কলকাতা, 23 অগস্ট : যেভাবে সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের (Anil Biswas) মেয়ে অজন্তা বিশ্বাসকে (Ajanta Biswas) নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে, তাতে ক্ষুব্ধ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ ইতিহাসের একজন অধ্যাপিকা হিসাবে অজন্তা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগোবাংলা’য় কলম ধরেছিলেন ৷ আর তাতেই তাঁর উপর শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছে ৷ শোকজ থেকে সাসপেনশন, অজন্তার বিরুদ্ধে সবরকম পদক্ষেপই করেছে সিপিএম নেতৃত্ব ৷ এই অবস্থায় প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের মেয়ের পাশে দাঁড়াল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ দলীয় মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে অনিল-কন্যার শাস্তি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিল রাজ্যের শাসকদল ৷
আরও পড়ুন :Ajanta Biswas : জাগোবাংলায় মমতা স্তুতির জের, আলিমুদ্দিনের শো-কজের মুখে অজন্তা
সোমবার তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগোবাংলা’র সম্পাদকীয়তে সিপিএমের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কী লেখা হয়েছে ? সেখানে লেখা হয়েছে, জাগো বাংলায় লিখেছিলেন অজন্তা বিশ্বাস ৷ প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের কন্যা ৷ মেধাবী ছাত্রী ৷ ইতিহাসের কৃতী অধ্যাপিকা ৷ লেখার বিষয়, বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি ৷ ইতিহাসভিত্তিক লেখা, রাজনৈতিক লেখা নয় ৷ উল্লেখ আছে স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্রোতের সংগ্রামী নেত্রীদের ৷ রয়েছে বহু বামপন্থী নেত্রীর কথাও ৷ বিষয়বস্তুর পথ ধরে অবধারিতভাবেই এসে পড়েছে আজকের বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নাম ৷ কারণ, তাঁকে বাদ দিয়ে কোনও লেখক-লেখিকার পক্ষে এই বিষয়ে লেখা অসম্ভব ৷ লেখা যায় না ৷ অতঃপর সিপিএমের একাংশের রোষ প্রবল ৷ অজন্তাকে শাস্তি দিতে হবে ৷ কোন অজন্তা ? অনিল বিশ্বাসের কন্যা ৷ যিনি না থাকলে গণশক্তি চলত না ৷ যিনি না থাকলে 2001-এ দল ফিরত না সরকারে ৷ যিনি না বোঝালে জ্যোতি বসুকে কেউ অবসর নেওয়াতে পারতেন না ৷ যিনি না থাকলে সুভাষ চক্রবর্তী আগেই পার্টি ছাড়তেন ৷ যাঁর অকাল প্রয়াণের সহানুভূতি-হাওয়ায় সিপিএম 2006-এ আবার জিতেছিল ৷
তৃণমূল কংগ্রেস তাদের মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে দাবি করেছে, ইতিহাসের অধ্যাপিকা হিসাবে একটি নিরপেক্ষ লেখা প্রকাশ করেছে তারা ৷ কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন, ‘জাগোবাংলা’ যদি লেখকের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়ে একটিও শব্দ বাদ না দিয়ে বামপন্থী নেত্রীদের নাম ছাপতে পারে, তা হলে আজও সিপিএম কেন এত সংকীর্ণ ? ছ’মাস শাস্তির নাম করে অজন্তা বিশ্বাসকে কেন এই অপমান ? এখানেই শেষ নয় ৷ ‘জাগোবাংলা’র সম্পাদকীয়তে অজন্তা ইস্য়ুতে সিপিএমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে ৷ সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন পার্টি তাঁর (অজন্তার) সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গণশক্তিতে লেখা চায়নি ? একসময়ে অনিল বিশ্বাসের কৃপায় শিক্ষা পেশায় উপকৃত দলদাসেরা কেন আজ অনিল-কন্যাকে কোণঠাসা করতে মরিয়া ?
আরও পড়ুন :অজন্তার শাস্তি নিয়ে মতান্তর, সিদ্ধান্তের ভার সিপিএমের রাজ্য কমিটিকে
তৃণমূলের কটাক্ষ, সিপিএমের অপরিচিত, অপ্রাসঙ্গিক কিছু নেতা, যাঁরা দলটিকে বিধানসভা, লোকসভায় শূন্যে নামিয়ে এনেছেন, সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রচারে আনতে চাইছেন ৷ তাঁরা দলকে একটিও আসন দিতে পারেন না ৷ কংগ্রেস নামক আর একটি বিতর্কিত শক্তির পা ধরে ভোটে লড়তে হয়, তাঁদের আবার অনুশাসন ! তৃণমূলের সাফ কথা, একুশের নির্বাচনে তাদের ভোট কাটার জন্যই কার্যত বিজেপির ‘বি-টিম’ হয়ে কাজ করেছেন এই সিপিএম নেতারা ৷ ‘বিজমূল’ তত্ত্ব খাড়া করতে চেয়েছেন ৷ কিন্তু জনগণ সেই তত্ত্ব ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ৷ যাঁরা ভাইজান-সেলিমভাই জুটি তুলে ধরে পার্টিতে ধিক্কৃত হলেন, তাঁদের শাস্তি নেই ৷ অপসারণ নেই ৷ শাস্তি শুধু অজন্তার !
প্রসঙ্গত রবিবার রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানে সিপিএমের এই শাস্তি নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷ পার্থ সিপিএমের এই পদক্ষেপকে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছিলেন ৷ এবার সেই একই ইস্যুতে ‘জাগোবাংলা’র সম্পাদকীয়তেও সিপিএমের কড়া সমালোচনা করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল রাজ্যের শাসকদল ৷