শুরুতেই বুঝে নেওয়া দরকার যে এই বিপর্যয় মোকাবিলা আইনটি ঠিক কী ? আগে বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে কোনও আইন ছিল না ৷ আর বিপর্যয়ের মোকাবিলা কীভাবে করতে হবে, সেই সম্পর্কেও কোনও ধারণা ছিল না ৷ তাই বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে আইন তৈরি করা হয় ৷
সাধারণ ভাবে আইন মানে পুলিশ রাস্তায় নেমে মারবে বা জরিমানা আদায় করবে, তা কিন্তু নয় ৷ এই আইনে বলা আছে একটা বিপর্যয় কীভাবে আসতে পারে, তার অভিঘাত কতটা হবে, কোথায় তার সবচেয়ে বেশি অভিঘাত হতে পারে, এই সব নিয়ে নীতি তৈরি করার জন্যই এই আইন তৈরি করা হয় ৷
এখানে সেই আইন তৈরি করা হল এবং বলা হল যে এই ধরনের কোনও নীতি ছিল না ৷ এখন শুরু করা হল ৷ কীভাবে শুরু হল ? এটাকে একটা পিরামিডের মতো ধরা যেতে পারে ৷ দু’টো কমিটি করা হল - ন্যাশনাল লেভেল কমিটি এবং স্টেট লেভেল কমিটি ৷ ন্যাশনাল লেভেল কমিটিতে পিরামিডের মাথায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি এই কমিটির চেয়ারপার্সন ৷ তার নিচে থাকবেন সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ৷ তার নিচের স্তরে সচিব পর্যায়ের আধিকারিক, জেলাশাসক, মহকুমাশাসক ও বিডিও-রা ৷ একই ভাবে স্টেট লেভেল কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারপার্সন ৷ তার নিচে সচিব পর্যায়ের আধিকারিক, জেলাশাসক, মহকুমাশাসক ও বিডিও-রা থাকবেন ৷ এই কমিটির কাজ যে কোনও বিপর্যয় সম্বন্ধে নিয়মিত বৈঠক করা ৷ কোনও বিপর্যয় এলে তা কীভাবে সামলানো হবে, তা ঠিক করা ৷
আরও পড়ুন :বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রয়োগ করা উচিত মোদি-শাহর বিরুদ্ধে : অভিষেক
এটা গেল একটা দিক ৷ এবার কতগুলি ঘটনা ঘটল ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলাইকুণ্ডায় এসে একটা বৈঠক করলেন ৷ প্রধানমন্ত্রী যখন এসেছেন, ধরে নিতে হবে তিনি সেখানে চেয়ারপার্সন ৷ আর যে রাজ্যে এসেছেন, ধরে নিতে হবে সেই রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রীও থাকবেন ৷ এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবও থাকবেন বলে ধরে নিতে হবে ৷ এখানে তাঁরা থাকলেন না ৷ প্রধানমন্ত্রী একটা বৈঠক করে চলে গেলেন ৷
এদিকে যে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এত বিতর্ক, তাঁকে তাঁর চাকরি জীবনের শেষদিনে দিল্লিতে ডেপুটেশনে ডাকা হল ৷ সঙ্গে সঙ্গে হইচই হল ৷ প্রশ্ন উঠল, তাঁকে কেন চাকরি জীবনের শেষদিনে ট্রান্সফার করা হল ? অথচ তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে করোনা ও যশ মোকাবিলা করার জন্য তাঁকে তিনমাস এক্সটেনশন দেওয়া হয়েছে ৷
তবে এই ডেকে পাঠানো অবশ্য আইনি ৷ এটা করতে পারে ৷ কিন্তু ওই নির্দিষ্ট আইনের নির্দিষ্ট ধারাতে বলা আছে যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি ৷ রাজ্য সরকার একটি চিঠি দিয়ে বলল যে তারা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়তে পারবে না ৷
সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে কোনও আমলাকেই বদলির ক্ষেত্রে আলোচনা করা হয় না ৷ তাহলে তো দুর্গম, মাও-অধ্যুষিত এলাকায় কেউ যেতেই চাইবে না ৷ এমন অনেক উদাহরণ আছে ৷ সেই কারণেই স্যাট ও ক্যাট-এ (যেখানে রাজ্য-কেন্দ্রের কর্মীদের মামলা হয়) অনেক মামলা জমা পড়ে রয়েছে ৷ যাঁরা বলছেন মত নেওয়ার কথা, তাঁরা কি ভেবে দেখেছেন আগেও মত নেওয়া হয়েছে কি না ? একজন মহিলা আইপিএসকে একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলার মাঝে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু অবসর নেওয়ার দিন এমন ভাবে ডেকে পাঠানোকে আমি নৈতিক ভাবে ঠিক নয় বলেই মনে করছি ৷
আরও পড়ুন :আলাপন অধ্যায় শেষ, নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বললেন মমতা