পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

কেন কোরোনা রোগী ফের সংক্রমিত ? - kolkata

একাধিকবার দেখা গেছে কোরোনামুক্ত হয়ে ওঠার পরও অনেকেই ফের আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে ৷ কী কারণে এই সংক্রমণ ! জানালেন চিকিৎসকরা ৷

ছবি
ছবি

By

Published : Aug 7, 2020, 7:26 AM IST

Updated : Aug 7, 2020, 7:33 AM IST

কলকাতা, 7 অগাস্ট : কোরোনা নিয়ে এবার নতুন চিন্তা চিকিৎসকদের মাথায় ৷ কোনও রোগী কোরোনামুক্ত হয়ে ওঠার পরও কেন পুনরায় আক্রান্ত হচ্ছেন রোগে ? এই বিষয়ে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা বলছেন চিকিৎসকরা । কারণ, এই রোগটি নতুন। এখনও পর্যন্ত এর বিষয়ে সেভাবে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি । আরও অনেক সমীক্ষা, গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মত চিকিৎসকদের ।

ইতিমধ্যেই দেখা গেছে কোরোনামুক্ত হওয়ার পরও আবারও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে ৷ তার মধ্যে রয়েছেন কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট এবং এক নার্স । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই দুই জনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল । দু'জনই রয়েছেন হোম আইসোলেশনে । শুধুমাত্র এই দু'জন নন এই রকম উদাহরণ রয়েছে একাধিক । কিন্তু, একবার সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবার কেন আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা বলেছেন । তিনি বলেন, "এখনও পর্যন্ত এর সঠিক কারণ জানা যায়নি । তবে যেটা সন্দেহ হচ্ছে, ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে, সেটা সঠিক পরিমাণে তৈরি হচ্ছে না, সেই কারণে নতুন করে সংক্রমণ ঘটলেও ঘটতে পারে । অথবা, অ্যান্টিবডি স্বল্পক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে । এক-দেড় মাস পর্যন্ত থাকছে, তারপরে আর থাকছে না । অথবা এমনও হতে পারে ভাইরাস শরীরে রয়ে গেছে । এবং নিজের চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে । তবে কোরোনা SARS-CoV-2-এর কতগুলি প্রজাতি বা স্ট্রেইন রয়েছে তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি । এই সব বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন অমিতাভ নন্দী ।

অন্যদিকে, এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক মাইক্রোবায়োলজিস্ট বলেন, "এই রোগটি নতুন, এখনও পর্যন্ত এই রোগের প্যাথফিজিওলজি ভালোভাবে আমরা বুঝে উঠতে পারিনি । কোনও একটি রোগ সম্পর্কে জানতে হলে যতটা সময় লাগার কথা, সেটা জানার আগেই এই রোগ এমন আকার নিয়ে নিয়েছে যে, আমাদের এই রোগের ম্যানেজমেন্টে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে । সাধারণত দ্বিতীয়বার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা নয় । কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেটা দেখা যাচ্ছে খুব বেশি মানুষের অ্যান্টিবডি টেস্ট হয়নি । একবার সংক্রমিত হয়ে গেছে তারপরেও মানুষের শরীরে খুব একটা অ্যান্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে না ।" কোনও একটি রোগ হলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় । প্রথমে IgM হয় তার পরে IgG হয়। IgM তিন থেকে চার মাস পরে ধীরে ধীরে কমে যায়। IgG অনেকদিন পর্যন্ত থাকে। কোনও কোনও রোগের ক্ষেত্রে সারা জীবন থাকে, কোনও রোগের ক্ষেত্রে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকে । যত দিন এটা থাকে তত দিন দ্বিতীয়বার সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না । তিনি বলেন, " আরও একটি বিষয় হয়, সেল মিডিয়েটেড ইমিউনিটি,শরীরে কতগুলি T-সেল, B-সেল থাকে । যে সেলগুলি মূলত লিম্ফোসাইট । কোনও একটি রোগ হলে তার বিরুদ্ধে এই সেলগুলির মধ্যে মেমোরি তৈরি হয় । ফলে, সেই রোগটি আবার এলে শরীর বুঝতে পারে । শরীর তখন এই রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তৈরি হয়। এই T-সেলের রেসপন্স বুঝতে হলে আমাদের আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে ।"

