মালদা, 31 মে : গতকালই পুরুলিয়ার প্রশাসনিক সভায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এ নিয়ে প্রশাসনিক মহলে হইচই পড়ে যায় । এরই মধ্যে আবারও হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে সরকারি পাট্টা প্রাপকের জমি অন্যজনকে হস্তান্তরের অভিযোগ উঠল (Allegations of land encroachment against TMC leader)। এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতার । তাঁর বিরুদ্ধে পাট্টা প্রাপককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগও উঠেছে । অদ্ভুতভাবে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে দলের কেউ বলে মানতে নারাজ হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক । গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ।
আক্রান্ত ব্যক্তির নাম ফায়েদ শেখ । বৃদ্ধ হয়েছেন তিনি, মূলত ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন । বেধড়ক মারে অসুস্থ হয়ে গত 11 দিন ধরে তিনি হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । তাঁর স্ত্রী সাবেরা খাতুনের অভিযোগ, "এক বছর পর 21 মে, শনিবার স্বামী ভিনরাজ্য থেকে ঘরে ফিরেছিল । সেদিনই ওকে বেধড়ক মারধর করে এলাকার মুস্তাক আর তাঁর সঙ্গীরা । ওঁরা আমার 15 কাঠা জমি কেড়ে নিয়েছে । ওই জমি আমরা পাট্টায় পেয়েছিলাম । তার কাগজপত্র সব আমাদের নামে আছে । জমির জন্যই ওঁরা আমার স্বামীকে মারধর করে । জমিও ওঁরা টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেছে । আমরা আমাদের জমি ফেরত চাই ।"
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুয়া গ্রামের বাসিন্দা ফায়েদ শেখ ও তাঁর স্ত্রী সাবেরা খাতুনকে বাম আমলেই 15 কাঠা জমির পাট্টা প্রদান করা হয় । ওই জমিতে চাষাবাদ করে তাঁরা সংসার চালাচ্ছিলেন । জমিতে বেশ কিছু আমগাছও লাগিয়েছিলেন । তাঁদের সেই জমিতে নজর পড়ে ওই এলাকার জমিদারের বংশধর মুক্তার ইকবালের । বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুক্তার হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাসের হাত ধরে শাসকদলে যোগদান করেন । অভিযোগ, গত 21 মে মুক্তার দলবল নিয়ে এসে ওই জমিটি টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেন । সেখানে টিনের ঘর তৈরি করতে শুরু করেন । বাধা দেওয়ায় তাঁরা ফায়েদকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ । এই ঘটনায় সাবেরা খাতুন ও তাঁর মেয়ে ফাহিমা সুলতানা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সরকারি পাট্টার জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ।
ফাহিমা বলেন, "আমাদের ওই 23 শতকই জমি ছিল । 30-35 বছর ধরে বাবা সেখানে চাষবাস করে সংসার চালাত । সেই জমিটা জমিদারের ছেলেরা টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে নিয়েছে । এর আগেও তাঁরা একই কাজ করেছিল । সেবার পুলিশ তাদের বাধা দেয় । তাঁকে থানায় তুলে নিয়ে যায় । জমিতে পুলিশের ক্যাম্প বসে । ওই ক্যাম্প তুলে নেওয়ার পরেই ফের ওঁরা আমাদের জমি দখল করে নিয়েছে । পাট্টার কাগজপত্র সব বাবা-মা’র নামে রয়েছে । গত শনিবার ওঁরা জমি দখল করার সময় বাবা বাধা দিলে বাবাকে বেধড়ক মারধর করে । আসলে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক টাকার বিনিময়ে জমিটি মুক্তারের নামে রেকর্ড করে দিয়েছে ।"