মালদা,9 মে: রেলের আন্ডারপাস নির্মাণ নিয়ে BJP ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘাত চরমে উঠল । বচসায় জড়ালেন সাংসদ ও কাউন্সিলর ৷ সাংসদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে তিনি রেলের কাছ থেকে এই কাজ আদায় করে এনেছিলেন ৷ এর জন্য তাঁর কয়েকজন অনুগামী কাজের জায়গায় তাঁর ছবি দিয়ে একটি ব্যানার লাগিয়েছিল ৷ আজ কাজ শুরুর আগে তা ছিঁড়ে দেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর৷
খগেনবাবুর অভিযোগ, প্রতিবাদ জানালে কাউন্সিলর তাঁদের দলের নেতাদের শারীরিক নিগ্রহ করেন ৷ এদিকে তৃণমূল কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরি বলেন, কে বা কারা সাংসদের ছবি লাগানো ব্যানার ছিঁড়েছে তা তাঁর জানা নেই ৷ মুখ্যমন্ত্রী এবং স্থানীয় পৌরসভার চেয়ারম্যানের উদ্যোগে এই আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ আজ শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ ৷ সেই কাজ নিয়ে রাজনীতি করতে দলবল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন BJP সাংসদ ৷ এতে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হয়েছিল ৷ তাই তিনি জটলা সরানোর আবেদন জানান ৷ এতেই সাংসদ তাঁকে লক্ষ্য করে কুরুচিকর মন্তব্য করেন৷
মালদা শহরের প্রায় মাঝ বরাবর গিয়েছে রেলওয়ে ট্র্যাক ৷ সেই ট্র্যাকের একপাশে রয়েছে ইংরেজবাজার পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড ৷ কৃষ্ণপল্লিতে দীর্ঘদিন আগেই আন্ডারপাস তৈরি হয়েছে ৷ কিন্তু মালঞ্চপল্লি ও রথবাড়িতে সেই ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন দিনের অধিকাংশ সময় যানজট লেগে থাকত ৷ এই দুই জায়গায় আন্ডারপাস তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই রেলের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাসিন্দারা ৷ সম্প্রতি সেই কাজে সবুজ সংকেত দেয় রেল কর্তৃপক্ষ ৷ আর এরপরই কার চেষ্টায় এই কাজ হয়েছে, তা প্রমাণ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তৃণমূল ও BJP দু'পক্ষই ৷ আজ মালঞ্চপল্লিতে আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ শুরুর সময় সেই বিবাদই প্রকাশ্যে আসে ৷
খগেন মুর্মূ বলেন, “মালঞ্চপল্লিতে আন্ডারপাসের জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। রথবাড়ি আন্ডারপাসের কাজও আমরা দাবি করে শুরু করিয়েছি । আমরা আন্ডারপাসের কাজ নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। আমরা চাই সাধারণ মানুষের কাজ হোক । কিন্তু তৃণমূল সরকার এই আন্ডারপাস নিয়েও রাজনীতি করছে ।"
তিনি আরও বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা বিভিন্ন রাজ্যে আটকে রয়েছেন । অন্যান্য রাজ্যে প্রায় 300টি ট্রেন ব্যবহার করে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অথচ গতকাল রাত পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার মাত্র দুটো ট্রেন নিয়েছিল। মালদার শ্রমিকদের জন্য মাত্র একটা ট্রেন নেওয়া হয়েছে। অথচ মালদার পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাটা অনেক বেশি। স্থানীয় কাউন্সিলর, পৌরসভার চেয়ারম্যান এখানে এসে নারকেল ফাটিয়ে যাচ্ছেন। এটা রাজনীতি করার জায়গা ? তৃণমূল সরকার বলছে বাংলা এগিয়ে । অথচ বাংলা অনেক পিছিয়ে । রাজ্য থেকে লাখ লাখ মানুষ বাইরে গিয়ে কাজ করছে । কেন সেই শ্রমিকদের বাইরে কাজ করতে যেতে হচ্ছে? আমি একজন সাংসদ হিসেবে কাজের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম । সেই কারণে এখানে ব্যানার লাগানো হয়েছিল । সেই ব্যানার তৃণমূলের লোকজন ছিঁড়ে দিয়েছে। তৃণমূলের লোকজন আমাদের কর্মীদের শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেছে। তৃণমূলের লোকজন এখানে শুধু রাজনীতি করার জন্য আসছে।”
স্থানীয় কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরি বলেন, “লকডাউন অমান্য করেই BJP-র লোকজন আন্ডারপাস নির্মাণস্থান পরিদর্শন করতে আসেন । আমি সেই সময় BJP-র লোকজনদের লকডাউন মানতে অনুরোধ করি । সাংসদও লোকজন নিয়ে নির্মাণস্থান পরিদর্শনে আসেন। এই আন্ডারপাস দীর্ঘদিনের চাহিদা। আমরা স্থানীয় লোকজনের মতামত নিয়ে DRM-এর সঙ্গে দেখা করি । DRM অফিস থেকে জানানো হয়েছিল রাজ্য সরকারের অনুমতি পেলেই এই কাজ করা যাবে । সেই অনুমতি পাওয়ার পর 2017 সালে এই কাজ শুরু হয়। কাজ শুরু হওয়ার পর অনেকেই চেষ্টা করেছিল এই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার। তা না হলে অনেকদিন আগেই এই আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যেত । কে কোথায় ব্যানার লাগাচ্ছে, কে ছিঁড়ছে তা আমরা বলতে পারব না । যাঁরা এই সব অভিযোগ তুলেছে তাঁরাই এসব ঘটাচ্ছে। শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ BJP-র মনগড়া। BJP এই আন্ডারপাস নিয়ে রাজনীতি করছে।”