মালদা, 26 অগস্ট : পুতুল নাচের উৎপত্তি কোথায় তা নিয়ে নানাবিধ মত রয়েছে । অনেকে মনে করেন, ভারতবর্ষেই এই নাচের উৎপত্তি । আনুমানিক 1600 খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে এদেশে ছায়াপুতুলের নাচ শুরু হয়েছিল । আবার অনেকে মনে করেন, এখন যে কাঠের পুতুলের নাচ দেখা যায়, তার উৎপত্তি পারস্যে ৷ তবে উৎপত্তি যেখানেই হোক না কেন, পুতুল নাচের সুপ্রাচীন ইতিহাস রয়েছে । কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুতুল নাচ বর্তমান প্রজন্মের কাছ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে । 25-30 বছর আগেও এই বাংলায় ম্যারাপ বেঁধে পুতুল নাচের আসর বসত । এখন আর সেসবের দেখা পাওয়া দুষ্কর । বিশেষত মালদা জেলায় এখন পুতুল নাচ শুধুই ডায়েরির পাতায় ।
শুধু ভারতবর্ষ নয়, গোটা পৃথিবীতেই একসময় রমরমিয়ে চলত পাপেট শো । এখনও অনেক দেশে তা দেখা যায় ৷ কিন্তু বাংলার কমবয়সীদের মধ্যে ক’জন পুতুল নাচ দেখেছে, তা বলা মুশকিল । বাংলার ছেলেমেয়েদের কাছে পুতুল নাচের আঙ্গিক তুলে ধরতে প্রায় 30 বছর আগে মালদায় এক লোকশিল্প তৈরি হয়েছিল । মানব পুতুল নাচ । নাচের মুদ্রা কিংবা আঙ্গিক একেবারে পুরানো পুতুল নাচের মতোই । শুধু কাঠের পুতুলের জায়গায় এখানে সেই নাচ করে মানুষ । সময় গড়ানোর সঙ্গে এই লোকশিল্প মানুষের মনেও জায়গা করে নেয় । শুধু মালদা নয়, জেলার মানব পুতুল নাচের শিল্পীরা গোটা রাজ্য, এমনকি রাজ্যের বাইরেও নিজেদের কলা প্রদর্শন করেছেন । রাজ্য সরকারও মানব পুতুল নাচকে লোকশিল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে । এই জেলায় মানব পুতুল নাচের মাত্র দু'টি দল রয়েছে ।
করোনার ধাক্কায় এখন এই লোকশিল্প টলমল করছে । গত দেড় বছর ধরে কাজ নেই শিল্পীদের । রাজ্য সরকারের ভাতাও কয়েক মাস ধরে বন্ধ । পেট চালাতে তাঁরা শিল্প ছেড়ে বিভিন্ন কাজের দিকে ঝুঁকেছেন । কেউ আমবাগানের শ্রমিক, কেউ ভ্যানচালক কিংবা কেউ এখন ঘরামি । এই পরিস্থিতিতে তাঁরা সবাই একসঙ্গে অনুশীলনও করতে পারছেন না । নাচের পোশাক-সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এখন বাক্সবন্দি । পোকায় যাতে সেসব নষ্ট না করে, তার জন্য মাঝে মধ্যে সেগুলো রোদ খাওয়ানো হয় । শিল্পীরা চাইছেন, দ্রুত করোনা নিপাত যাক । ফিরে আসুক শিল্প-সংস্কৃতির পরিসর ।
ইংরেজবাজার ব্লকের মানিকপুর গ্রামের অণ্বেষা সাংস্কৃতিক মঞ্চ মালদা 17 বছর ধরে মানব পুতুল নাচ করে আসছে । তাঁদের দলের নাম পুতলা-পুতলি । এখন এই দলের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক । শিল্পীরা সবাই এখন পেটের ভাত জোগাতে অন্য কাজে লেগে গিয়েছেন । এখন ঘরামির কাজ করেন মুল্লিরাম মণ্ডল । বলেন, "7-8 বছর ধরে মানব পুতুল নাচ করি । করোনার জন্য এখন সেসব বন্ধ । গত বছর শেষ অনুষ্ঠান করেছি । সংসার চালাতে এখন ঘরামির কাজ করছি । তবে আগেও আমাকে এই কাজ করতে হত । করোনা আসার আগে বছরে 25-30টি নাচের ডাক পেতাম । অথচ সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, আমাদের বছরে 100টি করে কাজ দেওয়া হবে । সময় পেলে বাড়িতে নাচের অনুশীলন করি । সরকার উদ্যোগ না নিলে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখা যাবে না ।"