পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Jun 23, 2020, 7:33 PM IST

ETV Bharat / city

জল জমছে মালদায়, দোষারোপ BJP-তৃণমূলে

মালদা শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ বাড়ছে ৷ এই বিষয়ে শাসকদলের সমালোচনা করেন BJP সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ পাল্টা দিলেন বর্তমান প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য দুলাল সরকার ৷ নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর তুঙ্গে৷

sewerage system in malda
জল জমছে মালদায়

মালদা, ২৩ জুন : দিনক্ষণ মেনে এবার বঙ্গে ঢুকে পড়েছে বর্ষা৷ আর তাতেই নাভিশ্বাস উঠেছে মালদা শহরের বাসিন্দাদের৷ সামান্য বৃষ্টিতেই জল থইথই গোটা শহর৷ সেই জল নামতে সময় লেগে যাচ্ছে ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন৷ এতে শহরের নাগরিকরা প্রবল সমস্যায় পড়লেও সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে এনিয়ে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছে রাজনীতির কারবারিরা৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে লুটতরাজের অভিযোগ তুলেছে BJP ৷ গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে শাসকদল ৷ সব মিলিয়ে শহরের নিকাশি নিয়ে রাজনীতির নাটক জমে উঠেছে ৷ মালদা শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের অভিযোগ অনেক পুরোনো ৷ শুধু এঁদো গলি নয়, শহরের প্রধান রাস্তাগুলোও অল্প বৃষ্টিতে জলে ভাসে ৷ এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন আগে লক্ষ্মীপুর ড্রেনেজ প্রকল্পের নকশা তৈরি করেছিল তৎকালীন বাম সরকার ৷ তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সেই নকশায় ধুলোর আস্তরণ জমেছে ৷ এখন আর ওই প্রকল্পের কোনও অস্তিত্বই নেই ৷ তৃণমূলের আমলেও শহরবাসীর পক্ষ থেকে নতুন নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করার দাবি উঠেছে বারবার ৷ হচ্ছে, হবের বাইরে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি পৌর প্রশাসন ৷ পৌরসভার ২৯টির ওয়ার্ডের বেশিরভাগেই বেহাল হয়ে রয়েছে নিকাশি ব্যবস্থা ৷ এনিয়ে শুধু বিরোধীরা নয়, একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলেরই বিদায়ী কাউন্সিলর, প্রাক্তন চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ৷ কিন্তু সমস্যা সমাধানে আজও সফল হতে পারেনি পৌরকর্তৃপক্ষ ৷ এরই মধ্যে তৃণমূল শাসিত পৌরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৷ বর্তমানে পৌরসভা প্রশাসক নিয়ন্ত্রিত ৷ এই অবস্থায় সেই কাজ যে আর হবে না, তা বুঝে ফেলেছে সবাই ৷ ফলে চলতি বর্ষাতেও বেশ কয়েকবার নিশ্চিতভাবে শহর ভাসবে ৷ তা থেকে নিজেদের রক্ষা করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে শহরবাসী ৷


মালদা শহরের সর্বমঙ্গলা পল্লি, সুভাষ পল্লি, রামকৃষ্ণ পল্লি, বিবেকানন্দ পল্লি, শরৎ পল্লি এলাকাগুলি খানিকটা নীচু ৷ এসব এলাকায় বৃষ্টিতে জল জমা সাধারণ বিষয় ৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মীরচক, কালীতলা, সরকারি তিনটি কলোনি, রবীন্দ্র অ্যাভিনিউ প্রভৃতি এলাকাগুলিতেও জল জমতে দেখা যাচ্ছে ৷ এই এলাকাগুলি কিন্তু উঁচু বলেই পরিচিত ৷ শহরবাসীর অভিযোগ, শহরে জনসংখ্যা বাড়লেও নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে ভাবেনি বাম কিংবা তৃণমূল শাসিত পৌরবোর্ড ৷ তারই খেসারত দিতে হচ্ছে শহরবাসীকে ৷ পশ্চিম সর্বমঙ্গলা পল্লির বাসিন্দা বিধান ঘোষ বলেন, “এই সমস্যা দীর্ঘদিনের ৷ জমা জল বেরোনোর পথ না থাকার জন্যই বৃষ্টি হলে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় ৷ জল নামতে কয়েকদিন লেগে যায় ৷ সমস্যা সমাধানে অনেকবার পৌরকর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি ৷ জল বেশি জমলে পাম্প লাগিয়ে সাময়িকভাবে সমস্যা মেটানো হয় ৷ কিন্তু সমস্যা মেটাতে স্থায়ী কাজ এখনও হয়নি ৷” এলাকার আরও এক বাসিন্দা চন্দ্রিমা সাহ বলেন, “বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল ৷ অনেক বাড়িতেও ঢুকে যাচ্ছে ৷ অনেকদিন ধরেই এই সমস্যা ৷ পৌরসভাকে বলেও কাজ হয় না ৷ এবারও বর্ষায় আমাদের জলে ডুবতে হবে ৷”