এই বিষয়ে কলকাতার ইনফেকশাস ডিজিজেস অ্যান্ড বেলেঘাটা জেনারেল (ID&BG) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "যে কোনও সংক্রামক রোগের ধর্ম, শরীরে যদি জীবাণু প্রবেশ করে তা হলে শরীর ওই নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে । পরবর্তী কালে ওই জীবাণুই যদি রূপ বদলে অর্থাৎ, অ্যান্টিজেনিক প্রোপার্টি আগে যেমন ছিল তার থেকে একটু বদলে যদি যায়, তা হলে শরীর সেটাকে ডিটেক্ট করতে পারে না । সেই জন্য দ্বিতীয়বার আবার আক্রান্ত হতে দেখা যায় । COVID-19-এর ভাইরাসের বার বার মিউটেশনের জন্য আলাদা আলাদা প্রজাতি অর্থাৎ, স্ট্রেইন তৈরি হয় । বার বার বদলে যাওয়ার কারণে ভাইরাসের প্রোপার্টি কিছুটা নষ্ট হয়ে যায় । শরীর ডিটেক্ট করতে না পারার কারণে দ্বিতীয়বার এই রোগ হয়‌ । ভাইরাসের একই ধরনের প্রোপার্টি নিয়ে যদি কেউ সংক্রমিত হন, তা হলে প্রতিরোধ করে দেয় শরীর । কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার COVID-19-এ সংক্রমিত হতে দেখা যাচ্ছে । তবে, এটাও দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয়বার সংক্রমণ ঘটলেও শরীরকে পুরোপুরি কাবু করতে পারে না COVID-19। কারণ, এর ভাইরাস পুরোপুরি তার অ্যান্টিজেনিক প্রোপার্টি চেঞ্জ করছে না । কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে । এই কারণে, শরীর কিছুটা প্রোটেকশন দিচ্ছে । " ID&BG হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন এই প্রধান বলেন, " COVID-19-এর ভাইরাস SARS-CoV-2, এটা RNA ভাইরাস । RNA ভাইরাসের স্ট্রেইন বার বার চেঞ্জ হয়‌ । এই কারণে এর ভ‍্যাকসিন তৈরি করাও খুব কঠিন । একবার সংক্রমিত হলে যে সংক্রমণ আর ঘটবে না, এটা বলাও খুব কঠিন‌ । যদিও, পরবর্তী কালে সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রোগের সিভিয়ারিটি খুব কম হচ্ছে ।"

অন্যদিকে জোকা ESI হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রঞ্জয় মজুমদার বলেন, "এটা কিন্তু আসলে মিস ডায়াগনসিস । ভাইরাসের RNA-গুলি শরীরে থেকে যাচ্ছে । আরও একবার ডিটেক্ট হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে COVID-19 হয়েছে। কিন্তু, আসলে তা নয় । যিনি সংক্রমিত হয়েছেন তাঁর শরীরে ভাইরাসের ডেডবডিগুলির কণাগুলি থেকে যাচ্ছে। সেই কণাগুলি আবার COVID-19-এর টেস্টে ধরা পড়ছে ।"

একই জনের শরীরে ফের COVID-19-এর সংক্রমণের বিষয়টি কতটা চিন্তার? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোনও কোনও রোগের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার অনেক বেশি । কোনও কোনও রোগের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার 50 শতাংশও হতে পারে । COVID-19-এর সংক্রমণের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার খুব বেশি হচ্ছে, তা নয় । যদিও, এমনও হচ্ছে যে, হঠাৎ করে কোনও একজনের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল, কিন্তু কেন হল সেটা বুঝতে পারা গেল না । তবে, মৃত্যুর হার কম হলেও, তা কাম্য নয় । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই রোগটি সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত সেভাবে তথ্য পাওয়া যায়নি । তবে, একটু যদি সাবধানতা অবলম্বন করা যায়, যথাযথভাবে যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায়, তা হলে COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যেতে পারে । যদিও, এই বিষয়ে চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "দ্বিতীয়বার COVID-19-এ সংক্রমিত হওয়ার জন্য চিন্তার কোনও কারণ নেই । কারণ, শরীরে কিছুটা প্রোটেক্টিভ অ্যান্টিবডি থাকছে। এর জন্য শরীর কিছুটা প্রোটেকশন দিতে পারছে। যাঁদের ক্ষেত্রে কোমরবিডিটি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও শরীর কিছুটা প্রোটেকশন দিচ্ছে ।"

Last Updated : Aug 7, 2020, 7:33 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details