কলকাতা, 20 ফেব্রুয়ারি : শুরুটা ছিল "দিদিকে বলো" দিয়ে। এবার "বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়"। নতুন স্লোগান অস্ত্র তৃণমূলের। গ্রান্ড লঞ্চ হল আজ। এত জাঁকজমক করে স্লোগান লঞ্চ বাংলা রাজনীতিতে এই প্রথম। কিন্তু কেন ?
বাংলার রাজনীতিতে এবার অনেক কিছুই নতুন। যা হয়ত বাংলার মানুষ কোনওদিনই সাক্ষী ছিল না। স্ট্র্য়াটেজি থেকে প্রচার সবেতেই কর্পোরেট লুক। কর্পোরেট অফিস। সে সবুজ হোক বা গেরুয়া। স্ট্র্য়াটেজিস্টরা ঠিক করছেন, তাবড় তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা জনসভায় কী বলবেন, কী পরবেন, কোথায় ক্য়ামেরা বসবে। আজ হল "বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়" স্লোগানের গ্রান্ড লঞ্চ।
এবার আসা মোদ্দা কথায়। কেন এই লঞ্চ, কেনই বা এই স্লোগান ?
মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় প্রথম থেকেই একটা কথা বলে আসছেন। বহিরাগত। তাঁর প্রায় প্রতিটি সভাতেই এই কথা শোনা যাচ্ছে । প্রথমবার শোনার পর রীতিমতো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। দিলীপ, মুকুল, শুভেন্দু তো বটেই; খোদ অমিত শাহ এই তত্ত্বের কাউন্টার করতে পিছপা হননি। গত বছর 19 ডিসেম্বর রাজ্য়ে এসে অমিত শাহ একটি সভায় বলেছিলেন, মমতার বহিরাগত তত্ত্ব ধোপে টিকবে না। আজকের গ্রান্ড লঞ্চ করে মমতা তথা তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিলেন, বহিরাগত তত্ত্বের অস্ত্রেই শান দিয়ে '21-এর নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছে শাসক শিবির।
বহিরাগত তত্ত্বই যে তৃণমূলের অন্য়তম অস্ত্র হতে চলেছে তা অনেকদিন আগে থেকে স্থির হয়েছিল তৃণমূলের কাছে। এমনটা অনেকেই মনে করছেন। কিন্তু কেন এমনটা মনে করেছেন ? রাজনীতিক মহলের মত, নির্বাচনী দরজায় কড়া নাড়া শুরু হতেই দিদি যেন আরও ঘরের মেয়ে হয়ে গেছেন। কোথাও গিয়ে খুন্তি নাড়ছেন, কোথাও গিয়ে বিয়েবাড়ির পাত্রীকে আশীর্বাদ করে আসছেন, আবার কোথাও আদিবাসীদের সঙ্গে পা মেলাচ্ছেন। সবকিছুর মধ্য়ে একটাই বার্তা, আমি তোমাদেরই...।
অন্য়দিকে মমতার এই তত্ত্বকে প্রতিবারই কাউন্টার করছেন অমিত শাহ। বিগত দিনে যতবারই রাজ্য়ে এসেছেন, প্রতিবারই মধ্য়াহ্নভোজ সেরেছেন কোনও পরিবারে। এমনকী তাঁকে বলতে শোনা গেছে, "ভূমিপুত্রকেই মুখ্য়মন্ত্রী করা হবে।" শুধু অমিত নন, রাজ্য় বিজেপি নেতাদের এখন অন্য়তম প্রধান কর্মসূচি হয়েছে কোনও না কোনও পরিবারে মধ্য়াহ্নভোজ।
শুধু মমতা নয়, বিজেপিকে বহিরাগত তকমা সেঁটে দেওয়া শুরু করেছেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও। কয়েকদিন আগে কুলপির সভা থেকে অমিত, বিজয়বর্গীয়র নাম নিয়ে বহিরাগত বলে উল্লেখ করেছেন। আর আজ বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়- স্লোগান লঞ্চ করে সেই তত্ত্বেই যেন আরও বেশি করে শান দেওয়া শুরু হল।
কিন্তু এতে লাভ কি হবে শাসক দলের ?
এবিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে। তাঁদের ধারণা, বিজেপির হয়ে প্রচারে ঝড় তুলতে আনা হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। পর্যবেক্ষক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। তাই শাসকদল বোঝাতে চাইছে যে বিজেপি একজন সঠিক নেতা তৈরি করতে পারেনি যারা দলের প্রচারে ঝড় তুলতে পারবে, তারা কীভাবে বাংলার মানুষের জন্য় সুখকর কাজ করবে ? এমনকী, নির্বাচনে মুখ্য়মন্ত্রী মুখ কাকে করা হবে সেই নিয়েও বিজেপি ধন্দে। দলের অন্দরেও নাকি এনিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়- স্লোগান দিয়ে অন্য়তম প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে চাইছে জোড়াফুল শিবির।