কলকাতা, 11 এপ্রিল : আদালতে বিস্ফোরক । তবে তৃণমূলের মুখপাত্র হিসাবে সাবধানী । কোথাও আবেগ তাড়িত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন । আবার কোথাও অতীতের মন্তব্যকে আড়াল করতে সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন ।
এ কেমন কৌশল ? বাস্তবে কি এটা কোনও কৌশল, নাকি দিশেহারা কুণাল ! নাকি কুণাল ঘোষের একের পর এক মন্তব্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভালোভাবে নিচ্ছে না, তাই অবস্থান বদলে সাবধানী তিনি । একই দিনে রামধনুর মতো রং বদলালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (TMC Leader Kunal Ghosh) । আর তার এই অবস্থান নিয়েই দলের অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা ।
ঘটনার সূত্রপাত দু’দিন আগে ৷ এসএসসি নিয়োগ মামলায় সেদিন কুণাল ঘোষের করা মন্তব্য রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Minister of Mamata Banerjee Cabinet Partha Chatterjee) প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল । এরপর পার্থবাবুর হয়ে সাফাই দিতে আসরে নামেন রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Bengal Minister Firhad Hakim) । মন্ত্রিত্ব নিয়ে তিনি পাল্টা খোঁচা দেন কুণালকে ।
এতে অবশ্য বিতর্ক থেমে যায়নি । পাল্টা মন্ত্রিত্ব নিয়ে জবাব দেন কুণালও । এখানেই কিন্তু শেষ হয়নি গোটা বিষয়টি । আজ বিধাননগরে একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে রীতিমতো তার দলের মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি । বলেন, ‘‘আইকোর মডেলকে যিনি তুলে ধরেছিলেন, তিনি আজ মন্ত্রী । তিনিই তখন আমাকে পাগল বলেছিলেন । তিনি এখন দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন । তাঁকে ঘাড় ধরে জেলে ঢোকানো উচিত ।’’
আরও পড়ুন :Firhad Hakim on SSC Recruitment Scam : কুণাল মন্ত্রিসভার কেউ নয়, এসএসসি দুর্নীতি প্রসঙ্গে পার্থর পাশে ফিরহাদ
এখানেই শেষ নয়, আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখন তো অনেক প্রভাবশালীর চিকিৎসা হচ্ছে উডবার্ন ওয়ার্ডে । কিন্তু জেলে থাকা অবস্থায় আমার দাঁতের যন্ত্রণার চিকিৎসা হয়নি । এখন এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ড অসুস্থদের চিকিৎসাস্থল নয়, ওটা কয়েদিদের আশ্রয়স্থল ।’’ এদিন কুণাল ঘোষের বক্তব্য রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে ।
তারপরই এদিন বিকালে তৃণমূলের মুখপাত্র হিসেবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কুণাল । সেখানে আবার এসএসসি প্রসঙ্গ তুলতেই কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এটি যেহেতু আদালতের সূত্রে খবর হয়েছে । এখনও পুরো রায় খতিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি । ফলে এই বিষয়ে আগে দেখে দলের সঙ্গে কথা বলে তারপর এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেব ।’’ এরপরই সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, তাহলে কি আপনি পুরনো অবস্থান থেকে সরে আসছেন, সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের মুখপাত্র ।
আরও পড়ুন :Kunal Ghosh explosive comment : "মন্ত্রী হয়ে ঘুরছেন, ঘাড় ধরে জেলে ঢোকানো দরকার", থামছেন না কুণাল
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সময়টা ভাল যাচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেসের । একের পর এক নির্বাচনে মানুষের সমর্থন যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শাসক দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব । আর এখন তা শুধু তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যেও । আর তাই শীর্ষ নেতাদের সামলাতে গিয়ে অনেকটাই অস্বস্তিতে দল ।
এই বিষয়ে যাঁর নাম না বললেই নয়, তিনি হলেন কুণাল ঘোষ । প্রাক্তন সাংসদ-সাংবাদিক এই রাজনীতিক বর্তমানে দলের গুরু দায়িত্বে রয়েছেন । অথচ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্ন তুলে একের পর এক মন্তব্য করে যাচ্ছেন তিনি ৷ যা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে । আর সে কারণেই কি দলের নির্দেশে এই অবস্থান বদল কুণালের, উঠছে প্রশ্ন ৷