কলকাতা, 2 মার্চ : জন্ম থেকেই দৃষ্টিশক্তি ছিল ক্ষীণ ৷ কিন্তু মনের জোরে সমস্ত শারীরিক প্রতিকূলতাকে জয় করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন৷ ব্যর্থতা এসেছে, একবার নয় বারবার ৷ কিন্তু থেমে থাকেননি ৷ আজ তিনি সফল ৷ একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন ৷ পাশাপাশি গানও শেখান ৷
অর্পণা মজুমদার ৷ বাড়ি বরানগরে ৷ তিন বছর হতেই ছোটোবেলায় বাবা-মা তাঁকে স্কুলে ভরতি করেছিলেন ৷ কিন্তু স্কুল থেকে অভিযোগ আসে অর্পণা বোর্ড ঠিকমতো দেখতে পান না ৷ এরপর ডাক্তার দেখানো হয় ৷ ডাক্তার সাফ জানিয়ে দেন অর্পণা দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ ৷ এরপরই প্রথাগত শিক্ষার পর্ব শেষ হয়ে যায় ৷ পড়াশোনা কয়েকবছরের জন্য বন্ধ ছিল ৷ তখন বাড়িতেই মায়ের কাছে গান শিখতেন ৷ বাড়িতেই পড়াশোনা করতেন ৷ ফের স্কুল বা কলেজে গিয়ে পড়াশোনা করবেন ৷ সে সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছিল ৷ কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা কখনই বন্ধ করেননি অপর্ণা ৷ মনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি অন্ধকারের মধ্যেই আলোর খোঁজ করছিল ৷ কয়েকটা বছর পেরিয়ে গেছিল ঠিকই কিন্তু হার মানেননি ৷
সালটা 2002 ৷ পরিচয় হয় ভয়েজ অব ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ৷ শুরু হয় স্বপ্নের উড়ান৷ 2004 সালে রেকর্ডিং শুনে ও রিডারের সাহায্য নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন৷ 2006 সালে পাশ করেন উচ্চমাধ্যমিক ৷ পাশাপাশি শংকর নেত্রালয়ে চক্ষু পরীক্ষাও করান ৷ জানতে পারেন 75% দৃষ্টিহীনতা থাকলেও 25% দেখার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর ৷ এরপর হাই-পাওয়ারের বিশেষ চশমা সাহায্য নেন ৷ এখন কিছুটা হলেও দেখতে পান ৷ 2009 সালে রবীন্দ্রভারতী থেকে স্নাতক হন ৷ বিষয় ছিল সংগীত ৷ এরপর SSC পরীক্ষা দেন ৷ কিন্তু ব্যর্থ হন ৷ অনেকে সেসময় অনেক কথাই বলেছিল ৷ কিন্তু সেসব গুরুত্ব না দিয়ে জেদের সঙ্গে এগিয়ে চলেন ৷ রবীন্দ্রভারতীতে সংগীত নিয়ে পড়ার সময়ই 2008 সালে দূরশিক্ষার মাধ্যমে বাংলায় অনার্স নিয়ে পাশ করেন ৷ নরেন্দ্রপুরে B.Ed-এ ভরতি হন ৷ এরপর ফের SSC পরীক্ষা দেন ৷ এবার আর ব্যর্থতার মুখ দেখতে হয়নি ৷ পরীক্ষায় পাশ করে 2019 সালে হাওড়ার চামরাইল বালিকা বিদ্যালয় ( উচ্চমাধ্যমিক)-এ কাজে যোগ দেন ৷ প্রায় এক বছর হল ৷ এখন পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয় পড়ান ৷ নবম এবং দশম শ্রেণীতে বাংলা বিষয় পড়ান ৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে সংগীত শেখান ৷
চাকরিক্ষেত্রে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে ? উত্তরে অর্পণা বলেন, "এক বছর হয়ে গেছে ৷ তেমন একটা অসুবিধা হয়নি ৷ আমি ভেবেছিলাম আমাকে বোধহয় গার্ড হিসেবে পরীক্ষার হলে রাখা হবে না ৷ কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষাতেও আমাকে গার্ড হিসেবে রাখা হয়েছিল ৷ আমার খুব সুনামও হয়েছে যে আমি নাকি খুব ভালো গার্ড ৷ পরীক্ষার খাতা দেখার ক্ষেত্রে রিডারের সাহায্য নিতে হয় ৷ কারণ নানা রকম হাতের লেখা থাকে যেটা আমার দেখতে অসুবিধা হয় ৷ কিন্তু ক্লাস নিতে কোনও সমস্যা হয় না ৷ বোর্ড ওয়ার্কও আমি করতে পারি ৷ " জানান, কাজে যোগ দেওয়ার আগে অনেকেই ভয় দেখিয়েছিল ৷ তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা খুব সহযোগিতা করেছেন৷ পাশাপাশি অন্য শিক্ষিকারাও খুব সাহায্য করেন ৷ কখনও তেমন কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁকে ৷