কলকাতা, 25 জুন : পিএসি অর্থাৎ, বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্ট কমিটি এবং দলত্যাগ প্রসঙ্গে রাজ্যের শাসক দলকে একহাত নিলেন প্রাক্তন বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী । তাঁর মতে, পিএসি সহ বিভিন্ন বিষয়ে সংবিধানে ব্যবস্থা রয়েছে ৷ সেখানে বিরোধী দলের ভূমিকার কথাও রয়েছে । বিধানসভার সদস্য পদ রাখা এবং খারিজের পদ্ধতি কী হবে তা বলা রয়েছে ৷ এইক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট বিধানসভার সদস্যটি তাঁর দলের মত অনুযায়ী চলছেন । এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে গত দশ বছর বা সাম্প্রতিক অতীতে দলত্যাগীদের নিয়ে মোট ছাব্বিশবার আবেদন করেও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী । প্রাক্তন বাম বিধায়কের অভিযোগ বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে দলত্যাগীদের সদস্যপদ খারিজের আবেদন নিষ্ফলা হয়ে পড়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি ।
সুজন চক্রবর্তীর কথায়, আদতে এই দলত্যাগ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি এক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে এবং দ্বিচারিতা করছে ৷ কারণ দিল্লি হোক বা এই রাজ্য, দলত্যাগীদের সদস্যপদ খারিজ নিয়ে যে নিয়ম আছে, তা মানার বদলে ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন অবস্থান দুই দলের । এই বিষয়ের সমাধানে প্রথমে অধ্যক্ষের দ্বারস্থ হতে হবে ৷ তা না হলে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে ৷
পিএসি নিয়ে মুকুল রায়ের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর এই পাশে থাকাকেও কটাক্ষ করেছেন প্রবীণ বাম নেতা । তাঁর মতে মুকুল রায়কে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গত কয়েকদিনের পরস্পর বিরোধী মন্তব্য বিভ্রান্তিকর । তাঁর দ্রুত অবস্থান বদলে রাজ্যের মানুষের সমস্যা হয় । এখন দেখতে হবে এই দুই রকমের মন্তব্য মিথ্যাচার না ওনার স্বাভাবিক অভ্যাস ৷
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শাসকদল এবং রাজ্যপাল পরস্পরের যুযুধান পক্ষ । অথচ রাজ্যপাল এবং অধ্যক্ষের পদ দু’টি সাংবিধানিক । এই দু’টি পদের সম্মানরক্ষায় যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন সুজন চক্রবর্তী ৷ অবস্থা এখন চরমে । সম্প্রতি রাজ্যপাল বিধানসভার কাজে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসার ইঙ্গিত মিলেছে । সুজনের মতে রাজ্যপালের যেমন কোনও দলের কর্মীর মত আচরণ শোভা পায় না ৷ তেমনই অধ্যক্ষের বিধানসভা পরিচালনায় নিরপেক্ষতা জরুরি । দু’টি সাংবিধানিক পদের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে ৷ তা না করে তালগোল পাকিয়ে দিয়ে মানুষের অপকার করা হচ্ছে বলে মত তাঁর ৷
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির অধঃপতনের কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের আট দফায় বিধানসভা নির্বাচন আয়োজনকে একাধিকবার কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূল ৷ এ বিষয়ে বামফ্রন্টের অতীতের অবস্থান এবং তৃণমূলের অতীতের দাবির কথা মনে করিয়েছেন এই সিপিআইএম নেতা ৷ মুখ্যমন্ত্রী উপনির্বাচন দ্রুত আয়োজন করার কথা বলছেন । অথচ একাধিক পৌরসভার নির্বাচন আয়োজন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগহীনতায় বিস্মিত তিনি । কারণ পৌরসভা নির্বাচনের আয়োজক রাজ্য সরকার ৷ পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা এবং ট্রেন চালানো নিয়ে শাসক দলের উদাসীনতার সমালোচনা সুজনের মুখে ৷
আরও পড়ুন :Narada Case : নারদ মামলা : হাইকোর্টকে আগে মমতার আবেদন শুনতে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
ভ্যাকসিন কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের মর্যাদা ভুলন্ঠিত বলে মনে করেন সুজন চক্রবর্তী । এই বিষয়ে শাসক দল এবং প্রশাসনের প্রশয় রয়েছে বলে মনে করেন সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ ৷ উদাহরণ হিসেবে পালস পোলিয়োর ব্যবস্থাপনাকে নিয়ে এসেছেন তিনি । তাঁর অভিযোগ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোর বদলে দলতন্ত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে । ফলস্বরূপ দেবাঞ্জন দেবের মত নাম শাসক দল থেকে আরও উঠে আসবে ৷ বাংলার সর্বনাশের জন্য শাসকদলের দায় কতটা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী । নারদকাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হওয়া এবং বিফল হওয়ার মধ্যে প্রবীণ বাম নেতা কোনও বিস্ময় খুঁজে পাচ্ছেন না । কারণ আর্থিক লেনদেনের ছবি মানুষের মনে স্পষ্ট ।