎসা করানো হয় ৷ সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ৷ আমরা তাঁকে সদরেও নিয়ে যাই ৷ NRC আতঙ্কেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৷"
একই বক্তব্য পুরাতন মালদা পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরিতোষ ঘোষেরও ৷ তিনি বলেন, "NRC চালু হলে এখান থেকে বিতাড়িত হওয়ার আতঙ্কে ভুগছিলেন সত্যবাবু ৷ সেই আতঙ্কেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ NRC নিয়ে তিনি আমার কাছেও কয়েকবার এসেছিলেন ৷ তিনি বলতেন, এখানে NRC চালু হলে তাঁকে ফের বাংলাদেশ চলে যেতে হবে ৷ তবে শুধু সত্যবাবুই নন পূর্ববঙ্গ কিংবা পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা এদেশে এসেছে, তাঁরা সবাই এখন NRC নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে ৷ বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে তারা এখন কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যানের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছে ৷"
এদিকে কোনও ওয়ারিশ না থাকায় মর্গে রাখা হয় সত্যবাবুর মৃতদেহ ৷ এবিষয়ে এলাকার বাসিন্দা শম্ভু ঘোষ বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম আজই সত্যবাবুর মৃতদেহের সৎকার করব ৷ প্রশাসনকেও সে কথা জানিয়েছিলাম ৷ কাউন্সিলরও প্রশাসনের সঙ্গে এনিয়ে কথা বলেন ৷ কিন্তু বেলা তিনটে পর্যন্ত বসিয়ে রেখে আমাদের বলা হয়েছে, যেহেতু সত্যবাবুর কোনও ওয়ারিশ এদেশে নেই তাই চার দিন পর তাঁর মৃতদেহ দেওয়া হবে ৷ কিন্তু চার দিনে মৃতদেহ পচে যাবে ৷ তখন আমরা সেই দেহ নিতে পারব না ৷"
তবে এনিয়ে এখনও পর্যন্ত মালদা থানার পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