মালদা, 5 অক্টোবর : নিজেদের হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে । মৃতের পরিবারের অভিযোগ মোথাবাড়ি থানা ও তার অধীনে থাকা পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে । তবে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ । তাদের দাবি, এলাকাবাসীর রোষ থেকে বাঁচাতে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় । পরবর্তীতে তাঁকে জেলা আদালতেও পাঠানো হয় । অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে মালদা মেডিক্যালে ভর্তি করা হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় । ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক-2 নম্বর ব্লকের কাগমারি সংলগ্ন তুর্তিপুর গ্রামে । গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ।
মৃতের নাম বিজয় মণ্ডল । বয়স 45 বছর । পেশায় শ্রমিক ছিলেন তিনি । স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিজয় প্রতিদিন মদ্যপান করতেন । নেশায় বুঁদ হয়ে বাড়িতে ফিরে নিয়মিত অশান্তি করতেন ৷ স্ত্রী ও ছেলেকে মারধরও করতেন ৷ গত বুধবারও মদ্যপান করে তিনি বাড়ি ফেরেন । স্ত্রী-ছেলেকে মারধর শুরু করেন । তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্ত্রী সুন্দরী মণ্ডল ছেলেকে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে পাঠান । পুলিশ যাতে স্বামীকে একটু শাসায়, তার জন্যই ছেলেকে ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলেন তিনি । খবর পেয়ে ক্যাম্প থেকে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁদের বাড়িতেও আসেন । সেই সময় বিজয় ওই দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গেও বচসা শুরু করেন । ধস্তাধস্তিও হয় খানিক ৷ অভিযোগ, এরপরেই ওই দুই সিভিক ভলান্টিয়ার মারতে মারতে বিজয়কে ক্যাম্পে নিয়ে যান । সেখানে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় । পরে মোথাবাড়ি থানায় নিয়ে গিয়েও চলে মারধর ৷ এরপর জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে তাঁকে জেলা আদালতে পাঠানো হয় । বিচারক তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন । সংশোধনাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে মালদা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয় । গতকাল রাতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর ।
সুন্দরী মণ্ডলের অভিযোগ, "স্বামীর-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল । সেই সময় ছেলে ক্যাম্পে গিয়ে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডেকে নিয়ে আসে । ছেলে চেয়েছিল, স্বামী যাতে মদ খেয়ে বাড়ি এসে আমাকে মারধর না করে, তার জন্য পুলিশ তাকে বোঝাবে । কিন্তু বোঝানোর বদলে সিভিক ভলান্টিয়াররা মেরে তার হাত ভেঙে দেয় । গোটা রাস্তা মারতে মারতে ক্যাম্পে নিয়ে যায় । সেখানেও তাকে মারধর করা হয় । এরপর থানায় নিয়ে গিয়েও স্বামীকে মারা হয়েছে । পরদিন সকালে স্বামীকে ছাড়াতে আমরা থানায় যাই । সেখান থেকে বলা হয়, ওকে কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । কোর্ট থেকে তাকে ছাড়াতে হবে । কোর্ট থেকে স্বামীকে জেলে পাঠানো হয় । কিন্তু কবে সে মারা গিয়েছে জানি না । গতকাল রাতে থানা থেকে আমাদের জানানো হয়, স্বামী মারা গিয়েছে । পুলিশের মারেই আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে ।"