পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Apr 10, 2020, 11:10 PM IST

ETV Bharat / city

লকডাউনে রক্তাল্পতায় ভুগছে মালদা মেডিকেলের ব্লাড ব্যাঙ্ক

মালদা মেডিকেলের ব্লাড ব্যাঙ্কে সপ্তাহে ন্যূনতম 400 ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে। পুলিশ একাধিক রক্তদান শিবির করলেও সেই চাহিদা মেটাতে কোনওভাবেই সক্ষম নয়।

Crisis of blood in Malda Medical
মালদা মেডিকেল

মালদা, 10 এপ্রিল: গ্রীষ্মকালীন মরসুমে প্রতি বছরই রক্তের সংকট দেখা দেয় ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে৷ এবার যুক্ত হয়েছে লকডাউন ৷ ইতিমধ্যে যার প্রভাব পড়েছে রাজ্যের প্রতিটি ব্লাড ব্যাঙ্কেই ৷ এদিকে কোরোনায় গোষ্ঠী সংক্রমণ এড়াতে রাজ্যের কোথাও বড় ধরনের রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্প্রতি পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের রক্তদান করতে আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রথমে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শুরু হয় পুলিশকর্মীদের রক্তদান শিবির। এদিকে মালদা জেলা পুলিশ এখনও পর্যন্ত তিনটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছে৷ যা থেকে সংগৃহীত হয়েছে 200 ইউনিটের বেশি রক্ত৷ কিন্তু, তাও এই জেলার পক্ষে অপ্রতুল ৷ বর্তমানে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মজুত রয়েছে মাত্র চার ইউনিট হোল ব্লাড ৷ এই পরিস্থিতিতে জেলাবাসীর কাছে ছোট ছোট রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার আবেদন জানিয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷

মালদা জেলায় মোট দু'টি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে ৷ দুটিই সরকারি ৷ একটি রয়েছে মালদা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে, দ্বিতীয়টি চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ তবে রক্ত গ্রহীতাদের চাহিদা বেশি মেডিকেলের ব্লাড ব্যাঙ্কেই ৷ এখান থেকেই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীদের পাশাপাশি জেলার প্রতিটি নার্সিংহোমে রক্ত সরবরাহ করা হয়৷ ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিকেলের ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রতিদিন 80 থেকে 100 ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে ৷ থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য এখান থেকেই রক্ত সংগ্রহ করা হয়৷ সাধারণত শীতকালে রক্তের জোগান মোটামুটি ঠিক থাকে ৷ তবে, গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের সংকট দেখা দেয় ৷ আর বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে মেডিকেলের ব্লাড ব্যাঙ্কে রয়েছে মাত্র চার ইউনিট হোল ব্লাড৷ তবে প্লাজ়মা, প্লেটলেট ও RBC সেল খানিকটা মজুত রয়েছে৷

রক্তের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে মালদা মেডিকেলে।

আজ মালদা মেডিকেলের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে অসুস্থ মা’র জন্য রক্ত নিতে এসেছিলেন মালদা শহরেরই বাসিন্দা সুদীপ্ত চৌধুরি ৷ তিনি বলেন, “আমার মা শহরেরই একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ৷ নার্সিংহোম থেকে বলা হয়েছে, তাঁর রক্ত লাগবে ৷ এর আগেও আমি ডোনার এনে এখান থেকে দুই ইউনিট রক্ত নিয়ে গিয়েছি ৷ আজ এসে শুনলাম, মজুত রক্ত একেবারেই নেই৷ লকডাউনে রক্তের সমস্যা বেড়েছে৷” ব্লাড ব্যাঙ্কে থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে আসা পুরাতন মালদার মঙ্গলবাড়ির বাসিন্দা ইনজামুল আনসারি বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নেই৷ কয়েক দিন ধরেই রক্ত নিতে এসে ঘুরে যাচ্ছি ৷ আমার দিদির সদ্য সন্তান হয়েছে ৷ নার্সিংহোমে ভরতি রয়েছে। লকডাউনের মধ্যে ডোনার আনতেও সমস্যা হচ্ছে৷ সঙ্গে নথি না থাকলে পুলিশ রাস্তায় ধরছে৷ লকডাউনে আমরা জেরবার৷”

এদিকে ব্লাড ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, রক্তের এই সংকট মেটাতে সম্প্রতি মালদা শহর ও চাঁচলে একই দিনে দুটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল জেলা পুলিশ৷ মালদা শহর থেকে সংগৃহীত হয় 100 ইউনিট রক্ত৷ চাঁচলে 70 ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হয়৷ সেই রক্ত অবশ্য চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কেই রাখা হয়েছে৷ দু’দিন আগে পুলিশের পক্ষ থেকে আরেকটি শিবিরের আয়োজন করা হয়৷ সেখান থেকে পাওয়া যায় আরও 40 ইউনিট রক্ত৷ কিন্তু, পুলিশ সংকট মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তা পর্যাপ্ত নয় ৷ একমাত্র বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কিংবা রাজনৈতিক সংগঠন যদি বড় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে, তবেই এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব৷ এমনটাই মনে করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি আলমগির খান। তিনি বলেন, “লকডাউনের আগে থেকেই মালদা মেডিকেলে রক্তের আকাল দেখা দেয়৷ লকডাউনের পর সংকট আরও বাড়ে ৷ এই সময়ের মধ্যেই আমরা ব্লাড ব্যাঙ্কে তিনটি ছোটো শিবিরের আয়োজন করেছিলাম ৷ এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, পুলিশ ছাড়া কেউ বড় ক্যাম্প করতে পারবে না৷“ আলমগির খান জানান, “মালদা মেডিকেলের ব্লাড ব্যাঙ্কে সপ্তাহে ন্যূনতম 400 ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে ৷ শুধুমাত্র পুলিশের পক্ষে এত রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব নয়৷ কারণ, পুলিশকর্মীরাও এখন চরম ব্যস্ত৷ এর মধ্যে আমাদের দুটি বড় রক্তদান শিবির করার কথা ছিল৷ কিন্তু তার অনুমতি পাচ্ছি না৷”

এই বিষয়ে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার অমিত দাঁ বলেন, “স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী মাত্র 10 জন রক্তদাতাকে নিয়ে ছোটো রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারি৷ জেলাশাসকের অনুমতিতে যদি কোথাও তার থেকে বেশি দাতাকে নিয়ে শিবির হয়, তবে সেখানে সোশাল ডিসট্যান্সিং মেনে রক্ত নিতে হবে৷ সমস্যাটা হল, রক্ত তৈরি করা যায় না৷ মালদায় রক্তের প্রচুর চাহিদা রয়েছে৷ এই চাহিদা থাকবেও৷ এদিকে এমনিতেই রমজান মাসে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমে যায়৷ এবার তার আগেই কোরোনার প্রকোপে গোটা জেলায় রক্তদান শিবির প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷“ হাসপাতাল সুপার আরও বলেন “কেউ যদি ব্লাড ব্যাঙ্কে এসে রক্তদান করতে চান, তবে আমরা তাঁদের জন্য গাড়ি পাঠাতেও রাজি আছি৷”

ABOUT THE AUTHOR

...view details