এই ঘটনা নিয়ে শাসকদলের সমালোচনা করেন BJP সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ তিনি বলেন, “তৃণমূলের আমলে সব জায়গায় শুধু লুটের রাজত্ব চলছে ৷ গরিব মানুষের বরাদ্দ, বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ লুট হচ্ছে ৷ পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভা, সব জায়গায় একই ছবি ৷ রাজ্য সরকারের প্রতিটি দপ্তরেই লুটপাট চলছে ৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এই লুট নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানালেই আমাদের মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই জল জমে থাকছে ৷ আমি কয়েকদিন আগে 25 ও 29 নম্বর ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম ৷ দেখেছি, ওই দুই ওয়ার্ডে জমা জলের উপর দিয়েই মানুষজনকে যাতায়াত করতে হচ্ছে ৷ এটা পৌরসভা চলছে, নাকি তৃণমূলের পার্টি অফিস চলছে, বোঝা দায় ৷ শহরে কোনও ডাস্টবিনও নেই৷ পৌরসভা মানুষের জন্য তৈরি হয়েছে৷ শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পৌরসভার৷ পৌর এলাকার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে৷ টাকাটা যাচ্ছে কোথায়? এসব তৃণমূল নেতাদের পকেটে যাচ্ছে ৷ লুটপাট চালাতেই তৃণমূল পৌরসভাগুলি দখল করে রয়েছে৷" যদিও সাংসদের অভিযোগ অস্বীকার করেন বর্তমান প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য দুলাল সরকার ৷ তিনি বলেন, “এই শহর অনেক পুরোনো ৷ নিকাশি ব্যবস্থাও ছিল প্রাচীন ৷ এখন শহর অনেক বেড়েছে ৷ ফলে নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন৷ আগে প্রচুর ফাঁকা জায়গা ছিল ৷ শহরের জল বেরিয়ে যেতে পারত ৷ এখন নিকাশির ওই জায়গাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ তার মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে অতিবৃষ্টি শুরু হয়েছে ৷ লকডাউনের জন্য বর্ষার আগে শহরের ড্রেনগুলি আমরা পরিষ্কার করতে পারিনি ৷ শ্রমিক পাওয়া যায়নি ৷ তবু আমরা নিকাশি সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ কয়েকটি হাইড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে৷ তবে এনিয়ে BJP-র বড় বড় কথা শোভা পায় না৷ এই পৌরসভায় BJP-র মাত্র দু’জন কাউন্সিলর ছিল৷ তারাও নিজেদের এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ৷ আর ওদের সাংসদটা কে? খগেন মুর্মু আর কী বলবেন! CPI(M)-এ যখন ছিলেন তখন তিনি মালদা জেলা পরিষদে পূর্ত দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন৷ শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করতে পারেননি৷ এখন জার্সি পাল্টে তিনি অন্য দলে গিয়েছেন৷ নতুন কথা বলছেন৷ আবার অন্য দলে গিয়ে আরেক কথা বলবেন৷ তাঁর কথায় আমরা গুরুত্ব দিই না৷ আমরা মানুষকে নিয়ে চলি, চলব৷”

ABOUT THE AUTHOR

...view details