মালদা, 11 সেপ্টেম্বর : সাপের গর্তে হাত দিয়েছেন । পৌরসভার ভূতুড়ে কর্মীদের চিহ্নিত করে বরখাস্ত করা শুরু করেছেন । তিনি জানেন, এর জন্য তাঁকে প্রচুর বাধার মুখোমুখি হতে হবে । পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হবে । কিন্তু পরিণতি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন পুরাতন মালদা পৌরসভার প্রশাসক বৈশিষ্ঠ্য ত্রিবেদী । তাঁর এহেন সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাচ্ছে বিরোধীরাও । ইতিমধ্যে দাবি উঠতে শুরু করেছে, শুধু পুরাতন মালদা নয়, ইংরেজবাজার পৌরসভাতেও প্রচুর ভূতুড়ে কর্মী রয়েছে । যাঁরা কোনও কাজ না করেই বেতন গুনছেন । সেই পৌরসভার প্রশাসককেও এসব ভূতুড়ে কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে । যদিও ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রশাসক সুমালা আগরওয়ালা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তেমন কোনও কর্মী এই পৌরসভায় নেই ৷ তিনি বিরোধীদের সেই সমস্ত কর্মীর নাম ও ঠিকানা জমা দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন ।
পুরাতন মালদা পৌরসভার প্রশাসক 18 জন অস্থায়ী কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন । এই 18 জনের মধ্যে দু'জন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের, ছ'জন 2 নম্বর ওয়ার্ডের, দু'জন 11 নম্বর ওয়ার্ডের, একজন 14 নম্বর ওয়ার্ডের, চারজন 16 নম্বর ওয়ার্ডের ও তিনজন 17 নম্বর ওয়ার্ডের । জানা যাচ্ছে, এই কর্মীরা পৌর এলাকায় মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করার দায়িত্বে ছিলেন । গতকালই এই কর্মীদের বরখাস্তের নোটিশ পৌরসভার বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । এনিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে শাসকদলের অন্দরে ।
ইটিভি ভারতকে পুরাতন মালদা পৌরসভার প্রশাসক বৈশিষ্ঠ্য ত্রিবেদী বলেন, "কাউন্সিলর থাকাকালীনই আমি বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে বলেছি, এসব বন্ধ করা হোক । কিন্তু তখন আমার সঙ্গে বিরোধীদের মতো আচরণ করা হত । এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে এই পৌরসভার দায়িত্ব দিয়েছেন । তিনি চান, গোটা রাজ্যে স্বচ্ছভাবে প্রশাসন পরিচালনা করা হোক । তিনি নিজেও স্বচ্ছভাবে সমস্ত কাজ করে চলেছেন । বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে তিনি কোনও দল বা রং দেখেন না । আমিও তাঁর দেখানো পথেই চলার চেষ্টা করছি । এই পৌরসভায় অনেক ভূতুড়ে কর্মী রয়েছেন । যাঁরা নেতাদের বাজার করে, গাড়ি ধুয়ে দেন । পৌরসভায় তাঁদের দেখা যায় না । তাঁদের নামও পৌরসভার অনেকেই জানেন না । আমি এই কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি । গতকাল এমন 18 জনকে ধরতে পেরেছি । তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে । আরও অনেক এমন কর্মী রয়েছেন । বিদ্যুৎ ও পানীয় জল বিভাগে এমন বেশ কিছু কর্মী রয়েছে । কেউ না চিনলেও তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে টাকা ঢুকে যাচ্ছে । এঁদের বেতন দিতে প্রতি মাসে পৌরসভার নিজস্ব তহবিলের 36 লক্ষ টাকা খরচ হয় । জানতে পেরেছি, এমন প্রায় 150 কর্মী এখানে রয়েছেন । আরও বড় বিষয়, এই পৌরসভায় কর আদায়ের ক্ষেত্রেও প্রায় 20 লক্ষ টাকার দুর্নীতি রয়েছে । অনেকে পৌরসভার কর বিভিন্ন উপায়ে নিজের পকেটে ঢুকিয়েছে । এমন 3-4 জন কর্মীর সন্ধান পেয়েছি । এনিয়েও তদন্ত শুরু করেছি । তার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । জানি, এই কাজ করার জন্য আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করা হবে । আমার গদি চলে যেতে পারে । কিন্তু গদির জন্য আমি নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাব না । তাতে যা হয় হবে । আমি তৈরি হয়েই বসে রয়েছি ।"