পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

ETV ভারতের সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ করতেই মামলা, পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের

পরপর তিনটি মামলা দায়ের করা হয় ETV ভারতের সাংবাদিক অভিষেক দত্ত রায়ের বিরুদ্ধে ৷ এরপরই হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন ওই সাংবাদিক । সেই আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, কণ্ঠরোধ করতেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ৷

ETV ভারতের সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ করতেই মামলা
ETV ভারতের সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ করতেই মামলা

By

Published : Aug 3, 2020, 5:45 PM IST

Updated : Aug 5, 2020, 1:27 AM IST

খবর 1

2020 সালের জুন মাস ৷ বোলপুর বাইপাস মোড়ে পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির ৷ সবজি কিনতে গিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় তাঁকে ধাক্কা মারে গাড়িটি ৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, বালির গাড়ি থেকে টাকা তুলতে গিয়ে গাড়িটি বেপরোয়াভাবে চলছিল । তখনই তা শেখ শফিকুলকে ধাক্কা মারে ৷ গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করা হয় ৷ পরে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শফিকুলকে ধাক্কা মারার পরও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি পুলিশ ৷ উলটে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় ৷

ঘটনার প্রতিবাদে বালির গাড়ি আটকানো হয় ৷ খবর পেয়ে কয়েক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থানে যায় বোলপুর থানার পুলিশ ৷ বিষয়টির প্রতিক্রিয়া জানতে বোলপুর থানার SDPO অভিষেক রায়কে ফোন করলে তিনি তা ধরেননি ৷

এই সংক্রান্ত খবর : বোলপুরে পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মৃত 1

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ : 2 জুন বোলপুর থানায় সাংবাদিক অভিষেক দত্ত রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷

কেস নম্বর- 134

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ : হাইকোর্টে সাংবাদিকের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবীজয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও নাজির আহমেদ।সব তথ্য যত্ন সহকারে খতিয়ে দেখে বিচারপতি বিবেক চৌধুরি ও বিচারপতি সৌমেন সেনের বক্তব্য, তাঁরা উভয়পক্ষেরই সওয়াল-জবাব শুনেছেন ৷ তাঁদের পর্যবেক্ষণ, "যে কোনও ধরনের খবর প্রকাশ করা একজন সাংবাদিকের মৌলিক অধিকার ৷ সেটি প্রশাসনের কাছে স্বস্তিদায়ক নাও হতে পারে ৷ প্রায়ই যে পুলিশকে বিভিন্ন গাড়ি থেকে ঘুষ নিতে দেখা যায় তা অস্বীকার করা যায় না ৷ আমাদের মনে হচ্ছে কণ্ঠরোধ করতেই এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷"

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

হাইকোর্টের তরফে আরও বলা হয় যে, সরকারি আইনজীবী এই মামলায় যে কেস ডায়েরি জমা দিয়েছিলেন তা দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, যে আধিকারিকরা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাঁরা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তা পুলিশ মেনে নিয়েছে ৷

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

ETV ভারতের সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে FIR দায়ের করা হয়েছিল সেই বিষয়ে দ্রুত তদন্ত শুরুর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন বিচারপতিরা ৷ পাশাপাশি সাংবাদিকের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পুলিশ আধিকারিকরা যে টাকা নিয়েছেন সেই বিষয়েও তদন্ত করার এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন ৷ পরে সাংবাদিকের আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট ৷

খবর 2

2020-র মে মাস ৷ লকডাউনের মাঝেই অজয় নদ থেকে বেআইনিভাবে বালি তোলার অভিযোগ ওঠে ৷ JCB দিয়ে কোনও অনুমতি ছাড়াই বালি তোলা হয় বলে জানা যায় ৷ তারপর তা তোলা হয় ট্রাকে । এই সব বালি ভরতি (ওভারলোডেড) ট্রাক রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করতে থাকে ৷ নদীগর্ভ থেকে মেশিন দিয়ে বালি তোলায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কীভাবে তা তোলা হচ্ছে ৷ এই বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ৷ এই প্রসঙ্গে বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর সঙ্গে ETV ভারতের সাংবাদিক অভিষেক দত্ত রায় যোগাযোগ করলে তিনি জানান, "বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি ৷ গাফিলতি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷"

এই সংক্রান্ত খবর : লকডাউনেও বীরভূমে বেআইনি বালির কারবারের অভিযোগ স্থানীয়দের

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ : এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই সাংবাদিক অভিষেক দত্ত রায়ের বিরুদ্ধে ইলামবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷

কেস নম্বর- 72

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ : বিচারপতি বিবেক চৌধুরি ও বিচারপতি সৌমেন সেনের পর্যবেক্ষণ, আবেদনকারী অর্থাৎ সাংবাদিককে ভারতীয় দণ্ডবিধির 41এ ধারার ​​অধীনে কোনও নোটিস পাঠানো হয়নি ৷ তাঁদের পর্যবেক্ষণ, "একজন সাংবাদিকের কাজই হল সৎ পথে যেকোনও বেআইনি কার্যকলাপের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা ৷ এমনকী এই ধরনের ঘটনায় একটি যথাযথ খবর প্রশাসনকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে সাহায্য করে ৷ এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে প্রকাশিত খবর সত্য না মিথ্যা তা যাচাইয়ে না গিয়ে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ও অভিযোগে যে অপরাধের কথা জানানো হয়েছে তা পর্যালোচনা করে আমাদের মনে হয়, আবেদনকারী সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেপাজতে নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই ৷"

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

সঙ্গে তাঁদের পর্যবেক্ষণ, "প্রকাশিত খবর যদি সত্যি হয় তাহলে আইন অনুযায়ী ভারতীয় দণ্ডবিধির 41এ ধারায় অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেই নোটিস পাঠানো উচিত ছিল ৷ আমফান ও কোরোনা সংক্রমণের পর এই ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে ৷ পৃথিবীকে সম্মান করা উচিত ৷ একই সঙ্গে বাস্তু ও পরিবেশের সংরক্ষণ করা উচিত ৷ অন্যথায় আমাদের প্রকৃতির রোষের মুখে পড়তে হবে এবং এর ফলে আমরা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারি ৷ তাই বেআইনি খননকাজ যা প্রায়ই দেখা যায় তা রুখতে হবে ৷" তারপরই আবেদনকারী সাংবাদিকের আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হয় ৷

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

খবর 3

2019 সালের ফেব্রুয়ারি মাস ৷ জানা যায়, শান্তিনিকেতনের একটি রিসর্টে অবাধে চলছে নগ্ন ফোটোশুট ৷ সোশাল মিডিয়ায় এমন কিছু ছবিও ভাইরাল হয় ৷ এই খবর প্রকাশ্যে আসতে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয়রাও ৷ পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসন রিসর্টটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় ৷ তবে রিসর্ট কর্তৃপক্ষের তরফে ঘটনার কথা অস্বীকার করা হয় ৷

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ : এরপরই ETV ভারতের সাংবাদিক অভিষেক দত্ত রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷

কেস নম্বর- 18

অভিযোগের ভিত্তিতে অভিষেক দত্ত রায়কে 41এ ধারা অনুযায়ী থানায় ডেকে পাঠানো হয় ৷ সেখানে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেই আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেন তিনি ৷

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ : বিচারপতি বিবেক চৌধুরি ও বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, আবেদনকারী অভিষেক দত্ত রায় এই খবর প্রকাশ করে কোনও অপরাধমূলক কাজ করেনি ৷ তাই তাঁর আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হচ্ছে ৷

Last Updated : Aug 5, 2020, 1:27 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details