কলকাতা, 26 এপ্রিল: কোরোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় চলছে লকডাউন। আর সেই লকডাউনের কারণে বদলে গেছে আন্দোলনের চরিত্র। দীর্ঘ সাত বছরের বেশি সময় ধরে নিয়োগ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিদিন ফেসবুককে হাতিয়ার করে শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর পেজে জানাচ্ছেন নিজেদের দাবি। এবার সোশাল মিডিয়াকেই হাতিয়ার করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা। আগামী 29 এপ্রিল আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা বাড়ির মধ্যে, মুখে মাস্ক পরে, দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানাবেন। নিজেদের দাবি সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ঘরে বসে প্রতিবাদের সেই ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হবে। ঘরে বসে আন্দোলনের এই নতুন কর্মসূচির জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা।
2014 সালে প্রকাশিত হয়েছিল TET পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি।2015 সালের অগাস্ট মাসে হয় TET পরীক্ষা। ফলাফল প্রকাশ হয় 2016 সালে৷ 2016 সালেই আপার প্রাইমারি স্তরে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া হয়। কিন্তু, তারপরে বেশ কয়েক বছর থমকে থাকে নিয়োগ প্রক্রিয়া। অবশেষে 2019 সালে শুরু হয় ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া। আপার প্রাইমারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ ভেরিফিকেশন চলাকালীনও একাধিক মামলা হয় হাইকোর্টে। ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ। সেইসব কাটিয়ে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আপার প্রাইমারির চূড়ান্ত শূন্যপদ মোট 14 হাজার 88 টি। কিন্তু, আবারও অনিয়মের অভিযোগ তুলে মামলা হয় হাইকোর্টে। সেই মামলা চলাকালীন হাইকোর্টের নির্দেশে প্রভিশনাল মেধাতালিকাও প্রকাশ করেছিল SSC। কিন্তু, সেই মেধাতালিকাতেও দেখা যায় অসঙ্গতি। আবারও হাইকোর্টে হয় ভুরি ভুরি মামলা। নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্ট। এখনও বহাল রয়েছে সেই স্থগিতাদেশ।
এর মধ্যেই কোরোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লকডাউন ঘোষণা হয় রাজ্যজুড়ে। বন্ধ হয়ে যায় হাইকোর্ট। ফলে, আর কয়েকটি শুনানির পরেই একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ পাওয়ার চাকরিপ্রার্থীদের আশা জলে চলে যায়। একদিকে মামলা ও অন্যদিকে কোরোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে অনিশ্চিত হয়ে যায় আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের ভাগ্য। প্রার্থীদের বহু আন্দোলন, বিক্ষোভ, অবস্থানের ফলস্বরূপ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়াও অথৈ জলে পড়ে থাকা মেনে নিতে পারছেন না আপার প্রাইমারির চাকরিপ্রার্থীরা। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বেকার থাকায় ক্ষোভ জমছে । দ্রুত নিয়োগের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পেজে ক্ষোভ উগড়ে দিতে শুরু করেছেন তাঁরা। বেশ কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই হাজার হাজার আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুকে পেজে তাঁদের প্রতিটি পোস্টে মন্তব্য করছেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁদের ফেসবুকে জানানো দাবির জবাবে একটি পোস্ট করে জানিয়েছিলেন, আপার প্রাইমারির বিষয়টি বিচারাধীন। সমাধানসূত্র থাকলেও এই মুহূর্তে তা করা সম্ভব হচ্ছে না৷ যদিও, শিক্ষামন্ত্রী জবাব দেওয়ার পরেও একই পদ্ধতিতে দাবি জানিয়ে চলেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি একটাই, দ্রুত আইনি সমস্যা মিটিয়ে আপার প্রাইমারির নিয়োগ করা হোক।
শুধু শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী নয়। আইনি সমস্যার বিষয়টি সমাধানের জন্য আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের ফেসবুক পেজেও একই পদ্ধতিতে দাবি জানিয়ে চলেছেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা। এবার সোশাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে চলা এই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা। ঘরে বসেই যৌথভাবে দাবি জানানোর পথ খুঁজে নিয়েছেন তাঁরা।
দ্রুত নিয়োগের দাবি, বাড়ি থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীদের
আগামী 29 এপ্রিল আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা বাড়ির মধ্যে, মুখে মাস্ক পরে, দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানাবেন। নিজেদের দাবি সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ঘরে বসে প্রতিবাদের সেই ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হবে। ঘরে বসে আন্দোলনের এই নতুন কর্মসূচির জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা।
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চপ্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের তরফ থেকে অতনু ঘোষ তাঁদের নতুন কর্মসূচি নিয়ে বলেন, "আগামী 29 এপ্রিল আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছি। আমরা আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা নিজের নিজের বাড়িতে বসে, মুখে মাস্ক পরে, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আমাদের দাবি জানাব। আমাদের দাবি, জরুরিভিত্তিতে হাইকোর্টের মামলার নিষ্পত্তি করে, গেজেট মেনে দ্রুত নিয়োগ করতে হবে। আমরা নিয়ম মেনে বাড়ির ভিতরে একা একা মাস্ক পরে, প্ল্যাকার্ড হাতে আমাদের দাবি জানাব। জরুরিভিত্তিতে এখন যেমন ভিডিয়ো কনফারেন্সে কেস উঠছে সেভাবেই আমাদের কেসটাও তোলা হোক, এটাই আমাদের দাবি। আমরা 29 এপ্রিল সকাল 10 টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই রকমভাবে দাবি জানাব ও সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করব সবাই।"
কর্মসূচির নির্ধারিত দিনের আগে থেকেই বহু প্রার্থী, এমনকী তাঁদের অভিভাবকরা এই পদ্ধতিতে দাবি জানিয়ে সেই ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা শুরু করে দিয়েছেন।