কলকাতা, 28 জুন : আগামী শুক্রবার, 2 জুলাই বসতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন (West Bengal Assembly Session) ৷ এবারের বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম এই অধিবেশন বসতে চলেছে ৷ আর তার ঠিক দিন কয়েক আগে সম্মুখসমরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar) ৷
সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের পর বিধানসভার প্রথম অধিবেশন রাজ্যপালের ভাষণ দিয়ে শুরু হওয়ার কথা ৷ কিন্তু রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ও সাংবিধানিক প্রধানের এই চাপানউতোরে সেই ভাষণ হবে তো ? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে ৷ পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠছে যে রাজ্যপাল কি রাজ্যের তরফে নির্ধারণ করে দেওয়া ভাষণ পাঠ করবেন ? নাকি নিজেই তাতে অন্য কিছু যোগ করবেন ?
আরও পড়ুন: "ছোটবোন" মমতার অভিযোগ ওড়ালেন রাজ্যপাল
কেন উঠছে এই প্রশ্নগুলি ? এর উত্তর পেতে গেলে তাকাতে হবে সোমবার রাজ্য রাজধানীতে ঘটে যাওয়া দু’টি সাংবাদিক বৈঠকের দিকে ৷ একটি সাংবাদিক বৈঠকে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ করলেন ৷ সরাসরি জানালেন যে 1996 সালের হাওয়ালা-জৈন কেলেঙ্কারির চার্জশিটে নাম ছিল জগদীপ ধনকড়ের ৷
এদিন দুপুরের ওই সাংবাদিক বৈঠকের পর সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজ্যপাল ৷ সেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর তোলা অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দেন ৷ আজই কেন মুখ্যমন্ত্রী এমন অভিযোগ তুলেছেন, সেই প্রসঙ্গে বিধানসভার তাঁর ভাষণের খসড়ার কথা তুলে ধরেন ৷ রাজ্যপাল বলেন, 2 জুলাইয়ের ভাষণের খসড়া তাঁর কাছে এসে পৌঁছেছে ৷ কিন্তু সেই ভাষণের কিছু অংশে তাঁর আপত্তি রয়েছে ৷ বাস্তবে যা ঘটছে, তার সঙ্গে ওই ঘটনার কোনও মিল নেই ৷
আরও পড়ুন: হাওয়ালা-জৈন কেলেঙ্কারির চার্জশিটে নাম ছিল ধনকড়ের, অভিযোগ মমতার
এদিন সন্ধ্যায় রাজভবনে দাঁড়িয়ে তিনি জানালেন, আপত্তির কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি চিঠি লেখেন ৷ সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চান ৷ চিঠি পাওয়ার পরই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ফোন করেন ৷ তাঁদের মধ্যে এই নিয়ে কথা হয় ৷
আর এখান থেকেই প্রশ্নটা উঠছে যে 2 জুলাই ঠিক কী হবে ? এর আগে একবার রাজ্যপাল ভাষণ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল শাসকদলের অন্দরে ৷ সেবার রাজ্যপালের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়নি বিধানসভা থেকে ৷ এদিন রাজ্যপালও সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন ৷
আরও পড়ুন: কেন পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে এত টানাপোড়েন ?
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে গত প্রায় দু’বছর ধরে যে চাপানউতোর চলছিল, তা চরম পর্যায়ে পৌঁছাল ৷ আর রাজ্যপাল সম্ভবত তাঁর ভাষণে ভোট পরবর্তী হিংসার (Post Poll Violence) বিষয়টি উল্লেখ করতে চান ৷ তাই তিনি রাজ্য সরকারের পাঠানো ভাষণে কিছু বদল আনতে চেয়েছেন ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে স্বাভাবিক ভাবেই এই বিষয়টি ভাষণে অন্তর্ভুক্ত করতে দেবে না শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ আর রাজ্যপালের ভাষণ স্বরাষ্ট্র দফতর লিখে দেয় ৷ সেটাই রাজ্যপাল পাঠ করেন ৷ এটাই সংসদীয় রীতিতে দস্তুর ৷ কিন্তু জগদীপ ধনকড় কি সেই দস্তুর মেনে চলবেন, নাকি তিনি নিজের মতো করেই ভাষণে কিছু অংশ যোগ করে বলবেন ৷ যেখানে ভোট পরবর্তী হিংসার কথা বা তিনি যে বিষয়টি উল্লেখ করতে চান, সেটা থাকবে ৷
আরও পড়ুন: Firing at Jagatdal : অর্জুন সিংয়ের বাড়ি কাছেই চলল গুলি, জখম বিজেপি সমর্থক
আর এমন যদি ঘটে তাহলে কি এবার রাজ্যপালের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বিধানসভা থেকে ? নাকি রাজ্যপাল নিজেই বয়কট করবেন এবারের অধিবেশন ৷ এদিন রাজভবনে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল রাজ্যপালকে ৷ কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান ৷ তাই এখন অপেক্ষা করতে হবে শুক্রবার পর্যন্ত ৷