কলকাতা, 28 ডিসেম্বর : কোভিড 19 মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে লাফিয়ে বাড়ছে টিবি আক্রান্তের সংখ্যা । পাল্লা দিয়ে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে । এই পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে যাদবপুরে অবস্থিত কে এস রায় টিবি হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলল সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম । এই সংগঠনের আশঙ্কা, এই হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার ফলে টিবি রোগী এবং এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে । টিবি রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রাও প্রহসনে পরিণত হবে ।
সরকারি চিকিৎসকদের এই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে যেভাবে কলকাতার এই টিবি হাসপাতালকে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তার নিন্দায় কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয় । বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ চিকিৎসক কুমুদ শংকর রায় তাঁর সর্বস্ব দিয়ে দুঃস্থ মানুষের জন্য এই হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন । এই হাসপাতালের বেশির ভাগ জমি এর আগে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে এক কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল । অন্যদিকে, সরকারি উদাসীনতায় টিবি হাসপাতাল ধুঁকছিলই । এবার রাজ্য সরকার হাসপাতালটি বন্ধ করে দিচ্ছে ।
সরকারি চিকিৎসকদের এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "কোভিড 19 মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে টিবি রোগের উপর নজরদারি 64 শতাংশ কমে গিয়েছে । এর ফলে টিবি রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে । এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীর সংখ্যা । বর্তমানে প্রতি পাঁচজন টিবি রোগীর মধ্যে অন্তত পক্ষে একজন ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগী । এই রোগীদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা মানে রোগ আরও ছড়িয়ে পড়া । এই ধরনের রোগীদের সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই ধরনের রোগীদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা প্রয়োজন ।"
আরও পড়ুন: চিকিৎসক ধর্মঘটে পরিষেবা স্বাভাবিক মালদার সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে
বর্তমানে গোটা বিশ্বে সব থেকে বেশি টিবি রোগী রয়েছে ভারতে । আর, এ রাজ্যেও প্রতি এক লাখ মানুষ পিছু রয়েছেন প্রায় এক হাজার সক্রিয় টিবি রোগী । ফলে, ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীর সংখ্যাও কম নয় । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "যাদবপুরের কে এস রায় টিবি হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এই সব ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীকে ভরতি রেখে সুস্থ করে তোলার জন্য বাস্তবে কোনও হাসপাতাল থাকছে না । এর ফলে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীর সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বাড়তে বাধ্য । বর্তমানে প্রতি দেড় মিনিটে একজন টিবি রোগীর মৃত্যু হয় । এই সংখ্যাটাও বাড়তে বাধ্য । এর ফলে 2025-এর মধ্যে টিবি রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা সোনার পাথরবাটির মতো প্রহসনে পরিণত হবে ।"