কলকাতা, 18 ডিসেম্বর :কলকাতা পৌর নির্বাচনের (KMC Election 2021) ঠিক আগের মুহূর্তে রাজ্যের বিরুদ্ধে নতুন করে সরব হলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ৷ এবার তাঁর নিশানায় মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প ‘মা কিচেন’ (West Bengal Governor Jagdeep Dhankhar on Maa Kitchen) ৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে করোনার দাপট বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল রাজ্যের দুস্থ ও দরিদ্র পরিবারগুলিকে ৷ দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল গরিবগুর্বোদের ৷ এই পরিস্থিতিতে ‘মা কিচেন’ চালু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee resume Maa Kitchen) ৷
আরও পড়ুন :Jagdeep Dhankhar on Howrah Municipal Corporation Bill : প্রয়োজনে হাওড়া কর্পোরেশন বিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারি, হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের
মাত্র পাঁচ টাকায় রান্না করা খাবার কিনতে পাওয়া যায় মা কিচেনে ৷ কলকাতা পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় এখনও এই প্রকল্প চলছে ৷ সেইসব জায়গায় ভিড়ও মন্দ হয় না ৷ নিন্দুকেরা বলে, বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই নাকি এমন জনদরদি প্রকল্প চালু করেছেন মমতা ৷ তবে তাতে আমজনতার বিশেষ মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না ৷ কারণ, সেক্ষেত্রে মা কিচেনের সামনে ভুখা মানুষের এমন লম্বা লাইন পড়ত না ৷ উপরন্তু, একুশের বিধানসভার ফলাফলই বলছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথীর মতো মা কিচেনেও বাজিমাৎ করেছেন মমতাই ৷
এবার সেই ‘মায়ের রান্নাঘর’-এর ব্যয়বরাদ্দ নিয়েই প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান ৷ তাঁর অভিযোগ, এই প্রকল্পে অসাংবিধানিকভাবে অর্থ বরাদ্দ এবং খরচ করা হয়েছে ৷ শনিবার, কলকাতা পৌরভোটের ঠিক আগের দিনই এ নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি ৷ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই নিজের অবস্থান সবাইকে জানাতে বেছে নিয়েছেন টুইটারকে ৷ সেখানে একটি টুইটের সঙ্গে সেঁটে দিয়েছেন বেশ লম্বা একটি চিঠি ৷ যার মোদ্দা কথা হল, মা কিচেনের জন্য রাজ্য যেখানে যত টাকা খরচ করেছে, কার পাই টু পাই হিসাব হাজির করতে হবে ধনকড়ের সামনে ৷ এর জন্য রাজ্যের অর্থসচিবকে সর্বাধিক এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন তিনি ৷
রাজ্যপাল তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, মা কিচেনের ব্যয়বরাদ্দকে আগেই আইনসিদ্ধ করার বন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার ৷ 2021 সালের 5 ফেব্রুয়ারি রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র (Amit Mitra) তাঁর বাজেট বিবৃতিতে জানান, ‘মা’ প্রকল্পের আওতায় একটি কমন কিচেন চালু করা হবে ৷ যেখানে গরিব মানুষকে ন্য়ূনতম মূল্যে পেট ভরা খাবার বিক্রি করা হবে ৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় ভর্তুকি বরাদ্দ করবে সরকার ৷ এই প্রকল্প চালু করতে 2021-22 আর্থিক বছরে মোট 100 কোটি টাকা বরাদ্দ করেন অর্থ মন্ত্রী ৷
আরও পড়ুন :Jagdeep Dhankhar writes to Sukhendu Sekhar Roy : বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে সুখেন্দুশেখরকে জবাবি চিঠি ধনকড়ের
অমিত মিত্র জানিয়েছিলেন, সরকারিভাবে মা কিচেন চালু হবে 2021 সালের 1 এপ্রিল থেকে ৷ আর তা চলবে 2022 সালের 31 মার্চ পর্যন্ত ৷ কিন্তু, বাস্তবে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই মা কিচেন চালু হয়ে গিয়েছে ৷ আর এখানেই সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন ধনকড় ৷ তাঁর বক্তব্য, মাঝ-ফেব্রুয়ারি থেকে 31 মার্চ পর্যন্ত যেভাবে মা কিচেন চালানো হয়েছে, তা বেআইনি ৷ ওই সময় প্রকল্পের খরচ কীভাবে, কোথা দিয়ে জোগান দেওয়া হল, সেটা স্পষ্ট নয় ৷ পাশাপাশি, এই প্রকল্পের সামগ্রিক বরাদ্দের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷ রাজ্যপাল তাঁর চিঠিতে অর্থসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন, চিঠি পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর কাছে মা কিচেনের ব্যয়বরাদ্দ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পাঠাতে হবে ৷ কারণ, রাজ্যপালের আশঙ্কা, মা কিচেন চালু করার জন্য সাংবিধানিক নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে ৷ রাজ্যপালের অভিযোগ, ঠিক না ভুল, তা তদন্তসাপেক্ষ ৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, পৌর নির্বাচনের আগের দিনই এ নিয়ে কেন সরব হলেন তিনি ?