কলকাতা, 6 সেপ্টেম্বর: সন্দেহটা প্রথম থেকেই ছিল । খুন করেছে পরিচিত কেউ । সেই আশঙ্কাই সত্যি হল । তপসিয়ার যুবক খুনে গ্রেপ্তার করা হল তাঁর কাকা ও কাকিমাকে । তাঁরা ইতিমধ্যেই দোষ স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর ।
1 সেপ্টেম্বর ঘরের দরজা ভেঙে মাথায় আঘাত করে ওই যুবককে নৃশংসভাবে খুন করা হয় । তার আগের রাতে সাড়ে বারোটা নাগাদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় অভিজিৎ রজকের । তাঁর বাড়ি 27 নম্বর গোবরা গোরস্থান রোডে । বয়স 30 বছর । পরদিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ পরিবারের সদস্যরা ঘরের মূল দরজা ভাঙা দেখতে পান । ঘরে ঢুকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা । খবর দেওয়া হয় তপসিয়া থানায় । ঘটনাস্থানে পৌঁছায় পুলিশ ।অভিজিতের মাথায় গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল ।
ঘটনাস্থান থেকে খোয়া যায় কয়েকটি সাইকেল । তা দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, সাইকেল চোরের একটি দল এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে । কিন্তু তদন্তে সামনে আসে অন্য কিছু । গ্রেপ্তার করা হয়েছে 49 বছরের চন্দন রজক এবং 29 বছরের প্রিয়াঙ্কা রজককে । অভিজিতের বড় কাকা চন্দন । আর প্রিয়াঙ্কা ছোটো কাকা সোমনাথ রজকের স্ত্রী ।
এই প্রসঙ্গে গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা বলেন, “সাইকেল চুরির ঘটনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হলেও তদন্তে নেমে আমরা বেশ কিছু তথ্য পাই । খুনের কারণ অন্য কিছু । তার ভিত্তিতেই ওই দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।"
কেন এই খুন ? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে নেমে তারা জানতে পারে অভিজিতের মানসিক সমস্যা ছিল । কিন্তু কে খুন করেছে তা প্রথমে বোঝা যাচ্ছিল না । কারণ প্রতিবেশীরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, অভিজিতের কোনও শত্রু থাকার কথা নয় । কিন্তু, পুলিশ বুঝতে পারে সাইকেল চুরির ঘটনাটি সাজানো । তদন্তকারীদের বোকা বানাতে সাইকেল চুরির বিষয়টিকে সামনে রাখা হয়েছে । এই খুনের পিছনে গভীর কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আন্দাজ করে পুলিশ । কেন ষড়যন্ত্র ? এই খুনের পিছনে দু'টি কারণ উঠে আসে । তদন্তকারীরা জানতে পারে, অভিজিতের চরিত্র ভালো ছিল না । একাধিক যুবতির সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে । একবার তাকে এর জন্য মারধরও করা হয় । কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি । কখনও বড় কাকিমা আবার কখনও ছোটো কাকিমার দিকে নানা অশালীন ইঙ্গিত করত বলে অভিযোগ । যা নিয়ে পরিবারে অশান্তি হয়েছে বিস্তর । অভিযোগ, অভিজিতের বাবা-মা বিষয়টিকে তেমনভাবে গুরুত্ব দিত না । তাঁদের বলা হলে অভিজিতের মানসিক সমস্যার কথা বলে এড়িয়ে যেতেন ।
এছাড়া আরও একটি কারণও সামনে এসেছে । অভিজিতদের বাড়ি প্রোমোটিংয়ের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে পরিবারের মধ্যে অশান্তি লেগেছিল । তার বাবা প্রোমোটারের কাছে দাবি করে যে অভিজিতের জন্য একটি আলাদা ফ্ল্যাট লাগবে । সেটা নিয়ে চূড়ান্ত দর কষাকষি চলছিল প্রোমোটারের সঙ্গে । আর তা পছন্দ হয়নি কাকা-কাকিমাদের । এরপরই খুনের ছক করা হয় । প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ঘটনার রাতে দরজা ভাঙা, প্রমাণ লোপাট এই কাজগুলি করেছে তার কাকিমা প্রিয়াঙ্কা । ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করেছে চন্দন । তবে তদন্তকারীদের সন্দেহ, এই খুনের পিছনে জড়িয়ে আছে আরও দু'জন । আরও এক কাকা এবং কাকিমা রয়েছেন সন্দেহের তালিকায় । ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ।