কলকাতা, 21 মে :নেট দুনিয়ার মিম বাজারে আবারও হটকেক শোভন-বৈশাখী পালা ৷ ফাউ রত্নার রোষ ৷ ভাবছেন তো ? এ আবার কেমন ধারা কথা বাপু ! কীসের পালা ? কার রোষ ? আসলে ঘটনাক্রম যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে ‘পালা’, ‘রোষ’-এর মতো শব্দগুলোই যাচ্ছে ভালো ৷
আজ থেকে অন্তত দশক পাঁচেক পিছিয়ে যান ৷ সেই সময় যাত্রাপালাই ছিল বাংলার মনোরঞ্জনের অন্যতম মাধ্যম ৷ রংচঙে পোশাক, উঁচু গলায় ডায়লগ ডেলিভারি আর চড়া দাগের অভিনয় ৷ দর্শক টানতে এগুলোই ছিল ইউএসপি ৷ প্রথম দিকে মূলত পৌরাণিক বিভিন্ন কাহিনি যাত্রাপালায় অভিনীত হলেও পরে তার রূপ বদলাতে শুরু করে ৷ পুরাণের দখল নেয় সমাজ ৷ সম্পর্কের টানাপোড়েনে বদলে যায় অভিনয়ের ফর্মুলাও ৷ এমনকি, ইদানিংকালেও গাঁ-গঞ্জে যেসব যাত্রাপালার আসর বসে, সেখানেও রমরমিয়ে চলে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের রগরগে কাটাছেঁড়া ৷
বাংলার মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে এইসব যাত্রা-প্লটের আপাত কোনও সম্পর্ক না থাকলেও বর্তমানে সেই রসায়নেও বদল এসেছে ৷ যার ক্রেডিট লাইন শোভন-বৈশাখীকে দিলে খুব একটা ভুল হবে না হয়তো ৷
শোভন চট্টোপাধ্য়ায় বঙ্গ রাজনীতির উল্লেখযোগ্য নামগুলির মধ্যে অন্যতম ৷ জননেতা, দক্ষ সংগঠক থেকে বিধায়ক, মন্ত্রী কিংবা কলকাতার মেয়র ৷ সবক’টি দায়িত্বেই সফল শোভন ৷ পাশাপাশি, একটা সময় পর্যন্ত ‘ফ্য়ামিলি ম্যান’ হিসাবেও তাঁর সুনাম বড় কম ছিল না ৷ স্ত্রী রত্না ও দুই সন্তানের সঙ্গে সোনার সংসার ছিল তাঁর ৷ সুখের এই চিত্রনাট্যে তাল কাটে বৈশাখীর আগমন ৷
পেশায় অধ্যাপক বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায় টলিয়ে দেন শোভন-জায়ার আসন ৷ জেঁকে বসেন শোভনের অন্দরে এবং অন্তরে ৷ প্রথমে ফিসফাস, পরে হইচই ৷ শোভন-রত্না-বৈশাখীর ত্রিকোণ নজর কাড়ে তামাম বাঙালির ৷ কার্যত বৈশাখীর জন্যই ঘর, সংসার, কেরিয়ার ভোলেন শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ৷ আর ঠিক তখন থেকেই নতুন রসদ হাতে পেয়ে যান মিম-স্রষ্টারা ৷ কখনও কোনও যাত্রাপালার নাম নকল করে আবার কখনও বা আনকোরা নাম আবিষ্কার করে কার্যত যাত্রাপালার পোস্টারের ঢঙেই মিমের বন্য়া বয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ৷ ‘কলতলার ঝগড়া’, ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য’- এমনই কত কী !
চলচ্চিত্রের নাম ধার করে তৈরি মিম ৷
এই ধারায় কিছুটা হলেও ভাটা এসেছিল গত কয়েক দিনে ৷ একুশের ভোট পর্বে শোভন-বৈশাখী এফেক্ট কিছুটা নতুন ভাবে ধরা দিলেও তা নিয়ে আগের মতো হুল্লোড় হয়নি ৷ হয়নি, তার কারণ, একুশের ভোট পর্বে কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এই জুটি ৷ ফর্মে ফেরে নারদ কাণ্ডে সিবিআইয়ের হঠাৎ সক্রিয়তার পর ৷ গত সোমবার এই ঘটনায় শোভন-সহ চার হেভিওয়েটকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ আর সেই রাতেই আবারও বৈশাখী ঝড় ওঠে ভার্চুয়াল জগতে ৷
দিনভর নাটকের পর অন্তর্বর্তী জামিনে স্থগিতাদেশ জারি হওয়ায় জেলে যেতে শোভন-সহ চার অভিযুক্তকেই ৷ এদিকে, শোভনের গ্রেফতারির খবর কানে যেতে ময়দানে হাজির হন তাঁর স্ত্রী রত্না ৷ দেন পাশে থাকার আশ্বাস ৷ একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল, স্বামীর কাছে আর ঘেঁষতে দেবেন না শত্তুরকে (বৈশাখীকে) ৷ যদিও রত্নার হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দিতে নারাজ বৈশাখী ৷ সোমবার রাতেই জেলের বাইরে ফটক ধরে হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু করে দেন তিনি ৷ জানান, তাঁর কাছেই রয়েছে শোভনের ওষুধ ৷ যা না খেলে তিনি নাকি প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়বেন ৷ এই ভিডিও ভাইরাল হতেই নতুন মিমে ছেয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমের দেওয়াল ৷ প্রশ্ন ওঠে কী এমন সেই ওষুধ ? যা কিনা না শোভনের না খেলেই নয় ! বিখ্যাত একটি বাংলা ছবির পোস্টার ধার করেও নতুন চিত্রনাট্যের হদিশ দেন কেউ কেউ ৷
মিম-স্রষ্টার টার্গেটে শোভনের রাতের ওষুধ !
আরও পড়ুন :বৈশাখী হাওয়ায় মন ভাসিয়েই কি বেকায়দায় শোভন ?
এই ধরনের মিম কতটা শোভন বা অশোভন, সেটা তো চর্চার বিষয় ৷ তবে করোনার দাপটেও যে বিকেলের কালবৈশাখী বাঙালি আজও উপভোগ করে, তাকে সৃষ্টিশীলতায় ভরিয়ে দেয়, তা এই ভরা জৈষ্ঠ্যেও বেশ স্পষ্ট ৷