কলকাতা, 19 জানুয়ারি : 1998 সালে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মের পর সম্ভবত প্রথমবার একদম নতুন ভাবনা চিন্তা নিয়ে সাংগঠনিক নির্বাচন হতে চলেছে । কংগ্রেসের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বিগত 24 বছরে এই দলটি প্রচুর উত্থান-পতনের সাক্ষী । বিশেষ করে বিরোধী হিসাবে রাজ্যের গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে উঠে আসা দল এখন ক্ষমতায় অর্থাৎ রাজ্যের শাসক । এই অবস্থায় দলের নির্বাচন অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ (what will be the outcome of tmc organizational election) ।
গতকাল তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, আগামী 2 ফেব্রুয়ারি থেকে এই সাংগঠনিক নির্বাচনের (TMC Organizational Election) প্রক্রিয়া শুরু হবে । জন্মের পর এই প্রথমবার জাতীয় কর্মসমিতি গঠিত হবে নির্বাচনের মাধ্যমে । ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল - এই তিনমাস ধরে দলের সাংবিধানিক রদবদল থেকে শুরু করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।
এই নির্বাচনের জন্য ভোটার অর্থাৎ ডেলিগেট কারা হবেন, তা জানিয়ে দেওয়া হবে 25 জানুয়ারির মধ্যে । এছাড়াও নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের নাম প্রকাশিত হবে । আগামী 31 মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে দলের সাংগঠনিক নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়া । শীঘ্রই নির্বাচন নিয়ে দলীয়স্তরে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে ।
প্রশ্নটা হল, এই 24 বছরের দলের সাংগঠনিক নির্বাচনে নতুন কী এমন হতে চলেছে, যা জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বা উল্লেখযোগ্য হতে পারে !
আরও পড়ুন :TMC Constitutional Change : অভিষেককে মমতার ডেপুটি করতে সংবিধান বদল তৃণমূলের ?
এমনিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দলে নাকি একটাই পোস্ট বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট ! এমন একটি দলের সাংগঠনিক নির্বাচন কতটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে ওয়াকিবহাল মহলের মনে একটা সন্দেহ রয়েছে ।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তী মনে করেন, তৃণমূল কংগ্রেস এবারের সাংগঠনিক নির্বাচন অতীতের থেকে আলাদা । বর্তমান পরিস্থিতিতে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল কংগ্রেস আক্ষরিক অর্থে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সামান্য হলেও শক্তি বিস্তারের চেষ্টা করছে । অতীতে তৃণমূল শক্তি বিস্তারের চেষ্টা করলেও তা ছিল খাতায় কলমে । কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর যেভাবে ত্রিপুরা, মেঘালয় বা গোয়াতে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে, তা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ।
তাই তিনি মনে করেন, এই অবস্থায় সঙ্গত প্রশ্ন এই প্রতিনিধিদের যদি দলের সর্বোচ্চ গঠনতন্ত্রের অংশ না করা হয়, তাহলে তাঁদের সঙ্গে দলের আত্মিক যোগ তৈরি হবে না । সেখানেই তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয় কার্যকরী সমিতি । সেখানেই তাৎপর্যপূর্ণ দলের সংবিধান সংশোধন । এটা দেখার তৃণমূল শুধুমাত্র লোক দেখানো সাংবিধানিক নির্বাচন করে নাকি বাস্তবে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র বিভিন্ন নেতাদের মধ্যে ভাগ করে দেয় ।
দলের প্রবীণ নেতা এবং রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী যে দলে মাথার উপর থাকেন, সেখানে সব সিদ্ধান্ত যে তিনি নেবেন সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু নেত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন । সেখান থেকেই তৃণমূলের বৃহত্তর যে সংগঠন একটা সুন্দর ব্যালেন্সের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে ।’’
আরও পড়ুন :TMC organizational election : ফেব্রুয়ারির শুরুতেই তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচন, জানালেন পার্থ
যদিও ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, ক্রমেই তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট পরিবারের চারদিকেই আবর্তিত হবে । এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘‘কংগ্রেসি রাজনীতির সঙ্গে তৃণমূলের রাজনীতির ধারার মিল রয়েছে । তাই কংগ্রেসি রাজনীতিতে যেমন গান্ধি পরিবারের প্রভাব উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব । একই ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে তাঁর পরিবারের প্রভাব উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব । আর সবটাই আরও স্পষ্ট হবে এবারের সাংগঠনিক নির্বাচনের পরেই ।’’