কলকাতা, 8 জুন: এ বার পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে সরব হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা (Calcutta University students protest)। অফলাইন পরীক্ষা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পর সোমবার থেকে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা । মঙ্গলবারও তাঁরা তাঁদের দাবিতে অনড় ছিলেন । কলেজ স্ট্রিটের বিভিন্ন জায়গায় এই দাবিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে জমায়েত করেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা (students of Calcutta University stages protests)।
আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তাঁরা অফলাইনে পরীক্ষা দিতে এখনও প্রস্তুত নন । কারণ অফলাইনে পরীক্ষা দিতে হলে প্রস্তুতির জন্য যতটা সময়ের প্রয়োজন তা তাঁদের হাতে নেই । তাই পরীক্ষা অনলাইনেই হোক, নয়তো পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হোক (demand of delaying exam)।
পড়ুয়াদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে 'ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস' ইউনিটের কনভেনর অনীক দে বলেন, "অবিলম্বে ক্লাসরুম ভিত্তিক পঠন-পাঠন চালু করে 27 জুলাইয়ের পরে সমস্ত সেমিস্টারের পরীক্ষা নিতে হবে । বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনওরকম পুলিশি হস্তক্ষেপ করা চলবে না । শাসক দলের মদতপুষ্ট বিশৃঙ্খলাকারীদের অজুহাত দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করার চক্রান্ত বাতিল করতে হবে । ছাত্রছাত্রীদের উপর আক্রমণকারী পুলিশদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে করতে হবে । আজ আমরা এই বিষয়গুলি জানিয়ে বিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্য শিক্ষাকে ডেপুটেশন দিয়েছি ।"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আন্দোলনরত ছাত্রনেতা রাজা মেহেদী বলেন, "সাধারণ পড়ুয়ারা কোনও অনৈতিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে না । তারা অফলাইন পরীক্ষা দিতে রাজি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব ক্লাস শেষ না হওয়া সত্বেও যে ভাবে জোর করে তাদের উপর পরীক্ষা চাপিয়ে দিচ্ছেন, আমি নিজে একজন ছাত্র হিসেবে ভাবছি তা অনৈতিক ও জোরপূর্বক সিদ্ধান্ত । বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে উচিত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা এবং তাদের যে নৈতিক বক্তব্য তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া । উপযুক্ত ভাবে সঠিক পদ্ধতিতে সিলেবাস সম্পূর্ণ করে অফলাইন পরীক্ষা নিলে এবং তাদেরকে পড়াশোনার একটু সময় দিলে আমার মনে হয় আর কোনও সমস্যা থাকবে না । ছাত্রছাত্রীদের জন্যই সবকিছু । তাই তাদের সুবিধা অসুবিধা দেখা কর্তৃপক্ষের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি ।"
প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলে আবারও যখন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলে যায়, তখন ক্লাস চলে অফলাইনেই । তবে অফলাইনে পঠনপাঠন হলেও পরীক্ষা নেওয়া হোক অনলাইনে । এমনটাই দাবি জানিয়েছিল বেশকিছু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা । ঠিক একইভাবে এই দাবিতে সরব হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ । এই বিষয়ে আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল যে, যেহেতু করোনা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক এবং কলেজে পঠনপাঠনও হয়েছে অফলাইনে, তাই পরীক্ষাও নেওয়া হবে অফলাইনে । তবুও কোন মাধ্যমে হবে পরীক্ষা তা চূড়ান্ত করতে 3 জুন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্যরা বৈঠকে বসেন । তাতেই সর্বসম্মত ভাবে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত উঠে আসে ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় যে, ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলগুলিও পরীক্ষা অফলাইনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন । এমনকী আন্ডারগ্রাজুয়েট বোর্ডস অফ স্টাডিজ-সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থাকা কলেজগুলির প্রিন্সিপালরাও অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন । কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত যে কলেজগুলি রয়েছে, সেখানে যদি এখনও পর্যন্ত সিলেবাস শেষ করা না হয়ে থাকে, তবে স্পেশাল ক্লাস নিয়ে সেই সিলেবাস শেষ করা হোক ৷ যাতে পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা না হয় ।